কর্মসংস্থানের জন্য জনশক্তি প্রেরণের ক্ষেত্রে দেশে লালমনিরহাট তৃতীয়। শুধু তাই নয়, দারিদ্রতার দিক থেকেও লালমনিরহাটের অবস্থান তৃতীয়। অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবদীপ্ত লালমনিরহাট। সম্পূর্ণ মুক্তাঞ্চলে ৬নং সেক্টর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জিত হয়েছিল। জেলায় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না উঠা, উত্তরাঞ্চলের প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায় বৈষম্যমূলক আরচণ। উত্তরাঞ্চলের জন্য উন্নয়ন কর্ম পরিকল্পনা, প্রকল্প গ্রহণ, আর্থিক অনুদান প্রদানে অনিহা। সংবিধানে ১৯(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
মাত্র ১শত ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিস্তা নদীর উপর সড়ক সেতু নির্মাণের জন্য কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে ২৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অথচ এই সময়ে দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এখানে উন্নয়নের গতি খুব শ্লো।
তাছাড়া রয়েছে নানারূপ দুর্নীতি, দূর্বৃত্তায়ন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তব্যে অবহেলা, প্রভূত্ব, আখের গোছানোর প্রতিযোগিতা, সময়ের অপচয় করা, কোনরূপ ঝামেলায় না গিয়ে সময় কাটিয়ে দিয়ে পদোন্নতি গ্রহণের হীন মানষিকতা। ব্যুরো অব ম্যান পাওয়ার এমপ্লমেন্ট এন্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) এর তথ্য মতে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একমাত্র কুমিল্লা জেলা থেকে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭৭৩ জন বৈদেশিক র্কসংস্থানের জন্য বিদেশে গেছে। অপরদিকে লালমনিরহাট জেলা থেকে বিদেশে গিয়েছে মাত্র ৭ হাজার ১৬৬ জন। পঞ্চগড় থেকে ৫ হাজার ৪১৭ জন।
উত্তরাঞ্চলের মানুষ এমনিতেই বাহিরে যেতে চায় না। তাদের বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষন ও আর্থিক সংগতি নেই। বিদেশে অবস্থানরত নিকট আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী, শুভানুধ্যায়ীও নেই। তারা সর্বদাই আস্থার সংকটে ভোগেন।
অনেকে আবার দালালদের খপ্পরে পড়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেও প্রতারিত হয়েছে। বিদেশে গিয়ে আন-ডকুমেনটেন্ড হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছে। লালমনিরহাট জেলায় কোন লাইসেন্সধারী রিক্রটিং এজেন্ট নেই। দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলের মানুষের অর্থাৎ যুব ও যুব মহিলাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তারা ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পায় না। তাই রংপুরাঞ্চলের মানুষ যাতে আস্থা অর্জনের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে অর্থ উপার্জন করে দারিদ্রতা জয় করতে পারে- সরকারকে সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।