পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে মিতব্যয়ী হওয়ার কথা জনমানুষকে মনে করিয়ে দিতে ১৯২৪ সালে ইতালির মিলান শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্বের বিভিন্ন সঞ্চয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের কংগ্রেসে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর ‘বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস’ পালন শুরু হয়।
সেই থেকে সারা বিশ্বে দিবসটি পালন হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও সরকারিভাবে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয় এবং জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতর এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। দৈনন্দিন জীবনে ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনই মিতব্যয়িতা। অন্যভাবে বললে কৃপণতা না করে প্রয়োজন মতো অথবা হিসাব করে ব্যয় করার নাম মিতব্যয়িতা।
ইসলাম ধর্মে অপচয় ও অপব্যয় রোধের কথা বলা হয়েছে। ইসলামে অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অপচয় ও অপব্যয়ের নানাবিধ ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ইসলামে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মানুষ অর্থ উপার্জনের পর তা খরচ করার তিনটি অবস্থা রয়েছে। এগুলো হলো কার্পণ্য, মিতব্যয় ও অপব্যয়। ইসলাম মিতব্যয়কে উৎসাহিত করে কার্পণ্য ও অপব্যয়কে নিন্দা জানিয়েছে। আর এ কারণে মিতব্যয় মধ্যপন্থাও একটি উত্তম কাজ। অন্যদিকে অপব্যয় ও কার্পণ্য উভয়টাই নিন্দিত ও গুনাহের কাজ।
মিতব্যয় মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং অন্যকে সাহায্য করার পথ উন্মুক্ত করে। মিতব্যয়ীরা কখনোই নিঃস্ব হয় না। মিতব্যয়িতা ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে সূরা ফুরকানের ৬৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তার দয়াপ্রাপ্ত মুমিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। এগুলোর অন্যতম হলো মিতব্যয়িতা।
ইরশাদ হয়েছে, ‘রহমানের বান্দা তো তারাই যারা অপব্যয়ও করে না, আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী’। (সূরা: ফুরকান, আয়াত: ৬৭)
শুধু একদিনের জন্য নয়, সারা জীবনই মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করা ইসলামের বিধান। শুধু ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনও নয়; বরং কথাবার্তা, হাঁটা-চলায়ও মধ্যপন্থার নির্দেশ রয়েছে ইসলামে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘পদচারণে মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নিচু কর’। (সূরা: লুকমান, আয়াত: ১৯)
মানুষের প্রয়োজনীয় সব জীবনোপকরণ দিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। রিজিক গ্রহণের পাশাপাশি অপচয় যেন না হয়, সে ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন তিনি।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আহার ও পান কর, আর অপচয় কোরো না; তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না’। (সূরা: আরাফ, আয়াত: ৩২)
পবিত্র কোরআনে মিতব্যয়ীদের ‘রহমানের বান্দা’ হিসেবে অভিহিত করার পাশাপাশি অপচয়কারীদের শয়তানের ভাই হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় কর না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই’। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৬-২৭)
রাসূলুল্লাহ (সা.) অপব্যয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন। একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) হজরত সাদকে (রা.) ওজুর সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করতে দেখে বলেন, ‘হে সাদ! অপচয় করছ কেন’? সাদ (রা.) বলেন, ‘ওজুতে কি অপচয় হয়?’ নবীজি (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ। প্রবহমান নদীতে বসেও যদি তুমি অতিরিক্ত পানি ব্যবহার কর, তাও অপচয়’। (ইবনে মাজা : ৪২৫)
মিতব্যয়ী হলে আল্লাহ দারিদ্র্যমুক্ত জীবন দান করবেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না’। (মুসনাদে আহমাদ : ৭/৩০৩)