নাটোরবাসী সবার প্রিয় জলিদি……………….জলিদির নাটোর


বিশেষ প্রতিবেদক
দেড়শ বছরের পুরনো নাটোর পৌরসভার প্রথম নারী মেয়র উমা চৌধুরী জলি। ২০১৫ সালের নভেম্বরে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত হওয়া থেকেই শুরু তার চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক জীবন। ২০১৬ সালের ১লা মার্চ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে শত প্রতিকূলতার মাঝেও আজ পর্যন্ত সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে নাটোর পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন উমা চৌধুরী।এই সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দৃঢ়তার সাথে ভূমিকা পালন করে দল মনোনীত প্রার্থীদের শতভাগ জয় নিশ্চিতে রেখেছেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। পাশাপাশি, সাংঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে প্রত্যেকটি কর্মসূচীতে সক্রিয় থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন যথাযথভাবে। সর্বশেষ করোনা মহামারীর সময় গরীব-দুস্থ-অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মেয়র উমা চৌধুরী।এসব কারণে আসন্ন পৌর নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার অনেক আগেই মেয়র উমা চৌধুরীর পক্ষে ব্যতিক্রমী জনমত তৈরী হয়েছে। মানুষ তাদের দুঃসময়ের সেবককে আবারো পাশে চেয়েছেন আগামী দিনে।

তবে মেয়র উমা চৌধুরী আসন্ন পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।এই নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের অন্য নেতৃবৃন্দ মাসখানেক ধরে ব্যক্তি উদ্যােগে বিভিন্ন প্রচারণা, পোস্টারিং, নির্বাচনী ক্যাম্প, নৈশভোজ, বিশিষ্টজনদের সাথে মতবিনিময়সহ নানা রকম প্রচারণামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে মেয়র উমা চৌধুরী এখনো পৌরসভায় নাগরিক সমস্যা সমাধানে সময় দিচ্ছেন দিনের বেশিরভাগ সময় জুড়ে। এছাড়া করোনাকালের শুরু থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে শুরু করা দুঃস্থ, অসহায় ও কর্মক্ষম মানুষদের সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

করোনার এই মহামারিতে কমর্হহীন দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি নাটোর শহরকে করোনা ও ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে নানা কর্মসূচি বাস্তাবায়ন করে চলেছেন মেয়র উমা চৌধুরী। গত বছরের ডেঙ্গুর অভিজ্ঞতা থেকে এ বছর প্রাদুর্ভাব রোধে নিয়মিতভাবে রাস্তা, পৌরসভার ড্রেন ও নোংরা স্থানে জীবানুনাশক স্প্রে কার্যক্রম করেছেন মেয়র। এ কাজে সরকারী বরাদ্দ স্বচ্ছতার সাথে বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাঝে বণ্টনও করেছেন।চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে করোনা মহামারী মোকাবিলার অংশ হিসেবে নিজ অর্থায়নে ত্রাণ বিতরণ করছেন মেয়র উমা চৌধুরী জলি। ৫ কেজি চাল, আধা কেজি ডাল, ১ কেজি আলু, আধা কেজি তেল ও একটি করে সাবান দিয়ে ছোট ছোট ব্যাগ তৈরি করছেন। এসব ব্যাগ গাড়িতে নিয়ে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডের অসহায় ও দুঃস্থদের ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছেন। পৌরবাসীর মোটামুটি অবস্থাসম্পন্ন নাগরিকদের ঘরে রাখতে চালু করেছেন হোম ডেলিভারি সার্ভিস সেবা। পৌরসভার ব্যয়ে দুজন কর্মচারী ফোন পাওয়ামাত্র হাজির হয়ে তাদের বাড়ি বাড়ি পণ্য কিনে পৌঁছে দিয়েছেন।করোনাকালে সরকারিভাবে পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের জন্য মেয়র ৫৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেলেও৩ লাখ জনসংখ্যার এই পৌরসভায় দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনে তা নিত্যান্তই অপ্রতুল ছিলো। এ জন্য শুধু তালিকা নির্ভর নয়, যখন যেখানে যেমন প্রয়োজন সেভাবেই তিনি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন। কাউকে কাউকে সহায়তা করছেন নগদ টাকা দিয়ে। এর মধ্যে যারা দরিদ্র বস্তিবাসী, রিকশা, ভ্যান ও অটোচলক, স্টেশনের কুলিসহ যারা প্রকাশ্যে চাইতে পারেন না, তাদের ঘরেও খাবার পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছেন। করোনাকালে শুরুর দিকে ৪ হাজার ৮ শ জন পৌরবাসী খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় চাল পেলেও মেয়রের উদ্যোগে তা বাড়িয়ে ৮ হাজার ৪ শ জনে উন্নিত করা হয়। পর্যায়ক্রমে এই সুবিধাভোগীর পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন মেয়র।এখনও প্রায় প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর কর্মহীন মানুষদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে চলেছেন মেয়র। এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, সেবাইত এবং দিনমজুর, নরসুন্দর, দর্জি, চা-দোকানী, দোকান কর্মচারী, বাড়ির কাজের ঝি, মৎস্যজীবিসহ কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের এসব খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তিনি।করোনাকালে মেয়র উমা চৌধুরীর নিরবিচ্ছিন্ন সহায়তা মনে রেখেছে নাটোর পৌরবাসী। তাই আগামী দিনগুলোতে তাকে আবারো প্রত্যাশা করছে পৌরবাসী।

নাটোর পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে পৌরবাসীর প্রতিক্রিয়া নেয়া হয়েছে।তাদের কথার সারমর্ম হলো- গত পাঁচ বছরে তারা পৌর মেয়রের থেকে যে প্রত্যাশা করেছিলেন,তার কিছুটা অপূরণীয় রয়ে গেছে। যদিও এর জন্য তারা মেয়রকে দোষারোপ করতে চাননা। তাদের মতো, এমনিতেও মেয়ররা নির্বাচনের বছরেই পূর্বের সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা বেশি করেন। দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের পাওয়া যায় না। কিন্ত এক্ষেত্রে উমা চৌধুরী বেশ ‌ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি দায়িত্ব নেবার পর অন্তত তিন মাসে একবার হলেও পৌরবাসীর খোঁজ নিয়েছেন নিজে এসে। তিনি পৌরবাসীর কাছে এসেই তাদের সমস্যা শুনেছেন এবং তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেছেন। পৌরবাসীর মৌলিক প্রয়োজন নিয়ে মেয়রের কার্যালয়ে খুব কমই যেতে হয়েছে। তবে মেয়াদের শেষ বছরে প্রতিশ্রুত অনেক কাজ তিনি করতে পারেননি করোনার কারনে। তবে এই কঠিন সময়েও তিনি ঘরে বসে থাকেননি, খোঁজ নিয়েছেন এবং অসহায়, দুঃস্থদের সহায়তা করেছেন উদারহস্তে।কঠিন এই সময়ে পৌরবাসী সেবায় নিয়োজিত থাকা পৌর মেয়র উমা চৌধুরী এবারের পৌর নির্বাচন অংশ নেবেন কি না, তা নিয়ে উৎকন্ঠিত তার অনেক গুণগ্রাহী পৌরবাসী। তারা মনে করছেন, মেয়রের পক্ষে এ নিয়ে কোনো জোর প্রচারণা নেই।

নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যপারে পৌর মেয়র উমা চৌধুরীর মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, ‘এটা নির্ভর করছে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের উপর। যেহেতু পৌরসভার মেয়াদপুর্তি হয়নি এখনও তাই এ নিয়ে আপাতত ভাবছি না। তবে অন্য যারা প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের জন্য আমার শুভকামনা।’

মনোনয় চাইবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘যেহেতু আমি রানিং মেয়র তাই চাইবো মনোনয়ন। আমার কাজগুলো বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, তবেই তো নির্বাচন করবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার কথা চিন্তাও করতে চাই না।’উমা চৌধুরী আরও বলেন, ‘যদি প্রচারণার কথাই বলেন তবে লোক দেখানো প্রচারণায় আমি বিশ্বাস করি না। আমাকে যারা ভালোবাসেন তারা আমার জন্য নির্ভৃতে কাজ করছেন যা হয়তো আমি জানতেও পারছি না। এটাই সবচেয়ে বড় প্রচারণা বলে আমি মনে করি।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর সাবেক মেয়র এমদাদুল হক আল মামুনের রেখে যাওয়া কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছি। অনেক অব্যবস্থাপনা রোধ করে শৃঙ্খলা এনেছি সমস্ত কর্মকান্ডে। পৌরসভায় এখনও ২০ কোটি টাকার মতো প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে যা আমার মেয়াদের মধ্যে করে যেতে পারলে আমি স্বস্তি পেতাম। অনেক পৌরবাসী ড্রেন, পয়নিষ্কাশনের ব্যাপারে আমার কাছে অভিযোগ করেছে এবং এখনও করে। আমি যতটা পারি চেষ্টা করি। নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তারা অসচেতনভাবে বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা ফেলে পানি নিষ্কাশনের পথরোধ করেছে। এর দায় কিন্ত পৌরসভার নয়। আমরা সময় বাড়ার সাথে সাথে পৌরবাসীর আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।’মেয়র উমা চৌধুরী জলি নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও সদালাপি। নাটোরবাসীর বিভিন্ন দুর্ভোগ ও সমস্যা আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়ে তা সমাধান করতে চান। পৌরবাসীর উন্নয়নে বাস্তবসম্মত ও গঠনমূলক পরামর্শ গ্রহণের জন্য মেয়র উমা চৌধুরী জলি সদা প্রস্তুত।

২০১৫ সালে পৌর নির্বাচনে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ অন্য একজন প্রার্থীকে মনোনীত করে নাম চুড়ান্তের জন্য কেন্দ্রে পাঠালেও নির্বাচনে চুড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ উমা চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী শেখ এমদাদুল হক আল মামুনকে ৪ হাজার ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন উমা চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, মেয়র উমা চৌধুরী জলি নাটোর শহরে ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরী ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত হন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংস্পর্শে থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সফল ও স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গণমানুষের মনে স্থান করে নিয়েছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে ৭ নম্বর সেক্টরে এবং জোনাল কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। সফল নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে নাটোর জেলার গভর্নরের দায়িত্ব প্রদান করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে আমৃত্যু শোকের দিন হিসেবে প্রতি ১৫ আগস্ট বাড়িতে আগুন না জ্বেলে ‘অরন্ধন দিবস’ পালন করতেন যা এখন পর্যন্ত তাঁর পরিবারের লোকজন পালন করে চলেছেন। শংকর গোবিন্দ চৌধুরী ১৯৯১ সালে নাটোর সদর আসনের তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের এম.পি এবং একাধিকবার নাটোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জাতির জনকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শংকর গোবিন্দ চৌধুরী কোনো ছল-চাতুরির আশ্রয় না নিয়ে প্রচুর পৈতৃক সম্পদ দেশের কাজে সমর্পণ করেছেন। নাটোরের অবিসংবাদিত নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরী অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন।