শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী উপজেলার সিঙ্গাবরুয়া ইউনিয়নের হারিয়াকুনা, বাবলাকুনা,কুমারগাতি ও চান্দাপাড়া এলাকাগুলো জেলার মধ্যে অন্যতম একটি অবহেলিত জনপথ। এই ৪গ্রামে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, মুসলিম ও আদিবাসীসহ প্রায় ১হাজার পরিবারের বসবাস। এসব এলাকায় জীবন যাত্রার মান একদম ভাল নেই। বনবিভাগের খাস জমিতে বা পাহাড়ের উচু-নিচু ঢালুতে সব্জি ও ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও আছে বন্যহাতির তান্ডব। প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ আসছে এসব এলাকার বাসিন্দারা। এখানে রয়েছে, বাবলাকুনা আদিবাসী হাইস্কুল ও প্রাইমারি স্কুল, মধ্য হারিয়াকুনায় গীর্জা ও প্রাইমারি স্কুল এবং উত্তর হারিয়াকুনায় আরেকটি মিশনারি স্কুল। পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, কর্ণঝুড়া বিজিবি ক্যাম্প থেকে উত্তর হারিয়াকুনা গ্রামের দুরত্ব পর্যন্ত প্রায় ৪কিঃমিঃ। এই ৪কিঃমিঃ সড়ক পাড়ি দিয়ে যে কোন ব্যক্তি উত্তর হারিয়াকুনা গ্রামে যেতে হলে তাকে কর্নঝুড়া নদী, চান্দাপাড়া ঝুড়া, দক্ষিন হারিয়াকুনা ঝুড়া,মধ্য হারিয়াকুনা ঝুড়া এবং উত্তর হারিয়াকুনায় ২টি ঝুড়া পাড় হয়েই ওই গ্রামে পৌঁছতে হবে। আর ঝুড়াতে যদি পাড়াহী ঢলের পানি থাকে এবং বৃষ্টি হয়, তাহলে বিজিবি ক্যাম্প থেকে উত্তর হারিয়াকুনা গ্রামে যাওয়া অনেকটা অসম্ভব। সামান্য বৃষ্টিপাতের ফলে ছিটেফুটা রাস্তাটুকুও হয়ে পড়ে কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল। এসব গ্রামের পাহাড়ী ঢল বা সামান্য বৃষ্টিপাত হলে কোমলমতি ছেলে মেয়েরা বিদ্যালয়ে আসতে বিড়ম্ভনার শিকার হয়। বিদ্যালয়ে আসতে গিয়ে অনেক সময় পিছলে গিয়ে জামা কাপড় নষ্ট করে ফেলে। এছাড়া এসব এলাকায় সরাসরি কোন যানবাহন চলাচল করতে না পারায় কৃষকদের কর্ষ্টার্জিত ফসলাদি বাজারজাত করতে হয় অনেক কষ্ট করে। এতে অর্থ অপচয়ের সাথে সাথে সময়েরও ক্ষতি হয়। জরুরী প্রয়োজনে কোন রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এছাড়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ দূর্গম রাস্তা চলাচল করতে গিয়ে অনেকেই আহতও হয়েছেন। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দু-ভাবেই। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৪০দিনের কর্মসৃজনের মাধ্যমে দায় সাড়া ভাবে ছিটেফুটা কাজ করা হয়। প্রতিটা নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা এসব এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসলেও নির্বাচনের পর তাদের আর কোন খোঁজ-খবর নেননা বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বিরেশ রিছিল, আলীসন চিরান, মিঠুন সাংমা, সজিনাথ চিরান, সতিশ মারাক, প্রফিশন মারাকসহ গ্রামবাসীরা দূর্গম এ সড়কটি দ্রুত সংস্কার করার দাবী জানিয়েছেন। এ রাস্তা গুলো সংস্কার হলে একদিকে বন্ধ হবে চুরাচালানি অন্যদিকে দ্রুত বদলে যাবে এ ৪গ্রামের দৃশ্যপট। এ ব্যাপারে সিঙ্গাবরুয়া ইউনিয়নের ৫নং ওর্য়াড়ের ইউপি সদস্য মো. আফুজল হক জানান, আমার পরিষদের অধীনে সাবেক ইউএনও স্যারের অনুমতিতে হাট বাজারের ১৫% টাকা থেকে আমি কর্ণঝুড়া নদী সংলগ্ন বাঁধে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার শতভাগ কাজ সম্পন্ন করি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করতে দেরী করায় পাহাড়ী ঢলে পুরো কাজটিই নদীর গর্ভে বিলীণ হয়ে যায়। আগের ইউএনও স্যার চলে যাওয়াতে পরবর্তী ইউএনও স্যার আমার সেই কাজের বিল আজও প্রদান করেননি।“সিঙ্গাবরুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক মজনু’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,“আমার পরিষদের ক্ষমতা সীমিত। এসব এলাকার রাস্তাঘাটগুলো সংস্কার করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন পাঠিয়েছি, মঞ্জুরী পেলেই কেবল সংস্কার করা সম্ভব।