প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ঈরদীর লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নেই ৫২টি অবৈধ ইটভাটা


ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
ঈশ্বরদীর এক লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নেই গড়ে উঠেছে ৫২টি অবৈধ ইটভাটা। কৃষি জমি বিনষ্ট, ভাটায় কাঠ পোড়ানো, নিয়ম নীতি লংঘন ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার বিষয় উল্লেখ করে ইত্তেফাকসহ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় পত্রিকায় একাধিকবার খবর প্রকাশিত হলেও বন্ধ হয়নি এসব ইটভাটা। রিপোর্ট প্রকাশের পর পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১৯ সালের এপ্রিলে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে উচ্ছেদ শুরু করে । এসময় যৌথবাহিনী লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ৪টি ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়। কয়েকটি ইটভাটার মালিকদের নিকট হতে এসময় ৫ লাখ টাকা করে জরিমানাও আদায় হয়। পর্যায়ক্রমে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ করা হবে এসময় বলা হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের কোনো নিয়ম নীতি না মেনেই অবৈধভাবে এই ইটভাটাগুলো স্থাপিত হয়েছে। কয়লার পরিবর্তে পুড়ছে কাঠ। ইটভাটা গুলো কৃষি ফসলি জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। লক্ষীকুন্ডার অবৈধ ইটাভাটার বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার (১৭ই নভেম্বর) ঈশ্বরদী উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় বক্তারা ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, এবারেও ভাটাগুলো ইট পোড়ানোর জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই ভাটায় আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতিও জোড়েসোরে চলছে।

 ঈশ্বরদী শহর হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরবর্তী প্রত্যন্ত পদ্মা নদী তীরবর্তী লক্ষীকুন্ডায় গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। লক্ষীকুন্ডার তিনটি গ্রাম কামালপুর, দাদাপুর ও বিলকেদার গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কৃষি জমিতে এসব ইট ভাটা নির্মাণ হয়েছে। ভাটা নির্মাণের জন্য চিমনীর উচ্চতা ও আনুসঙ্গিক যে নির্দেশনা রয়েছে তা অধিকাংশ ভাটা মালিকারা মানেননি। ভাটাগুলোতে জ্বালানী হিসেবে কয়লার পরিবর্ততে কাঠের খড়ি ব্যবহার হয়। এখানে ৫০টি অটোফিস এবং ২টি জিকজ্যাক (হাওয়া) ভাটা রয়েছে । অটোফিস ভাটায় কাঠ (খড়ি) দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। এসব ভাটা চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়ে এলাকার পরিবশ সবসময় দুষণযুক্ত অবস্থায় থাকে।  যেকারণে এই অঞ্চলে অবাধে নিধন হচ্ছে গাছপালা। বেশির ভাগ ভাটার মালিকরা ইট তৈরির জন্য অবৈধ উপায়ে পদ্মার চর হতে মাটি সংগ্রহ করে থাকে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে পদ্মার চরে গিয়ে ভাটার মালিকদের মাটি সংগ্রহের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ।
 ভাটার মালিকরা প্রভাবশালী। তাই নাম প্রকাশ না করে এলাকাবাসীরা জানান, অধিক মুনাফার আশায় ভাটার মালিকরা কৃষি জমিতে ভাটা নির্মাণ করেছেন। ফলে চরাঞ্চলের কৃষি জমি দিন দিন কমে যাচ্ছে। ইটভাটার প্রভাবে এলাকার পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। ভাটার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি জমির আবাদের উপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, ২০১৯ সালের এপ্রিলে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ইট তৈরির জন্য ভাটার মালিকরা প্রভাবশালীদের সাথে আঁতাত করে পদ্মার চর হতে মাটি কেটে আনছে এবং সংশ্লিষ্ঠদের ম্যানেজ করে বৈধ ভাটা পরিচালনা করছে। 
লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফ বলেন, প্রথমদিকে এসব ভাটা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিলেও এখন আর নবায়ন করে না। বর্তমানে এসব ভাটার ট্রেড লাইসেন্স বা ইউনিয়ন পরিষদের কোন ছাড়পত্র নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল লতিফ জানান, বিপুল সংখ্যক ইটভাটা গড়ে উঠায় লক্ষীকুন্ডায় কৃষি জমির পরিমাণ কমে গেছে। ইটভাটার নিঃস্মরিত কালো ধোঁয়ায় ও ছাইয়ে আম-লিচু-কাঁঠালের বাগান এবং ফসলী জমির উপর প্রভাব পড়বে। এতে পলিউশনের প্রভাবে স্বাভাবিক জনজীবন ক্রমশ: হুমকীর সম্মুখিন হবে। 
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিএম ইমরুল কায়েস মঙ্গলবার আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় বলেন, এসব ইটভাটায় মাটি, বালি কিছুই কিনতে হচ্ছে না। কাঠ দিয়ে এতোগুলো ভাটায় ইট পোড়ানোর ফলে পরিবেশ দুষণ এবং কৃষি ফসলের উপর প্রভাব পড়ছে। সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স কিছুই দেয় না ভাটার মালিকরা। ফ্রিতেই পরিবশে দুষণ করে অবাধে এই ইটভাটাগুলো অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অল্প কিছুদিন হলো আমি এখানে এসেছি। আমার লোকবল কম। পরিবশে অধিদপ্তর ও আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কথা বলে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের বিষযে পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে জানিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে ইটভাটার মালিকরা এবিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হননি।