মানসিক চাপ, অস্বস্তিতে কমবেশি সবাই ভোগেন। তবে তা অসুস্থতার পর্যায়ে পৌঁছালে প্রভাবিত হয় দৈনন্দিন জীবন।
প্রচণ্ড ভয়, দুশ্চিন্তা থেকে শুরু করে বুক দপদপানি, হৃদস্পন্দনের গতি অতিমাত্রার বেড়ে যাওয়া, দম ফুরিয়ে আসা ইত্যাদি সবকিছুই পুরো শরীরের ওপরেই প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের ওপর। সুষ্ঠু পদক্ষেপ নিতে পারলে হৃদস্পন্দনের ওই ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল সেই উপায়গুলো সম্পর্কে।
জন্স হপকিন্স মেডিসিন’য়ের মতে, “অস্বস্তিজনীত অসুস্থতা বা ‘অ্যাংজাইটি ডিজওর্ডার’র জুড়ে আছে ‘ট্যাকিকার্ডিয়া’ অর্থাৎ হৃদস্পন্দনের অতিরিক্ত ঊর্ধ্বগতি।”
মানসিক অস্বস্তি নিত্যসঙ্গী হলে সময়ে ফেরে তা হৃদযন্ত্রের ওপর বাড়তি ধকল ফেলে, পক্ষান্তরে বাড়তে থাকে হৃদরোগের ঝুঁকি।
২০১০ সালের এক ‘মেটা অ্যানালাইসিস’ বলে, যারা প্রতিনিয়মিত মানসিক অস্বস্তিতে ভুগছেন তাদের ‘করোনারি হার্ট ডিজিস’য়ের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেশি।
২০১৬ সালের ‘কারেন্ট সায়কায়াট্রি রিপোর্ট’য়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘হার্ট ফেইলিউর’য়ের পেছনেও ভূমিকা আছে ‘অ্যাংজাইটি ডিজওর্ডার’য়ের।
অ্যাটলান্টিকেয়ার রিজিওনাল মেডিকাল সেন্টার’য়ের ‘সায়কায়াট্রি’ বিভাগের ‘প্রোগ্রাম ডিরেক্টর’ ব্রায়ান আইজ্যাকসন বলেন, “কিছু গবেষণা বলে, যাদের মানসিক অস্বস্তি বেশি তাদের হৃদস্পন্দের তালজনীত সমস্যা দেখা যায় অতিকাংশ ক্ষেত্রেই, সঙ্গে থাকে ‘পালপিটিশন’ এবং ‘প্রিম্যাচিউর বিটস’।
যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন হৃদস্পন্দন
অ্যাংজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেসন অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা’র মতে, “আতঙ্কিত অবস্থায় বুক ধড়ফড় করা, ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা, যা হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়ারই ফলাফল। ‘প্যানিক অ্যাটাক’কে অনেকেই ‘হার্ট অ্যাটাক’ ভেবে ভুল করেন।”
মানসিক অস্বস্তি, চাপ বা উদ্বেগ যাদের রোগের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তাদের জন্য আইজ্যাকসন বলেন, “প্রথম কাজ হবে মানসিক অস্বস্তির কারণ সমাধান করা। সেটা হতে পারে ওষুধের সাহায্যে, ‘কগনিটিভ বিহেভিয়োরাল থেরাপি (সিবিটি)’য়ের সাহায্যে কিংবা দুটোর মিশ্রণে।”
‘সিবিটি থেরাপি’ ছাড়াও আরও কয়েকটি উপায় আছে হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণের। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেই পদ্ধতিগুলো হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি একসময় মানসিক অস্বস্তি সামাল দেওয়াও শেখাবে। ফলে মিলিতভাবে তা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনবে।
পরিশ্রম: শারীরিক পরিশ্রম যেন সকল রোগের মহৌষধ। মানসিক অস্বস্তি ও চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, মানসিক অস্বস্তির শিকার মানুষগুলোর শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা বেশ কম। আর যারা শারীরিক কসরতে যুক্ত থাকেন তাদের মানসিক অস্বস্তি দেখা দেয় কম।
আইজ্যাকসন বলেন, “মানসিক অস্বস্তি সামলানোর পাশাপাশি ‘রেস্টিং হার্ট রেট’ স্বাভাবিক রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম। তাই হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে ব্যায়াম করতেই হবে।”
নিঃশ্বাস নেওয়া: ‘ডিপ ব্রিদিং’ এবং ‘প্রোগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন’ অনুশীলন করার মাধ্যমেও মানসিক অস্বস্তি আর হৃদস্পন্দন দুটোই সামলানো সম্ভব।
অ্যাইজ্যাকমন বলেন, “লম্বা দম নেওয়া অনুশীলন ‘ভ্যাগাস’ নামক স্নায়ুতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এতে পুরো স্নায়ুতন্ত্রই আলোড়িত হয় এবং যে রাসায়নিক উপাদানগুলো ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’ সৃষ্টি করে, তাদের মাত্রা কমায়। এতে হৃদস্পন্দনের গতি ও রক্তচাপ কমে।”
‘ডিপ ব্রিদিং’ অনুশীলনের পদ্ধতি
নিরিবিলি স্থানে বসে কিংবা শুয়ে প্রথমেই চোখ বন্ধ করে নিতে হবে। নাক দিয়ে ধীরে লম্বা দম টানতে হবে। যারা নতুন অনুশীলন করছেন, তারা এসময় বুকের উপর হাত রাখতে পারেন। দম টানার কারণে বুক ফুলে ওঠা অনুভব করতে পারবেন। এবার দম ছাড়তে হবে ধীরে, তবে মুখ দিয়ে। যতক্ষণ ইচ্ছা এই ব্যায়াম অনুশীলন করতে পারেন।