মো. মনিরুজ্জামান ফারুক, ভাঙ্গুড়া (পাবনা) : মৎস্য সমৃদ্ধ চলনবিল। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ দেশিয় মাছ উৎপাদিত হওয়ায় চলনবিলকে মৎস্য ভান্ডার বলা হয়। দিন দিন কমে আসছে বৃহত্তর চলনবিলের পরিধি। কৃষি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগসহ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে দেশিয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন। তারপরও চলনবিলের রয়েছে নানা ঐতিহ্য। বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ চলনবিলের জলরাশি আকৃষ্ট করে সবাইকে। প্রতিবছর বিল থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সময় এখানে শুরু হয় মাছ ধরার ‘বাউত উৎসব’। ‘বাউত উৎসব’ চলনবিলের একটি
ঐতিহ্য। এ উৎসবে শুধু জেলেরা নয় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সখ করে পলো (মাছ ধরার ফাঁদ) দিয়ে মাছ শিকারে নামেন। দূর দূরান্ত থেকে আসা শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ নানা বয়সী মানুষ অংশ নেয় এতে। সৌখিন মৎস্য শিকারিদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় বিল এলাকা। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চলনবিলাঞ্চল ছাড়া অন্য কোথাও যেন দেখার উপায় নেই। মাইকে ঘোষণা দিয়ে নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার এ অঞ্চলের অনেক পুরনো প্রথা। শুধু পলো নয়। বাদাই, খেওয়া জাল, কারেন্ট জাল, ঠেলাজাল প্রভুতি মাছ ধরার ফাঁদ ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হয়। এসকল মাছ শিকারিদেরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘বাউত’। চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার ভাঙ্গুড়া,চাটমোহর, ফরিদপুর,সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উপজেলার বিলে মাছ ধরার বাউত উৎসব হয়। সেখানে শত, শত সৌখিন মৎস্য শিকারি সাইকেল, মোটরসাইকেল, নছিমন করিমন যোগে এসে জমায়েত হয় বিলপাড়ে। এদিন বিলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে তাদের মাছ শিকার। রুই, কাতলা, জাপানি, ষোল, গজার, বোয়াল, মিনার কার্প, টাকি প্রভৃতি মাছ শিকার করেন তারা। মৎস্য শিকারিরা জানান, প্রতি বছর এদিনটির জন্য অপেক্ষা করেন তারা। বিলে পলো নামার কথা শুনেই তারা ছুটে আসেন মাছ ধরতে। চলনবিলের এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা ।