মুখোশ

  দরজায় বার বার শব্দ হচ্ছে। জামান সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দরজায় তার একমাত্র কন্যা নাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে। কিরে মা এত সকালে? কিছু বলবি? বাবা, আমাকে দু হাজার টাকা দাও। আমরা কয়েক বন্ধু মিলে আজ খেতে যাবো। জামান সাহেব টাকা দিয়ে বললেন গাড়ি নিয়ে যেও। ড্রাইভার নিচতলায় আছে। বাবা, গাড়ির দরকার নেই। রিকসা নিয়ে চলে যাবো। সাবধানে যাস মা। রবিন নাদিয়ার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করবে। তারা একই ক্লাসে পড়ে। দু মাস পর এম এ ফাইনাল দিবে। নাদিয়া খুব পরিপাটি হয়ে বাসা থেকে রওনা দিলো। পথে রবিন তার সাথে যুক্ত হল।নাদিয়া রবিনকে খুব বিশ্বাস করে। নাদিয়া মনে মনে খুব ভালোবাসে রবিনকে। পরীক্ষা শেষ হলে সে তার বাবার সাথে রবিনকে পরিচয় করিয়ে দিবে।

সারাদিনের আড্ডা শেষে সন্ধ্যায় সে বাড়ি ফিরলো। রাতের খাবারের টেবিলে বাবার সাথে খেতে বসলো। জামান সাহেব বললেন, মা নাদিয়া তোর জন্য ভাল একটি খবর আছে। একটি ভাল পাত্রের সন্ধান পেয়েছি তোর জন্য। পাত্র বড় সরকারি কর্মকর্তা। অভিজাত পরিবারের সন্তান। দেখতেও বেশ। নাদিয়া একটু মুখ গম্ভীর করে বললো, বাবা রবিনের কথা তোমাকে আমি আগেই বলেছি। গ্রামের ছেলে। কিন্তু খুব  উচুঁ পরিবারে জন্ম। ভদ্র, মার্জিত আর স্মার্ট। আমাদের কথা হয়েছে দুজনের। আমরা বিয়ে করবো। জামান সাহেব কিছুটা বিরক্ত হলেন। মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বললেন, মা যা কিছু করিস না কেন, খোঁজ খবর না নিয়ে পা ফেলিস না। নাদিয়া বলে, বাবা সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। রবিন ও নাদিয়ার বন্ধন দিনে দিনে গভীর হতে লাগলো। বয়সের তাড়নার কাছে দুজনে পরাজিত হল। হঠাৎ করেই এমন একটি সম্পর্কে জড়ালো তারা।সিয়াম নাদিয়ার সহপাটি। খুব সহজ সরল। নাদিয়া সিয়ামকে  রবিন ও তার সম্পর্কের কথা জানালো। ঘটনাক্রমে সিয়ামের সাথে নাদিয়ার বাবার সাক্ষাত হল।

জামান সাহেব সিয়ামকে গোপনে রবিন সম্পর্কে খোঁজ নিতে বললো। সিয়াম দেরি না করে রবিনের গ্রামের বাড়িতে গেল। সে যে খবর পেল তাতে সে নির্বাক হয়ে গেলো। খুব দরিদ্র পরিবারে সন্তান সে। শুধু তাই নয়। বছর দুয়েক আগে সে গ্রামের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে।

সিয়াম জামান সাহেবকে সব জানালো। জামান সাহেব নাদিয়াকে জানালে সে ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিলো। জামান সাহেব নাদিয়াকে নিয়ে রবিনের গ্রামের বাড়ি গেলো। সব প্রমান পেয়ে বাকরুদ্ধ হল নাদিয়া। কারণ তার গর্ভে রবিনের সন্তান। নিজেকে সে কি বুঝ দিবে? বাবার কাছে কি করে বলবে সব। সমাজের কাছে কি করে মুখ দেখাবে? এই সন্তান কি তার সরল বিশ্বাস আর ভুলের মাশুল? কি করে বুঝাবে তার কষ্টের কথা। আত্নহত্যার কথা ভেবেও কোন সমাধান পেল না। শুধু অঝোরে কাঁদতে লাগলো।

জামান সাহেব মাথায় হাত রেখে বললো, মা আমিতো এখনো বেঁচে আছি। ভুল থেকেই তো মানুষ শিখে।