একদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অন্যদিকে চাষযোগ্য জমির অভাব। যার ফলে চীন দ্রুত ভয়ংকর খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে যে পরিমাণ আবাদযোগ্য জমির রয়েছে, তার মাত্র সাত শতাংশ চীনের অধীনে। আর তাদের নাগরিকদের সংখ্যা হলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। তারপরও দেশটি এই নাগরিকদের খাদ্য চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে। নগরায়ন ও শিল্পায়নের জন্য চীন ১৯৪৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আবাদযোগ্য জমিটির এক পঞ্চমাংশ হারিয়েছে। বর্তমানে ভালোভাবে চাষ করা যায় এমন জমির পরিমাণ মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রয়েছে।
চীনের খাদ্য সরবরাহের সঙ্গে চাহিদার ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বের বড় আমদানিকারক দেশ হিসেবে চীনের বড় সমস্যা হলো করোনা মহামারির কারণে অধিকাংশ দেশ খাদ্য পণ্য রফতানি কমিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত ও ভিয়েতনাম চাল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি বছরের জুলাইয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য পণ্য মজুত করতে চেয়েছিল। তবে ব্রাজিল, রাশিয়া, কানাডা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া রফতানি কমিয়ে দেওয়া দেশটি ব্যাপক সমস্যায় পড়ে।
চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চীন জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭৪.৫১ মিলিয়ন টন খাদ্য শস্য আমদানি করেছে। যা এর আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় ২২.৭ শতাংশ বেশি। তাদের হিসেব মতে, ২০৩০ সাল নাগাদ তাদের আরও অতিরিক্ত ১০০ টন খাদ্য শস্য আমদানি করতে হবে। করোনা মহামারি মধ্যে দেশটিতে সব ধরনের খাদ্য পণ্যের দাম কমপক্ষে ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। আর শূকরের মাংসের দাম ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
এদিকে, সম্প্রতি চীনের দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক বন্যা হয়। এতে বিপুল কৃষি খামার ভেসে গিয়ে নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার টন খাদ্যশস্য। এতে দেশটি ২০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির মুখে পড়ে।
সম্প্রতি এক জরিপে উঠে এসেছে, চীনের জনগণ প্রচুর খাদ্য নষ্ট করে। দেশটির একজন নাগরিক তার প্রতি বেলার মিলে কমপক্ষে ৯৩ গ্রাম খাবার নষ্ট করে। আর বছরে তারা যে পরিমাণ খাদ্য নষ্ট করে তা দিয়ে ৩০ থেকে ৫০ মিলিয়ন লোকের এক বছর খাওয়ানো সম্ভব বলে জানানো হয়েছে। ২০১৫ সালেই দেশটির এক কোটি ১০ থেকে ৮০ লাখ টন খাবার নষ্ট করা হয়েছে। চীনের খাদ্য মজুত করার পরিসংখ্যান দেখেই স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে দেশটি খাদ্য সংকটে রয়েছে চীন।
চীনের খাদ্য সংকটের বিষয়টি প্রথম নজরে আসে ১১ আগস্ট চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর একটি বক্তব্যে। তিনি বলেন, যে পরিমাণ খাবার নষ্ট হচ্ছে তা ভীতিকর এবং পীড়াদায়ক। এরপরই চীনে শুরু হয়েছে ‘ক্লিন প্লেট ক্যাম্পেইন।’ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বার্তার পর উহানের ক্যাটারিং ইন্ড্রাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন শহরের রেস্টুরেন্টগুলোকে খাবার সরবরাহ সীমিত করার আহ্বান জানিয়েছে। বলা হয়েছে কোনো গ্রুপে যত মানুষ খাবারের আদেশ দেবে তার চেয়ে অন্তত এক পদের খাবার কম সরবরাহ করতে হবে।
করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ হিসেবে চীন খাদ্য পণ্য সরবরাহে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। পাশাপাশি তারা খাদ্য পণ্য নষ্টের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। চীন সরকাররের ধারণা হয়তো এতে আগামী দিনে দেশটির খাদ্য সংকট মোকাবেলায় তারা সক্ষম হবে।