নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দিয়াড়-রহিমানপুর ঘাটে প্রতিদিন রশি টেনে নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বড়াল নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মানের অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নদী দু’পাড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকার প্রায় দশ হাজার মানুষ। এলাকাটিতে শিক্ষার আলো অনেক আগেই পৌঁছে গেছে কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরোলেও নির্মাণ করা হয়নি ব্রিজটি। ফলে এলাকার উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করণ নিয়ে কৃষকদের পাশাপাশি নদী পারাপার নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পড়ছেন নানা বিপাকে। বিগত স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিকট একাধিকার দাবিও তুলেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু তাতেও কোন ফল হয়নি। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, একাধিকবার ব্রিজটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর থেকে মাপজোক করা হলেও কোন কাজ হয়নি। স্থানীয়রা জানান, নদী পারাপারের জন্য এর আগে বাঁশের আড় ছিল। কিন্তু বর্তমানে রয়েছে খেয়া নৌকা। তবে সেই নৌকায় এখন তেমন আর মাঝি থাকেন না। কখনও মাঝির স্ত্রী পারাপার করেন, আবার কখনও কখনও যাত্রীরা নিজেরাই নৌকা নিয়ে পারাপার হন। এই আনা-নেয়ার জন্য এপার-ওপার টানিয়ে দেয়া হয়েছে নাইলনের মোটা রশি। যার মধ্যে দেয়া হয়েছে রডের বালা। যাতে রশি দ্রুত আশা-যাওয়া করতে পারে। যাত্রীরা সেই রশি টেনে নদী পারাপার হয়ে থাকেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ এই রশি টেনেই খেয়া নৌকায় পারাপার হন। প্রায় দীর্ঘদিন ধরে এমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই এলাকার কয়েক গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। যাত্রী পারাপারের জন্য স্থানীয় কয়েক গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় আব্দুল হান্নান নামের মাঝি দীর্ঘদিন থেকে পারাপার করতেন। তিনিই নৌকা ও রশির ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এখন এই আয়ে তার আর চলে না। মাঝি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আগের মতো গ্রামের মানুষ টাকা বা ফসল দেয় না। তাই নিজে অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি’। স্থানীয় রিয়াজুল ইসলাম বলেন, নদীটির উত্তর পাশে রয়েছে একটি বাজার, সরকারী
প্রাথমিক, মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়সহ ঘনবসতিপূর্ণ দুটি গ্রাম। দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ, একটি পলিটেকনিক্যাল ইন্সিটিটিউটসহ ৩টি গ্রাম। আরও রয়েছে কয়েকশ’ হেক্টর কৃষি জমি। তাছাড়া নাটোর সদরে যেতে প্রধান সড়কে পৌছুতে যাতায়াত করতে খেয়া নৌকাটিই তাদের একমাত্র ভরসা। নদীটির দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দা অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন জানালেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে। ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে পাঁচ গ্রামের মানুষকে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পারাপার হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে দীর্ঘদিন থেকে শুধু শোনা যাচ্ছে ব্রীজটি অনুমোদন হয়েছে। কয়েকবার মাপ-জোখও হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই নেই। তিনি সেখানে দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান। বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুর রহমান জানান, একশ’ মিটার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ওই ব্রীজটির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে সেখানে ব্রীজ নির্মাণ করা হবে বলে তিনি জানান।