পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ড্রাইভারের অসহযোগিতার কারণে অ্যাম্বুলেন্সের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে পাঁচগুণ বেশি ভাড়ায় মাইক্রোবাসে করে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা ও রাজশাহী নিতে হচ্ছে স্বজনদের। অনেক সময় দীর্ঘক্ষন যানবাহনের অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকতে হয় রুগীকে। দীর্ঘদিন ধরে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় শনিবার রাতে ৯৯৯ কল করেও অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পায়নি রোগীর স্বজনরা। এনিয়ে রোগীর স্বজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক রোগীর স্বজনদের অভিযোগে, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার রবিউল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরী করেন। তিনি হাসপাতালের পাশের পৌর শহরের সরদার পাড়া মহল্লার স্থায়ী বাসিন্দা। তাই তিনি অধিকাংশ সময় অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে অথবা হাসপাতালে রেখে বিশ্রামে থাকেন। বিশ্রামে থাকাকালীন সময় তিনি সরকারি হাসপাতালে টাঙ্গানো জরুরি সেবার জন্য তার মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে রাখেন। তবে তার একটি বিশেষ মোবাইল নম্বর আছে। জরুরী প্রয়োজনে বিশেষ ব্যক্তিরা ওই মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে তাকে ডেকে সেবা নেন। এছাড়া অসহায় ও দরিদ্র রোগীকে পরিবহন না করতে তিনি নানা অজুহাত দেখান বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অথচ সবসময় ডিউটিতে প্রস্তুত থাকার জন্য বছরে লক্ষাধিক টাকা ওভারটাইম পান অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার। এ অবস্থায় সর্বশেষ শনিবার রাত আটটার দিকে উপজেলার মুন্ডুতোষ ইউনিয়নের গজারমারা গ্রামের রিয়া খাতুন (১৪) নামে গলায় মারাত্মক আঘাত পাওয়া এক মুমূর্ষ রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে স্বজনরা। এসময় দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম ওই রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে দ্রুত পাবনা সদর হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালে এম্বুলেন্স ও ড্রাইভারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর প্রায় আধাঘণ্টা ধরে রোগীর স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার রবিউল ইসলামের সরকারি মোবাইল ফোন নাম্বারে বারবার কল করেও বন্ধ পান । পরে বাধ্য হয়ে তারা ৯৯৯ এ কল করেন। সেখানকার কর্তৃপক্ষ ওই ড্রাইভারের সরকারি ও ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার রোগীর স্বজনদের দেন। কিন্তু সেই দুটি মোবাইল নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যায়। এনিয়ে দীর্ঘক্ষন হাসপাতাল ভবনের সামনে রোগীর স্বজনরা কর্মচারীদের সাথে হট্টগোল করেন। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খানমের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা যায়নি। পরবর্তীতে অনেক খোঁজাখুঁজি করে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রোগীকে একটি সিএনজি অটোরিক্সায় পাবনা নিয়ে যাওয়া হয়। রিয়া খাতুনের নিকট আত্মীয় সাজেদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, মুমূর্ষ অবস্থায় রুগীকে অক্সিজেন দিয়ে পাবনা নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানান্তর করেন স্থানীয় চিকিৎসক। কিন্তু আধা ঘন্টা ধরে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি ৯৯৯ কল করেও অ্যাম্বুলেন্স এবং তার ড্রাইভারকে পাওয়া যায়নি। এ সময়ে রোগীর সাথে থাকা আরেক ব্যক্তি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে ফোন করলে ড্রাইভারে অসুস্থতার কথা বলেন। কিন্তু হাসপাতাল এবং ড্রাইভারের বাসায় গিয়েও অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। সম্ভবত ড্রাইভার অ্যাম্বুলেন্সে কোনো ক্লিনিকের রোগী নিয়ে কোথাও যেতে পারেন। তাই কোথাও এম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অ্যাম্বুলেন্স এবং ড্রাইভার কোথায় আছেন তা আমাদের জানা নেই। তবে রোগীর অবস্থা মুমূর্ষ হওয়ার কারণে জরুরি ভিত্তিতে পাবনা নেয়ার প্রয়োজন ছিল। অনেক সময় অসুস্থতা এবং অতিরিক্ত চাপের কারণে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার রবিউল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খানম বলেন, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার অসুস্থতার কারণে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। তাই তিনি শনিবার বিকাল থেকে কোনো রোগীকে নিয়ে বাইরে যেতে পারছেন না। তবে ড্রাইভার রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রায়ই এমন অভিযোগ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।