ইয়ানূর রহমান : যশোর সদর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাপ্পি হোসেনের স্ত্রী স্মৃতি খাতুন (১৯)। শনিবার দুপুরে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তির পর রাতে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক। তিনি ছেলে সন্তানের মা হয়েছেন।
রোববার দুপুরে প্রসূতি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় স্মৃতিকে রাখা হয়েছে বারান্দার মেঝেতে। তার স্বজন সুফিয়া বেগম জানান, অস্ত্রোপচারের পরই প্রসূতি মা ও শিশুকে বারান্দায় রাখা হয়। শয্যা সংকটের কারণে মেঝেতে নোংরা পরিবেশে চলছে তার চিকিৎসা। ওয়ার্ডের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় মেঝেতে
রোগীর সারি। অথচ পাশেই দুটি শয্যা (বেড) খালি রয়েছে। শয্যার গাঁ ঘেষেই মেঝেতে থাকা রোগী শীলা খাতুন (২৬) জানান, সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর থেকেই মেঝেতে। শিশু সন্তানকে নিয়ে মেঝেতে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। পাশের শয্যাটি খালি হওয়ার পর উঠেছিলাম। কিন্তু সেবিকারা নামিয়ে দিয়েছেন। বলেছে ওই শয্যাটি অন্য ইউনিটের রোগীদের। বাধ্য হয়ে মেঝেতে রয়েছে। শীলা খাতুন
বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী। স্মৃতি ও শিলার মতো অনেক রোগী জানিয়েছেন, প্রসূতি ওয়ার্ডে তারা মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর মেঝেতে থাকার কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে রয়েছেন প্রসূতি ও শিশু সন্তান।
প্রসূতি ওয়ার্ডে মোট শয্যা রয়েছে ১৫ টি। কিন্তু শয্যার তুলনায় রোগী কয়েকগুণ বেশি থাকে। রোববার দুুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন ৩৫ জন। এখানে দায়িত্বরত একজন সেবিকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রসূতি ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড় ৪৬ জন রোগী ভর্তি হন। রোগীর তুলনায় শয্যা সংকুলান না হওয়ায় প্রসূতি ও নবজাতককে মেঝেতে রাখা হয়। দায়িত্বরত আরেক সেবিকা দিলারা খানম
জানিয়েছেন, নিয়ম নেই সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতিকে মেঝেতে রাখার।
তারপরেও কিছু করার নেই। তিনি আরো জানান, ওয়ার্ডে দুটি ইউনিটের চিকিৎসকরা রোগী দেখভাল করেন। প্রথম ইউনিটে রয়েছে ৭ টি আর দ্বিতীয় ইউনিটে রয়েছে ৮ টি শয্যা। যে কারণে এক ইউনিটের রোগী আরেক ইউনিটের শয্যায় থাকতে দেয়া হয়না।
এরপরেও রোগীদের সুবিধার্থে এক ফাঁকা শয্যায় রোগী থাকতে দেয়া হয় অন্য ইউনিটের রোগী না আসা পর্যন্ত। এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, প্রাইভেট প্রাকটিসের সুবিধার কারণে হাসপাতালের চিকিৎসকরা
ইউনিট ভাগ করে নিজেদের মতো করে ‘রোস্টার’ বানিয়ে নিয়েছেন। তারা ওয়ার্ডে দুটি ইউনিট ভাগ করে একেক ইউনিটে ৫/৬ জন করে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে এক ইউনিটের রোগীকে অন্য ইউনিটের চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্র বা দেখভাল করেন না।
যে কারণে শয্যা খালি থাকলেও চিকিৎসার সুবিধার্থে এক ইউনিটের রোগী আরেক ইউনিটের শয্যায় যায় না। এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, ২০০৩ সালে ১৫ শয্যার প্রসূতি ওয়ার্ড তৈরি হয়। বর্তমানে শয্যার তুলনায় রোগী বেড়েছে কয়েকগুণ। যে কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আরএমও আরো জানান, ইউনিট প্রথা না থাকলে চিকিৎসকদের পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এছাড়া রোগীরাও ঠিকমতো
চিকিৎসাসেবা পায়না। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, প্রসূতি ও নবজাতক মেঝেতে থাকার বিষয়টি সত্যি বেদনাদায়ক। কিন্তু শয্যা ও জায়গা সংকটের কারণে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। নতুন ভবণের নির্মাণ কাজ শেষ হলে দুর্ভোগ কেটে যাবে।