রাতের ট্রেন


।। হিমেল রউফ ।।

আমার পিত্রালয়ের স্টেশনে সাধারণত আন্তঃনগর ট্রেন তেমন থামতো না আর তাছাড়া আমাদের ছেলেবেলার যাতায়াতের পথটুকুও এই ট্রেন সম্পর্কিত ছিলোনা।
তাই শৈশব থেকেই একটা অদেখা আকুলতা ছিলো এই সমান্তরাল পথের প্রতি। আমার শৈশবে এক বন্ধু খুব যত্নের সাথে কন্ঠে তুলতো এই কু ঝিকঝিক আওয়াজ।
হয়তো অপুর মতো ছুটে গিয়ে এই যান দেখা হয়নি কখনো তখন তবে কি একটা মায়ার টান ছিলো শুরু থেকেই।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কিছু বন্ধু ছিলো ট্রেনের দুরত্বে।
ওদের সাথে মাঝে মাঝেই ছুটে যেতাম কোন কাজ ছাড়াই ওদের ওখানে, ছুটে ফিরতাম হাতলের আড়ালের ছারপোকা আর আরশোলার দৌরাত্ম্য ছাপিয়ে, মেয়েদের বসিয়ে স্ট্যান্ডিং হাতলে ঝুলে আমি উপভোগ করতাম শুধু ট্রেনযাত্রা। কমলাপুর স্টেশন পার হতে হতেই একটা ছোট শুকরের খোঁয়াড় ছিলো, বাসের জানালা দিয়ে শৈশবের রাস্তার দৃশ্যের মতো সেই খোঁয়াড় টাও আমাকে টানতো। কোন কোন দিন বসার সুযোগ পেলে জানালার ধারে বর্তে যেতো আমার ছেলেমানুষি। এভাবেই আস্তে আস্তে আমার ট্রেন যাত্রার সূচনা। এখন মাঝে মাঝেই ট্রেন ভ্রমণের সুযোগ হয় যদিও সে দুরত্ব ও খুব বেশী নয়। এখনো সুযোগ পেলে সে হোক না দাড়িয়ে আমি ট্রেনকেই বেছে নিতে চাই, আর সেটা যদি হয় একা জানালার ধারে গভীর রাতে জোছনায় ভিজতে ভিজতে তবে তা আমার কাছে স্বর্গ।

আজ সময় পাল্টেছে, ছাত্রজীবন শেষে অনেক আগেই সংসারের বেড়াজালে আটকেছে জীবন, আবেগ অনূভুতি পাল্টেছে, আমার ছোট্ট সন্তান শিখে গেছে সবগুলো যানবাহনের নাম। তবু এখনো মাঝে মাঝে ছেলেমানুষী ভাবনাগুলো ভাবতে সাধ হয়, এই যেমন এখন হচ্ছে, এখন আমি একা, যদিও রাত এখন ততটা গভীর নয় তবুও জানালার পাশে বসে মাঝে মাঝে চোখ বুঁজে শুধু সেই কু ঝিকঝিক আওয়াজ টাই শুনছি, ভুলতে চাচ্ছি জীবনের সকল অনিশ্চয়তা, সংসারের অচলায়নতা, নিবিড় স্বার্থান্বেষী সকল ঝামেলা সবকিছু।

শুধু কু ঝিকঝিক ঝকঝক…..আর মৃদুমন্দ শীতল বাতাস, আমি কোন এক ভাবনাহীন সন্ত যেনো।।

১৬ ১০. ২০
মৌচাক স্টেশন
পদ্মা এক্সপ্রেস