ইয়ানূর রহমান : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সরকারিভাবে সরবরাহ খাবারের তালিকায় উল্লেখ রয়েছে প্রত্যেক রোগী দুপুরে ২০০ গ্রাম চালের ভাত, ৮০ গ্রাম মাছ অথবা মুরগীর মাংস ও ডাল পাবেন ২০ গ্রাম। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দুপুরের খাবারে প্রতি রোগীকে দেয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ গ্রাম মাছ অথবা মুরগীর এক টুকরো মাংস। আর ভাত জোর হলেও দেয়া হয় ৮০ থেকে ৯০ গ্রাম। এছাড়া ডালের পরিমান খুবই কম। এমনটা জানিয়েছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, দুপুরের খাবার ছাড়াও সকালের নাস্তা ও রাতের খাবারে বিতরণেও করা হচ্ছে অনিয়ম। সিভিডি রোগীদের প্রতিদিন ১৪৫ গ্রাম দুধ ও ২৫ গ্রাম চিনি দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও ঠিকমতো পাচ্ছেন না।
সরকারি এই হাসপাতালে রোগীদের মাঝে খাবার বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অনিয়মের বিষয়ে হাসপাতাল জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জোরালো আলোচনা, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের পরও খাবার সরবরাহে অনিয়ম থেমে থাকেনি। দুই বেলায় সামান্য পরিমাণে পোল্ট্রি মুরগীর মাংস নতুবা ছোট সাইজের এক টুকরো মাছ দিয়ে নামমাত্র খাবার বিতরণ করা হতো। সকালের নাস্তায় ১ টি কলা, ছোট সাইজের ডিম ও পাউরুটি দেয়া হতো রোগীদের। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য আলাদা খাবার দেয়ার নিয়ম থাকলেও মানা হয়নি। সকল রোগীকে একই খাবার বিতরণ করা হয়। রোগীদের পরিমাণে কম ও নিম্নমানের খাবার দেয়ার বিষয়টি ফাঁস হওয়ার ভয়ে ওয়ার্ডে ছিলোনা খাবারের পরিমান উল্লেখ করা কোন তালিকা ৷
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় এই হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক পদে যোগদানের পর খাবারের অনিয়ম বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। রোগীদের সঠিক পরিমাণে উন্নত খাবার বিতরণ নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক খাবাবের নতুন তালিকা তৈরি করেন। ২৯ জানুয়ারি প্রতিটি ওয়ার্ডে খাবারের তালিকা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে ১ ও ২ নম্বর খাদ্য প্রাপ্ত রোগীদের প্রতিদিন সকালের নাস্তায় ১০০ গ্রামের পাউরুটি, ২টি কলা ও ১টি ডিম ও ৬ নম্বর খাদ্য প্রাপ্ত রোগীদের (ডায়াবেটিকস) ৩টি আটার রুটি ও ২টি ডিম।
১, ২ ও ৬ খাদ্য প্রাপ্ত রোগীদের দুপুরের খাবারে থাকবে ২০০ গ্রাম ভাত, ৮০ গ্রাম মাছ অথবা পোল্ট্রি মুরগীর মাংস, ১ও ২ খাদ্য প্রাপ্ত রোগীদের রাতের খাবার ২শ গ্রাম ভাত, ১টি ডিম ও ১০০ গ্রাম সবজি ও ৬ নম্বর খাদ্য প্রাপ্ত রোগীদের জন্য (ডায়াবেটিকস) ৩টি আটার রুটি, ১শ গ্রাম সবজি মাছ অথবা মুরগীর মাংস ৩৬ গ্রাম। রোগী ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী খাবার দেয়া হচ্ছে না।
সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, বুধবার দুপুরের খাবারে ছিলো ১ টুকরা মাছ। ওজন হবে ১৫ থেকে ২০ গ্রাম। ভাত ৯০ থেকে ১০০ গ্রাম। আর ডাউলের পরিমান খুবই কম। তাও পানির মতো পাতলা।
তারা আরো জানান, সকালের নাস্তা ও রাতের খাবারেও করা হয় নয় ছয়। আনুমানিক ১শ গ্রামের রুটি, ১টি সাগর কলা ও ১টি ডিম দেয়া হয়। রাতের খাবারে মাছ অথবা মাংস দেয়া হলেও পরিমাণে খুবই কম। অধিকাংশ দিন সবজি দেয়া হয়না। আর ৮০ থেকে ৯০ গ্রামের চালের ভাত প্লেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডে সিভিডি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন একজন রোগীর স্বজন জানান, তার রোগী তিন দিন আগে ভর্তি হয়েছেন। রোগীর খাবারের জন্য একদিনও দুধ চিনি দেয়া হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিসিন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত একজন সেবিকা জানান, রোগীদের ঠিকমতো দুধ চিনি দেয়া হয়না।
খুব কম রোগীরা এগুলো পায়। কিন্তু কিছু বলার নেই। সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের আটার রুটি দেয় না। প্যাকেট রুটি দিয়ে চালিয়ে দেন খাদ্য সরবরাহকারীরা।
এই বিষয়ে কথা হলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, খাবার সরবরাহে অনিয়ম ঠেকাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবরই সোচ্চার। বিগত দিনে অনেক কড়াকড়ি আরোপের মধ্য দিয়ে খাবার সরবাহে অনিয়ম রোধ করা হয়েছিলো। বর্তমানে রোগীদের পরিমাণে কম ও নিম্নমানের খাবার দেয়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি।
অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে খাবার পরিমানের তালিকা ঝুলানো আছে। সেই অনুযায়ী বিতরণকারীদের কাছ থেকে যেনো ন্যায্যটা আদায় করে নেন। আরএমও আরিফ আহমেদ জানান, খাবার সরবরাহে থাকা সঠিক পরিমাণে খাবার বিতরণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। যদি তারা না মানে অবশ্যই জবাবদিহিতা করতে হবে।