‘উত্তর কোরিয়ার বিচার ব্যবস্থা পশুত্বকেও হার মানায়’

উত্তর কোরিয়ার বিচার ব্যবস্থায় মানুষের সঙ্গে যে আচরণ করা হয় তা ‘পশুর চেয়েও খারাপ’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সোমবার এক প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করেছে।

উত্তর কোরিয়ার বন্দীদের এবং কর্মকর্তাদের ওপর নির্যাতন, অপমান ও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির গ্রহণের বিরুদ্ধে দেশটির প্রশাসনের সঠিক আইনী প্রক্রিয়া প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

দেশটির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সমালোচকরা ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। দেশটির বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বাইরের জগতে তেমন একটা জানা যায় না।

দেশটির প্রশাসনের হাতে আটককৃতদের থেকে বন্দীজীবন সম্পর্কে জানতে মানবাধিকার সংস্থাটি উত্তর কোরিয়ার কয়েক জন প্রাক্তন বন্দী এবং কর্মকর্তাদের সাক্ষাত্কার নেয়।

তারা জানায়,আটকের শুরু থেকেই নানা নির্যাতনের স্বীকার হয় তারা। আটকের প্রথম পর্যায়ে আটককৃতদের লাঠিপেটা বা কথায় কথায় লাথি মেরে তাদের নির্যাতন করা হয়।

একজন প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিধিমালা বলছে যে কোনও মারধর করা উচিত নয়, তবে তদন্তের সময় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বন্দীদের আঘাত করতেই হয়।

সাবেক আটককৃতরা বলেন, তাদের দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে বাধ্য করা হত। বসে থাকা অবস্থায় চামড়ার বেল্ট এবং লাঠি দিয়ে তাদের পায়ে বিরতিহীন ভাবে প্রহার করা হত।

প্রাক্তন আটক বন্দী পার্ক জি চিওল বলেন, প্রহরীরা আমাদের হাত সেলের রডের সাথে বেঁধে আমাদের শরীরের নিচের অংশে তাদের বুট দিয়ে আঘাত করত।

আরেক প্রাক্তন আটক বন্দী ইউন ইয়ং চেওল বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় আমি সেখানে পার করেছি। সেখানে আপনার সঙ্গে পশুর চেয়েও খারাপ আচরণ করা হবে,আপনাকে কখনই মানুষ হিসেবে গণ্য করা হবে না।

এছাড়া কিছু নারী বন্দী জানান, তারা সেখানে প্রচণ্ড যৌন সহিংসতার স্বীকার হয়েছে ।

২০১০ সালে উত্তর কোরিয়ায় পালিয়ে আসা ৫০ বছর বয়সী কিম সান ইয়ং বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য একটি ঘরে বন্দি করে ধর্ষণ করেছিল উত্তর কোরিয়ার পুলিশ প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা।

তিনি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদকালে অপর এক পুলিশ অফিসার তার শরীরের নানা স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয় এবং যৌন নির্যাতন করে।

দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্য দেশগুলি উত্তর কোরিয়ার সরকারকে প্রকাশ্যে এবং ব্যক্তিগতভাবে বন্দীদের ওপর এই অমানষিক নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

তারা এক প্রতিবেদনে পিয়ংইয়ং প্রশাসনকে জানায়, আটককৃতদের উপর নির্যাতন ও অবমাননাকর আচরণ যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে হবে।

দেশটি ইতিমধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে শুরু করে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মত ঘৃণ্য অভিযোগে অভিযুক্ত।

তবে পিয়ংইয়ং প্রসাশন বলছে, সত্যিকারের মানবাধিকার রক্ষার নামে পশ্চিমা বিশ্ব অন্য দেশগুলোর জন্য যে মানবাধিকারের মান দণ্ড নির্ধারণ করেছে তার কোন যৌক্তিক অধিকার তাদের নেই।