রোকেয়া দিবস আজ। ভারতীয় উপমহাদেশের নারী জাগরণের পথিকৃত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্ম ও প্রয়াণ দিবস আজ ৯ ডিসেম্বর। রংপুরের পায়রাবন্দের খোর্দমুরাদপুর গ্রামে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বেগম রোকেয়া। নারী জাগরণের এই পথিকৃত ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় মারা গেলে তাকে সোদপুরে সমাহিত করা হয়। বেগম রোকেয়ার স্মৃতি সংরক্ষণে দীর্ঘ দুই যুগ আগে ১৯৯৭ সালে রোকেয়ার জন্মভিটায় স্মৃতিকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও আজো তা পূর্ণতা পায়নি।
অন্য বছরগুলোতে তিন দিনব্যাপী বেগম ‘রোকেয়া দিবস’ পালিত হলেও এবার করোনার কারণে কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। শুধু অনলাইনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী।জানা যায়, ১৯৯৭ সালে রোকেয়ার জন্মভিটায় স্মৃতিকেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। কিন্তু যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে স্মৃতিকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয় এর সঠিক তদারকি ও অর্থাভাবে তা অনেকটাই উপেক্ষিত। গ্রন্থাগার থাকলেও সেখানে যুগোপযোগী বই ও সাময়িকী নেই। মিলনায়তনের অবস্থাও করুণ। নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যন্ত্রপাতি থাকলেও কার্যক্রম না থাকায় ধুলো-ময়লা জমে তা নষ্ট হওয়ার পথে। নিয়মিত তদারকির অভাবে প্রায় সময় স্মৃতিকেন্দ্রটি থাকে অন্ধকারে। চলতি বছর ২৯ জুন স্মৃতিকেন্দ্রটির মাত্র দুই জন কর্মকর্তাকে রাজস্ব খাতে নেওয়া হয়। এখন সেখানে শুধু লাইব্রেরিটি চালু থাকলেও করোনার কারণে তাও বন্ধ।
এদিকে তার পরিবারের সদস্যদের নানা আক্ষেপ ও কষ্টের কথাও শোনা গেছে। রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের অদূরে বেগম রোকেয়ার ছোট ভাই মছিহুজ্জামান সাবেরের মেয়ে রনজিনা সাবেরের (৬৫) বাড়ি। আক্ষেপ নিয়ে রনজিনা সাবের বলেন, ‘ডিসেম্বর এলেই বেগম রোকেয়াকে নিয়ে নানা আয়োজন শুরু হয়। বেগম রোকেয়ার দেহাবশেষ কলকাতার সোদপুর থেকে তার জন্মস্থান রংপুরের পায়রাবন্দে এনে সমাহিত করলে নতুন প্রজন্মের কাছে বেঁচে থাকবেন।’
বেগম রোকেয়ার পিতার নাম জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের। মা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। ১৮৯৮ সালে ১৬ বছর বয়সে ভাগলপুর নিবাসী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ২৮ বছর বয়সে স্বামী হারান তিনি। ১৯১০ সালের শেষ দিকে তিনি কলকাতায় যান। তার লেখা অবরোধবাসিনী, সুলতানার স্বপ্ন, অর্ধাঙ্গী, মতিচুর ছাড়াও অসংখ্য বই লিখে তিনি সারা বিশ্বে সমাদৃত হন।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও রোকেয়া গবেষক রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘যে স্বপ্ন নিয়ে এই স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল এতদিনেও তা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। প্রতিষ্ঠানটি তৈরির পর থেকে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। তার ওপর আছে কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী না হওয়া।
বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে এটা ঠিক। এজন্য সার্বিক সংস্কার করতে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দুই জন কর্মকর্তাকে রাজস্ব খাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মচারীরা এখনো মাস্টার রোলে আছেন। তাদের রাজস্বখাতে নেওয়া জরুরি।’