ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি :: পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা না পেয়ে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। রবিবার এগারোটার দিকে হাসান নামে নয় মাস বয়সী ওই শিশুর মৃত্যু হয়। ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের পাথরঘাটা পশ্চিম পাড়া মহল্লার বাসিন্দা রুহুল আমিনের ছেলে হাসান। এদিকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ডাক্তারদের বকাঝকা করলে শিশুটির পরিবারের সদস্যদের উল্টো পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেয় ইমারজেন্সিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।
শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় শিশু হাসানের প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রবিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমারজেন্সি বিভাগে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান মা সহ পরিবারের অন্যরা। সেখানকার কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সওগাত এহসান সাম্য না থাকায় প্যারামেডিকেল চিকিৎসক মাসুদ রানা শিশুটিকে বহির্বিভাগে পাঠিয়ে দেন। বহির্বিভাগে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে দীর্ঘক্ষন সময় নষ্ট হওয়ায় শিশুটির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় টিকিট কেটে শিশুটিকে বহির্বিভাগ থেকে পুনরায় ইমারজেন্সিতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় ডাক্তার সওগাত এহসান সাম্যকে না পেয়ে এবং প্যারামেডিকেল চিকিৎসক মাসুদ রানা চিকিৎসা না দেওয়ায় শিশুটিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে একটি চেম্বারে ডাক্তার দেখানো হয়। কিন্তু শিশুটির অবস্থা মুমূর্ষ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওই ডাক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে অক্সিজেন দিতে বলেন। এতে পুনরায় ওই শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এ সময়ও মেডিকেল অফিসার সওগাত এহসান সাম্য না থাকায় শিশুটিকে ভর্তি না করে অক্সিজেন দিতে বিলম্ব করে প্যারামেডিকেল ডাক্তার মাসুদ রানা। এক পর্যায়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা হাসপাতালে ঘোরাঘুরির পরে শিশুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেন দেয়ার আগেই মারা যায়।
এদিকে শিশুটি মারা যাওয়ার আগেও দীর্ঘক্ষণ ধরে প্যারামেডিকেল ডাক্তার কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার সওগাত এহসান সাম্যর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এসময় শিশুটির পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে কর্মরতদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করলে ইমারজেন্সিতে কর্তব্যরত প্যারামেডিকেল ডাক্তার মাসুদ রানা তাদেরকে পুলিশ দিয়ে আটকের হুমকি দেন। অবশেষে শিশুটি মারা যাওয়ার পরে সওগাত এহসান সাম্য হাসপাতালে আসেন।
এ বিষয়ে প্যারামেডিকেল ডাক্তার মাসুদ রানা বলেন, শিশুটির অবস্থায় এতটা খারাপ ছিল পরিবারের লোক আমাকে জানায়নি। তাই শিশুটিকে বহির্বিভাগে পাঠিয়েছিলাম। পরে শিশুটি ফেরত এলে মেডিকেল অফিসারের না থাকায় হাসপাতালে ভর্তি করতে পারিনি। তাই তাকে অক্সিজেন দিতে বিলম্ব হয়। এসময় মেডিকেল অফিসার সওগাত এহসান সাম্যকে মোবাইল ফোনে অনেকবার কল করেও পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডাক্তার সওগাত এহসান সাম্য দাবি করেন, তিনি হাসপাতালের ওয়ার্ডে পরিদর্শনে ছিলেন। তাই ইমারজেন্সি বিভাগে আসতে দেরি হয়েছে। এতে তিনি আসার আগেই শিশুটি মারা যান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খানম বলেন, শুনেছি শিশুটিকে বাইরের কোনো ডাক্তারের কাছে দেখানো হয়েছিল। পরে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে আসার পরপরই শিশুটি নাকি মারা যায়। এ সময় তিনি ইমারজেন্সি বিভাগে ডাক্তার না থাকার কথা অস্বীকার করেন।