ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের ময়দানদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল হোসেন (৪৫) চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে চাকুরি ছেড়ে দিয়েছেন। আগামী বছর মার্চ মাসে খানমরিচ ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দুলাল হোসেন ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করেও রাজনীতির নেশা থেকে বের হতে পারেননি তিনি। তাই সরকারি চাকুরী না খুঁজে গ্রামেই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করেছিলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পদে থেকে এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান নিয়মিতভাবে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। কিন্তু এর পরেও তিনি সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে জনগণের সেবা করা। কিন্তু বিদ্যালয়ের চাকরি জাতীয়করণ হওয়ায় তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের পদে থাকায় এবং চাকুরীর পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ায় প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের আরেকটি গ্রুপ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। অবশেষে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। তবে চাকরি ছেড়ে রাজনীতি করার বিপক্ষে ছিলেন তার স্ত্রী ও ছেলে সহ পরিবারের অন্যরা।
জানা যায়, ময়দানদিঘী গ্রামের বাসিন্দা দুলাল হোসেন ১৯৯১ সালে খানমরিচ ইউনিয়নের দোহারিগ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরে বিদ্যালয়টি সরকারিভাবে রেজিস্টার্ড ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সারাদেশের ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের সাথে দোহারিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়। এরপরও শিক্ষকতা এবং রাজনীতি একইসঙ্গে চালিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদে রয়েছেন দুলাল হোসেন। একপর্যায়ে রাজনীতিতে তিনি খানমরিচ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আছাদুর রহমানের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন। দুলাল হোসেন সর্বশেষ গত দুই বছর ময়দানদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পালন করে পাশাপাশি রাজনীতি করার জন্য আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ নানা অভিযোগ তুলতে শুরু করেন। দুলাল হোসেন এই প্রেক্ষাপটে গত ৩০ সেপ্টেম্বর চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে তিনি ২০৩৪ সালে অবসর গ্রহণ করতেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করায় তিনি ৬৯% অবসর ভাতা পাবেন বলে জানা গেছে। এর ফলে আর্থিকভাবে মাসিক বেতন ও অবসর ভাতা সহ সহ প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বঞ্চিত হলেন তিনি।
দুলাল হোসেন বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি করি এবং মানুষের জন্য কিছু করার কথা ভাবি। তাই দীর্ঘ দুই যুগ ধরে ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । এ কারণে সাধারণ মানুষদের দাবির মুখে আমার পরিবারের সদস্যদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও চাকুরী ছেড়ে চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে দল আমাকে নৌকা প্রতীক দিবেন বলে আমি আশা করি।’
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সেলিম রেজা বলেন, রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে দুলাল হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে অফিসের কোনো কিছু বলার নেই।