পাবনার অসীম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন। পাবনায় শহীদ সাধন নামে সমাধিক পরিচিত। বর্তমান প্রজন্মের কাছে শহীদ সাধন নামটি বেশী পরিচিত হওয়ার কারন হলো, তাঁর নামে পাবনা শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শহীদ সাধন সংগীত মহাবিদ্যালয়। শহীদ সাধনের নাম পাবনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সবার উপরে স্থান পেয়েছে। পাবনায় প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ দুর্জয় পাবনা’র বুকে শহীদের তালিকায় প্রথম নামটি হলো, শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধনের নাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সেখানে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে শহীদ সাধনের নাম খোদাই করে লিপিবদ্ধ আছে। শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে পাবনা শহরে অতি পরিচিত ছিলেন । এই পরিচিতির প্রধান কারণ, তিনি ছিলেন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী।
পাবনা শহরের ঐতিহ্যবাহী রাধানগর মজুমদার একাডেমীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছিলেন, স্কাউট দলের সদস্য। স্কুল থেকে কলেজ এবং কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সকল ক্ষেত্রে ছিলেন জনপ্রিয় এবং গ্রহনযোগ্য। সুদর্শন, ভদ্র, শালীনতার পর্যায়ে যেমন ছিলেন শীর্ষে – তেমন ত্যাগে সংগ্রামে ছিলেন প্রথম। বহুমাত্রিক প্রতিভার এই গুণী মানুষটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে সবার প্রিয় ছিলেন। সকল দলের সকল মতের ছাত্র শিক্ষক তাঁকে পছন্দ করতেন। তিনি ১৯৬৬-৬৭ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। কলেজে বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় সংগীত, আবৃত্তি এবং চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আন্তঃ কলেজ সংগীত প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন সময়ে রেডিওতে সংগীত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন।শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আব্দুল হামিদ খান এবং মাতা মোছাঃ সুফিয়া খান। বাসা পাবনা শহরের কালাচাঁদপাড়ায়। জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী সাহেবের বাড়ী সংলগ্ন তালপুকুরের উত্তর পাড়ে তাঁদের বাড়ী। ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী সাহেবের পুত্র সাবেক মন্ত্রী মোঃ নাসিম, সাবেক মন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল, সাবেক এমপি মোঃ ইকবাল এবং সাবেক এমপি রফিকুল ইসলাম বকুল তাঁর সহপাঠী। শুধু সহপাঠী বললে অসম্পূর্ন হবে। তাঁরা ছিলেন বাল্যবন্ধু এবং রাজনৈতিক সহযোদ্ধা।
আর উনাদের রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, একই পাড়ায় অবস্থিত তরুন আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ আহমেদ রফিক। যিনি ১৯৭০ সালে সাঁথিয়া-বেড়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাঁচদিন পর নক্সালপন্থীরা ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন।শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধনকে তাঁর বাবার চাকুরীর কারনে পড়াশোনা শুরু হয় চট্টগ্রামে। সেখানকার পোর্ট ট্রাষ্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্র ছিলেন। এরপর পাবনা নিজ শহরে ফিরে এসে রাধানগর মজুমদার একাডেমীতে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে সেখান থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। সেখানেই তিনি ছাত্রলীগের সাথে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ভুট্টা আন্দোলন এবং ১৯৬৮-৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখেন। তিনি ঐ সময়ে একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং গণ-আন্দোলনে গনশিল্পী হিসেবে অসাধারণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালে প্রলয়কারী সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ে হাতিয়া ভোলা সহ সমুদ্র উপকূলে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরন করলে সারাদেশে ছাত্র সমাজ দুর্গত মানুষের পাশে দাড়ান। এমন একটি সময়ে শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন গলায় হারমোনিয়াম বেঁধে সামনে ব্যানার ঝুলিয়ে পাবনার রাজপথে নেমে আসেন। কালো কাপড়ের উপর সাদা হরফে লেখা – কাঁদো বাঙালী কাঁদো। আর শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন এর সাথে পাবনার শিল্পী সমাজ পথে পথে গন সংগীত পরিবেশন করে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।
সেদিন শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন এর কন্ঠে পরিবেশন হচ্ছিল,” ভিক্ষা দাও হে শহরবাসী – ভিক্ষা দাও হে মহৎ প্রান – বন্যার কবলে ডুবে গেল যারা, অসহায় মানুষকে করো হে দান। “শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন ১৯৬৭ সালে এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আই,এ ১৯৬৯ সালে বি,এ পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। জানা যায় সাবেক মন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল এবং তিনি একই হলে একই রুমে থাকতেন। উভয়ে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাবনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে ফজলুর রহমান পটল এর চাচা আটঘরিয়া এবং ঈশ্বরদী আসনের সংসদ সদস্য শহীদ এডভোকেট আমিন উদ্দিন সাহেবের নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তারা পাবনায় অবস্থান নেন। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনের পর পাবনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহন করেন। ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাড়া মহল্লায় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন, পাড়ায় পাড়ায় তরুণ যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষন প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। বিশেষ করে পাবনা জিলা স্কুল মাঠ, কাচারীপাড়া সাহারা ক্লাব, নয়নামতির অভিযান ক্লাব এবং রাধানগর মক্তব পাড়ায় অধিনায়ক ক্লাবের উদ্যোগে এসব প্রশিক্ষন দেওয়া হতো। ঐ সময়ে ২৩ মার্চ পাবনা টাউন হল এবং পাবনা পুলিশ লাইন মাঠে আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন দিবসে শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন এর নেতৃত্বে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে পাবনা পুলিশ লাইন মাঠে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার লালু এবং পাবনা টাউন হল মাঠে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা পাবনা অবস্থান নিয়ে নব নির্বাচিত এমপিএ এডভোকেট আমিন উদ্দিন, ডাঃ অমলেন্দু দাক্ষী, সাঈদ উদ্দিন তালুকদার সহ অসংখ্য লোককে গ্রেপ্তার ও হত্যা করে। পাবনার মুক্তিকামী জনতা ২৭ মার্চ গভীর রাত থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত প্রতিরোধ যুদ্ধ করে পাবনা শহর হানাদার মুক্ত করে। উক্ত প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন। প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে পাবনায় অবস্থানরত সমস্ত পাকিস্তানী সৈন্যদের হত্যা করে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত মুক্ত ছিল। এরপর পাকিস্তানী সৈন্যরা দ্বিতীয় দফায় নগরবাড়ী ঘাট হয়ে পাবনা প্রবেশের চেষ্টা করলে সেখানে কয়েকদিন যাবত প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে ১০ এপ্রিল পাকিস্তানী সৈন্যদের তীব্র আক্রমণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে। নগরবাড়ী ঘাটের প্রতিরোধ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটলে শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন নগরবাড়ী থেকে পাবনা শহরে এসে তার মা এবং ছোট ভাইকে নিয়ে আটঘরিয়া উপজেলার উজানগ্রামে তার এক আত্মীয় বাড়ী এসে আশ্রয় নেন। সেখানে সপ্তাহকাল অবস্থান করে ভারতের উদ্দেশ্য রওয়ানা হন। যাবার সময় তাঁর মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা হয়। মায়ের কাছে তাঁর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় হারমোনিয়ামটি তুলে দিয়ে বলেন, মা এটি যত্ন করে রেখো।
আমি যুদ্ধে যাচ্ছি – আমার জন্য দোয়া করো। তাঁর মা অশ্রসজল নয়নে ছেলেকে বিদায় জানান।শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন এপ্রিল মাসের ২০ তারিখের দিকে ভারতের নদীয়া জেলার কেচুয়াডাঙ্গা ট্রানজিট ক্যাম্পে হাজির হন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং শুরু হলে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুজিব বাহিনীর প্রথম ব্যাচে সিলেক্ট হন। যদিও সতীর্থ বন্ধুরা গোলাম সারোয়ার খান সাধনকে মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিংএ না যেয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করে অস্ত্র হাতে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই প্রসঙ্গে আরেকটি তথ্য যোগ করতে চাই, সেটা হলো সেই সময়ে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার লালু স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে যোগ দিয়েছিলেন। পাবনা থেকে মুজিব বাহিনীর প্রথম ব্যাচে সিলেক্ট হওয়া মুক্তিযোদ্ধারা হলেন, মোহাম্মদ ইকবাল, আব্দুর রাজ্জাক মুকুল, জহুরুল ইসলাম বিশু, গোলাম সারোয়ার খান সাধন,ফজলুল হক মন্টু সহ প্রমুখ। উল্লেখ্য রফিকুল ইসলাম বকুল প্রথম ব্যাচে ট্রেনিং এ যাবার কথা থাকলেও বিশেষ একটি কারনে যাওয়া হয় না। এরপর মুজিব বাহিনীর প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ ভারতের উত্তর প্রদেশের দেরাদুনের তান্দুয়া সামরিক ঘাটিতে শুরু হয়। দুই মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহন শেষ করে জুলাই মাসের শেষে মুজিব বাহিনীর বিভাগীয় সদর দপ্তর কলকাতার সন্নিকটে ব্যারাকপুর আসেন। উল্লেখ্য ব্যারাকপুরে মুজিব বাহিনীর বিভাগীয় অধিনায়ক ছিলেন সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আগষ্ট মাসে পাবনা জেলা মুজিব বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ ইকবালের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর প্রথম গ্রুপ সুজানগর উপজেলায় অবস্থান গ্রহন করেন। সেখান থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট অপারেশন করতে থাকে। সেই সময়ে ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় চলাচল করা কষ্টসাধ্য ছিল।
গাজনার বিল অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা অনেকটা নিজেদের নিরাপদ মনে করছিলেন। তাদের ধারনা ছিল পাকিস্তানি সৈন্যরা বন্যা কবলিত এলাকায় আসবেন না। ঠিক এমনি একটি সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সাগরকান্দি এলাকায় কয়েকটি গ্রামে আশ্রয় গ্রহন করেন। বিধিবাম হলো মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দাতা জনৈক ব্যক্তি গোপনে পাশ্ববর্তী নগরবাড়ী ঘাটে অবস্থান কারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে খবর দেন, তাদের এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছেন। ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সাল। গভীর রাতে পাকিস্তানী সৈন্যরা সাগরকান্দি এলাকা ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে প্রথমে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। পরে বিছিন্নভাবে অবস্থানে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা পানির মধ্যে দিয়ে পালিয়ে যেতে পারলেও অস্ত্র সহ ধরা পড়ে যায় পাঁচজন। এরা হলেন, শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন, আলমগীর কবীর স্বপন, সাচ্চু, জাহাঙ্গীর আলম সেলিম এবং ফেরদৌস আলম গেদামনি। এদের মধ্যে সাধন, স্বপন এবং সাচ্চু অস্ত্রসহ আটক হওয়ায় তাদের তিনজনকে আলাদা করা হয়। বাকী দুইজনের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম সেলিম নিজেকে খ্রীষ্টান ধর্মের মানুষ পরিচয় দিয়ে নির্ভুল উর্দুতে কথা বলার কারনে এবং ফেরদৌস আলম গেদামনির বয়স কম হওয়ার কারণে তাদের আলাদা করা হয়। এরপর আটক পাঁচজনকে নগরবাড়ী ক্যাম্পে আনা হয়।
সেখানে আনার পর সেলিম এবং গেদামনিকে নিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা পাবনা রওয়ানা হয়। বাঁকী তিনজন অস্ত্রসহ আটক গোলাম সারোয়ার খান সাধন, আলমগীর কবীর স্বপন এবং সাচ্চুকে নগরবাড়ী ফেরীঘাটের টিকিট কাউন্টারে রাখা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ঐদিন পাবনায় আনার পথে গাড়ী থেকে লাফ দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম সেলিম পালিয়ে যায়। পরে জাহাঙ্গীর আলম সেলিম ২৭ নভেম্বর হেমায়েতপুর ইউনিয়নের সানিকদিয়ারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও নক্সাল বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। পাবনায় নিয়ে আসা কিশোর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌস আলম গেদামনিকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায় শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধন, আলমগীর কবীর স্বপন এবং সাচ্চুকে কয়েকদিন ধরে ভয়াবহ নির্যাতন করে ১০ সেপ্টেম্বর তাদের হত্যা করে যমুনা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের অসীম সাহসী বীর শহীদ গোলাম সারোয়ার খান সাধনের স্মৃতিতে অমর করে রাখার জন্য স্বাধীনতার পরে পাবনা শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় শহীদ সাধন সংগীত মহাবিদ্যালয়। শহীদ সাধনের অসহায় পরিবার পাবনার শালগাড়িয়ায় একটি পরিত্যক্ত বাড়ী পায়। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর পাবনা পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক তাঁর নামে নামকরণ করা হয়।
ইতিহাসের বেদনাদায়ক অধ্যায় হলো, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর শহীদ সাধন সংগীত মহাবিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। যা ২৩ বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৯৮ সালে আবার চালু হয়। যাহা অদ্যাবধি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে।
শহীদ সাধন সংগীত মহাবিদ্যালয়ের নিজস্ব কোন জমি নাই। এমনকি নিজস্ব ভবন নাই। বলা যায় সেটা যেন দেখারও কেউ নাই। স্বাধীনতার পরে শহীদ সাধনের পরিবার যে পরিত্যক্ত বাড়ীতে উঠেছিলেন – সেই বাড়ী থেকেও উচ্ছেদ করা হয়। আর শহীদ সাধনের নামে যে সড়ক নামকরণ করা হয়েছিল সে সড়ক এখন অন্যের নামে নামকরণ করা হয়েছে। শহীদ সাধনের নাম শুধু শীর্ষে আছে বিশ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ দুর্জয় পাবনায়। সেখানে শহীদ হিসেবে প্রথমে তাঁর নাম আছে। যা কেউ দেখে – কেউ দেখেনা। এক সময়ের সুপরিচিত গোলাম সারোয়ার খান সাধন আজ ইতিহাসে এক বিস্মৃতির নাম। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী এই বীরকে এখন আর কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবে স্মরণ করেনা। প্রতিবছর ১০ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী নীরবে পার হয় আর বন্ধু, সহযোদ্ধা এবং আমরা সবাই নীরব থাকি। ( সমাপ্ত) লেখক পরিচিতি -আমিরুল ইসলাম রাঙা রাধানগর মজুমদার পাড়া পাবনা। ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০