নাটোর প্রতিনিধি.
নাটোরের গুরুদাসপুরে ইউপি সদস্য বেলাল হোসেনের সুদের ফাঁদে পদে সর্বশান্ত হচ্ছেন এলাকার মানুষ।তাঁর এই সুদের ব্যবসার ফাঁদে পড়ে গ্রামের সাধারন মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা। বেলাল হোসেন উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার।
এদিকে বেলাল মেম্বারের সুদের ব্যবসা বন্ধ ও তার নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করায় বিয়াঘাট ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রাণনাশের হুমকী দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে গত বৃহষ্পতিবার থানায় সাধারন ডায়েরী (জিডি নং-৯৩২) করেছেন চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক।
বিয়াঘাটের হরদমাগ্রামের ভুক্তভোগী রইজান বেওয়া অভিযোগ করেন মেয়ের ঘরে সুখ ফেরাতে ৫০ হাজার টাকা সুদে নিয়েছিলেন তিনি। সেই টাকায় মেয়ের সংসারে ফিরেছে সুখ। সেই সুদের টাকা শোধ দিতে না পারায় এখন বসতভিটা লেখে নেওয়াসহ বসবাসের ঘরটি ভেঙ্গে নেওয়ার হুমকী দিচ্ছেন সুদের কারবারি বেলাল হোসেন।
একই গ্রামের ভুক্তভোগী রিজিয়া বেওয়া ও আবু তাহের অভিযোগ করেন,- বিপদে পড়ে রিজিয়া ৫০ হাজার টাকা ও আবু তাহের ৪০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। ইতমধ্যে আসলের চেয়ে বেশি টাকা পরিশোধ করেছেন তারা। এখন আসল টাকা পরিশোধের জন্য তাদের ভয়ভীতি দেখানোসহ নানাভাবে হয়রানী করছেন বেলাল মেম্বার।এখন নিরুপায় তারা।
একই রকমভাবে সুদের টাকা পরিশোধ না করায় হয়রানীর শিকার হচ্ছেন ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর,হরদাম, সাবগাড়ীসহ আশপাশের উপজেলার শতশত মানুষ। সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে ভুক্তভোগীরা হয়েছেন সর্বশান্ত। অনেকে আবার সম্মানের ভয়ে জমি, গরু-ছাগল বিক্রি করে কিংবা এনজিও থেকে ঋণতুলে বেলালের সুদে নেওয়া টাকা পরিশোধ করেছেন।
ভুক্তভোগী কয়েকজন ঋণগ্রহিতা জানান, মাস শেষে সুদের টাকা দিতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বৃদ্ধি পায়। টাকা দিতে না পারলে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে মারপিট করে সাদা ষ্ট্যাম্পে, চেক বইয়ে, ছবিতে সই করে নেয়। এমনকি গরু, ছাগল, বসতভিটা পর্যন্ত লিখে দিতে হয় সুদ ব্যবসায়ীর নামে।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, বেলাল মেম্বারের সুদে টাকার দাপটে এলাকার মানুষ ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। তাছাড়া সুদের টাকা গ্রহিতারা গরিব ও অসচেতন হওয়ার কারনে ভয়ে থানায় অভিযোগ করার সাহস পর্যন্ত পায়না। ফলে বছরের পর বছর দাপটের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন সুদের ব্যবসা। এদিকে চেক রেখে সুদে টাকা নিয়ে দিতে না পারায় কমপক্ষে ২০জন ঋণ গ্রহিতার বিরুদ্ধে ‘ চেক ডিসঅনার’ মামলা দায়ের করেছেন মেম্বার বেলাল হোসেন। এসব মামলার তদারকি করতে এখন আদালতে ঘুরছেন তিনি।
গ্রামের মানুষের সরলতার সুযোগে শতকরা ১০ থেকে ১২ টাকায় সুদে টাকা খাঁটান বেলাল মেম্বার। বিপদে পড়ে তার কাছ থেকে এ টাকা নিতে বাধ্য হয় গ্রামের মানুষ। এভাবে ৮ বছর ধরে সুদে টাকা খাটিয়ে এখন কোটিপতি বনে গেছেন বেলাল মেম্বার। সুদের টাকার দাপটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বেলাল মেম্বার। এমন অভিযোগ করেন, গ্রামের সাধারন মানুষ।
বিয়াঘাটের হরদমা গ্রামের বাসিন্দা ওই বিধবা রইজান বেওয়ার বলেন, ‘তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর দুই মেয়ে নিয়ে অথই পাথারে পড়েন তিনি। অনেক কষ্টে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়েটিও পড়ালেখা করছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয় সাংসদ মো. আব্দুল কুদ্দুস মেয়েটির পড়ালেখার খরচ বহন করছেন। কিন্তু বড় মেয়ের যৌতুকের জন্য বেলাল মেম্বারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা সুদের ওপর নিয়েছিলেন তিনি। এখন আসল টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন বেলাল মেম্বার। এই টাকা পরিশোধ না করায় তার বসতভিটা লেখে নেওয়াসহ থাকারঘরটি ভেঙ্গে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন বেলাল মেম্বার। মেম্বারের ভয়ভীতির কারনে তার জামাই এলাকা ছেড়েছেন। এখন নিরুপায় তিনি’।
বিয়াঘাট ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেনা এসব ভুক্তভোগীরা। এছাড়াও বিয়াঘাট ইউনিয়নের হরদমা গ্রামের আসাদ আলী ,মনোহার খাঁ,ইমাম ফরিদ শেখ ও আব্দুল কাদেরসহ আরো ২৫ ব্যক্তি বেলাল মেম্বারের সুদের ফাঁদে হয়েছেন সর্বশান্ত।
স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, বেলাল মেম্বার এলাকার দাপটশালী মানুষ। তার বিরুদ্ধে মান্নান নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ৮ থেকে ১০টি মামলা রয়েছে। জেলও খেটেছেন তিনি।
সুদের ব্যবস্যার ব্যাপারে বিয়াঘাট ইউপি সদস্য বেলাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বেলাল মেম্বার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি কোনো সুদের ব্যবস্যার সাথে জড়িত নাই। তবে, মানুষ এলাকার মানুষ বিপদে পড়লে আমার কাছে থেকে টাকা ধার নেয়। গ্রামের কতিপয় মানুষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমার নামে মামলা আছে। তবে, সেসব মামলায় আমি জামিনে আছি’।
বেলাল মেম্বারের সুদের ব্যবসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিয়াঘাট ইউপি চেয়ারম্যান মো.মোজাম্মেল হক বলেন, এ নিয়ে এলাকার কমপক্ষে ১০জন মানুষ তার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। বেলাল মেম্বার তাঁর পরিষদের মেম্বার হওয়ার কারনে সুদের ব্যবসা থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়েও কাজ হচ্ছে না। উপরন্ত সুদের ব্যবসা বন্ধ ও তাঁর বিরুদ্ধে আনা সন্ত্রাসী কান্ড বন্ধের প্রতিবাদ করায় তাঁকে জীবনাশের হুমকী দেওয়া হচ্ছে।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ এখন্ও অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তমাল হোসেন বলেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে সুদের ব্যবসা করবেন এটা সমর্থনযোগ্য নয়। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।