ভয়ংকর সামাজিক অবক্ষয়ের নাম ধর্ষণ


মানুষ সহজাতভাবে দুটি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। তার একটি ভাল দিক যেটাকে বলে বুদ্ধিবৃত্তি। অন্যটি হল মন্দ দিক যেটাকে বলে জৈববৃত্তি। সামাজিক অনুশাসন, শিক্ষা, আইন, বিচার ও শৃংঙ্খলাবোধ মানুষের এই জৈববৃত্তি বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রন করে রাখে।  মানুষের মাঝে যে পশুত্ব আছে সেটাকে দমন করার জন্য ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিছু দায়িত্ব আছে। এই দায়িত্বে যখন ঘাটতি থাকে তখন শুরু হয় পশুবৃত্তির আগ্রাসন। বাংলাদেশে বর্তমানে ধর্ষণ ও গনধর্ষণ এক মহামারি রূপ ধারণ করেছে।প্রতিনিয়ত ঘটছে জঘণ্য এসব ঘটনা। কোন নারীই যেন এটার হাত থেকে আজ নিরাপদ নয়। গত ৬ মাসে বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নির্মমতার শিকার হয়েছে ৬০১ জন নারী ও শিশু। একক ধর্ষণের শিকার ৪৬২ জন। দলবদ্ধ বা গনধর্ষণের শিকার শিকার  শিকার  শিকার  শিকার  শিকার  শিকার  শিকার  শিকার  শিকার  শিকার  শিকার  শিকার  শিকার  শিকার  হয়েছে ১৩৪ জন। এর মধ্যে ১০৩ জন শিশু। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ৩৭ জন নারী।  ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে ১২৬ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চলতি বছরের ছয় মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৯ সালে ১৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলো।

প্রশ্ন হল বার বার কেন এ ধরনের পাশবিক ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে অনেক তরুন আজ মাদকে আসক্ত। এই আসক্তি তাদের নানা অপকর্মে লিপ্ত করছে। ধর্ষণ তাদের একটি।
আকাশ সংস্কৃতি আজ আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির উপরে বড় আঘাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে যুব সমাজ ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে। সামাজিক অনুশাসন বড় ভূমিকা পালন করে তরুনদেরকে সুপথে রাখতে।কিন্তু কোথায় আজ সেই সামাজিক অনুশাসন? কৃমি কীটে খাওয়া দগ্ধ লাশের চেহারা আজ সামাজিক অনুশাসনের। ধর্মীয় অনুশাসন অনেক বড় ভূমিকা রাখে তরুনদের সঠিক পথে রাখতে। পারিবারিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষা শিশুদের নৈতিক শিক্ষায় আলোকিত করে।  একটি শিশু কিভাবে বড় হচ্ছে, কোন আদর্শ সে নিজের মধ্যে ধারণ করছে এটা দেখার দায়িত্ব পরিবার, প্রতিবেশি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই জায়গাগুলিতেও আজ অবহেলা ও অদূরদর্শিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এবার আসি বিচার প্রসঙ্গে। অন্যায়ের বিচার না হলে সে অন্যায় ক্রমাগত বাড়তে থাকে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি অন্যায়ের পথকে সুগম করে। ধর্ষণের মত জঘণ্য অপরাধকে কোন মতেই ঠুনকো ভাবে নেয়া উচিত না। এদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে পারলে তা নজির হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাবে এবং অন্যদের জন্য সেটা সতর্ক বার্তা হিসাবে কাজ করবে।

সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ধর্ষণের মত জঘণ্য অপরাধকে দূর করতে কতকগুলি পদক্ষেপ অতি জরুরীঃ ১. কঠোর শাস্তি ২. সামাজিক অনুশাসন নিশ্চিতকরন ৩. ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিতকরন ৪. মাদক দূরীকরন ৫. বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি ৬. নিজের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধকরন ৭. পারিবারিক বন্ধন সৃষ্টি ৮. সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ৯. তরুনদের খেলাধুলা সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা ১০. কিশোর অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

ধর্ষণের মত অপরাধ প্রবণতা কোন একক প্রচেষ্টায় সমাধান হবে না। এর জন্য দরকার সমন্বিত প্রচেষ্টা। যুবকদের আত্মিক উন্নতি সাধনে বড়দের বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। পারিবারিক বন্ধন মজবুত না হলে সেই পরিবারের সন্তানদের বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আসুন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি যার যার অবস্থান থেকে। একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে আসলে তেমন কোন লাভ হয় না। একটি সর্বাত্মক প্রচেষ্টাই পারে যে কোন অপরাধকে উপড়ে ফেলতে।