। আমিরুল ইসলাম রাঙা ।
পাবনায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম। স্বাধীনতা উত্তর পাবনার রাজনৈতিক অঙ্গনে এক আলোচিত নাম। বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম পাবনার এক আলোকিত পরিবারের সন্তান। তাঁর ভাই শহীদ আহমেদ রফিক ১৯৭০ সালে নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য। নির্বাচনে জয়লাভের পাঁচদিন পর পাবনা শহরে নক্সালপন্থীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তাঁরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চার ভাই সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম পাবনা শহরের দক্ষিণ রাঘবপুর মহল্লায় ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কে এম হাতেম আলী ছিলেন জেলা শিক্ষা অফিসার। মাতা হাসিনা বানু গৃহিণী। সাত ভাই এবং সাত বোনের মধ্যে আহমেদ করিম ছিলেন চতুর্থ সন্তান। বড় ভাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ রশীদ, মেজ ভাই অবসরপ্রাপ্ত পোস্টমাষ্টার জেনারেল বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ বশীর, তৃতীয় ভাই শহীদ আহমেদ রফিক, ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আহমেদ ফারুক, ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ শফিক এবং কনিষ্ঠ ভাই আহমেদ আব্দুর রহমান বাচ্চু।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিমের নানা পাবনা শহরের শালগাড়ীয়া মহল্লার প্রখ্যাত আইনজীবী এডভোকেট আজাহার আলী কাদেরী। যিনি অবিভক্ত ভারত বর্ষের সংসদ সদস্য ছিলেন। মামারা হলেন, আনোয়ার আলী কাদেরী, ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভিসি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাজহার আলী কাদেরী, পাবনা বার সমিতির পাঁচবার নির্বাচিত সাবেক সভাপতি এডভোকেট জহির আলী কাদেরী এবং ছোট মামা পাবনায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম আলী কাদেরী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম ছোটবেলা থেকে খুব মেধাবী ছিলেন। তিনি পাবনা জিলা স্কুল এবং পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশুনা করেছেন। তিনি ১৯৬৫ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাশ করেন। সময় এবং বয়সের কারনে তৎকালীন পাবনার কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনৈতিক সংগঠকরা ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ ও বাল্যবন্ধু। পাবনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রধান যোদ্ধারা বিশেষ করে মোঃ ইকবাল, রফিকুল ইসলাম বকুল, বেবী ইসলাম, মখলেছুর রহমান মুকুল, সাঈদ আখতার ডিডু প্রমুখেরা ছিলেন স্কুলের সহপাঠী এবং রনাঙ্গনের সহযোদ্ধা। তাঁর সহপাঠী ছিলেন সাবেক মন্ত্রী মোঃ নাসিম।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম স্বাধীনতার আগে থেকে ছাত্রলীগ সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা ১১ দফার দাবীতে রাজপথে আন্দোলন করেছেন। ১৯৬৭ সালে পাবনায় সংগঠিত ভুট্টা আন্দোলনে অংশ নেন। উল্লেখ্য উক্ত ভুট্টা আন্দোলনে তাঁর ভাই আহমেদ রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক ভাবে আহত এবং গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। আহমেদ করিম ১৯৬৮-৬৯ এর গণ-আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ এর জাতীয় নির্বাচনে তাঁর ভাই আহমেদ রফিক সাঁথিয়া-বেড়া আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হলে সেখানে প্রচার এবং প্রচারনায় অংশ নেন। ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আহমেদ রফিক বিপুল ভোটে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। উক্ত নির্বাচনে জয়লাভের পাঁচদিন পর ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর পাবনা শহরে তার বাড়ির সামনে নক্সালপন্থীরা ছুরিকাঘাতে আহমেদ রফিককে হত্যা করে। এই হত্যাকান্ডের পর পাবনায় নক্সালদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এই হত্যাকান্ডের পর ২৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাবনা আসেন। তিনি শহীদ আহমেদ রফিকের বাড়িতে এসে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এরপর আরিফপুর কবরস্থানে গিয়ে শহীদ আহমেদ রফিকের কবর জিয়ারত করেন। বিকালে পাবনা পুলিশ লাইন মাঠে শোক সভায় বক্তব্য দেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সৈন্যরা পাবনা শহর দখল নেন। ২৬ মার্চ পাবনা শহর থেকে পাকিস্তান আর্মিরা গ্রেপ্তার করে আটঘরিয়া-ঈশ্বরদীর নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এডভোকেট আমিন উদ্দিন, জেলা ভাসানী ন্যাপের সভাপতি ডাঃ অমলেন্দু দাক্ষী, মটর ব্যবসায়ী সাঈদ উদ্দিন তালুকদার সহ অর্ধশতাধিক নীরিহ মানুষকে। পাকিস্তান আর্মিরা উল্লেখিত ব্যক্তিদের নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে। এদিকে ২৭ মার্চ রাত থেকে পাবনার সর্বস্তরের জনতা পাকিস্তান আর্মিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। ২৮ এবং ২৯ মার্চ দুদিন ব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধে পাবনায় অবস্থানরত সমস্ত পাকিস্তান আর্মিকে হত্যা করে পাবনা মুক্ত করা হয়। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পাবনা শহর হানাদার মুক্ত ছিল। ১০ এপ্রিল পাকিস্তান আর্মিরা নগরবাড়ী ঘাট হয়ে পুনরায় পাবনা শহরে প্রবেশ করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম ২৭ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল নগরবাড়ী ঘাটের প্রতিরোধ যুদ্ধ পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেন। পাকিস্তানী সৈন্যরা দ্বিতীয় দফা পাবনা প্রবেশ করলে আহমেদ করিম সহ তাঁরা চার ভাই ভারতে চলে যান। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের উচ্চতর প্রশিক্ষন গ্রহনের কার্যক্রম শুরু হলে আহমেদ করিম এবং তাঁর ছোট ভাই আহমেদ শফিক মুজিব বাহিনীর প্রথম গ্রুপে সিলেক্ট হন। উল্লেখ্য মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষনের জন্য পাবনা থেকে দুইটি গ্রুপ করে এক গ্রুপ মোঃ ইকবাল, আব্দুর রাজ্জাক মুকুল, জহুরুল ইসলাম বিশু প্রমুখকে দেরাদুন এবং অন্য গ্রুপ বেবী ইসলাম, আহমেদ করিম, আহমেদ শফিক, হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখকে আসাম রাজ্যের হাফলং প্রশিক্ষন শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আহমেদ করিমের বাঁকী দুই ভাই আহমেদ বশীর এবং ডাঃ আহমেদ ফারুক নদীয়া জেলার কেচুয়াডাঙ্গা ট্রানজিট ক্যাম্পে সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম আসামের হাফলং এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৪৫ দিনব্যাপী সশস্ত্র প্রশিক্ষন সম্পন্ন করে মুজিব বাহিনীর দক্ষিণ অঞ্চলের বিভাগীয় সদর দপ্তর ব্যারাকপুর আসেন। সেখান থেকে বিভাগীয় অধিনায়ক তোফায়েল আহমেদের নির্দেশে আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তাঁরা পাবনা জেলার সুজানগর এলাকায় মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক মোঃ ইকবালের অধীনে সেখানে অবস্থান নেন। সেই সময়ে স্মরণ কালের মধ্যে ভয়াবহ বন্যা কবলিত ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিমের জন্য সাঁথিয়া এলাকা ঠিক করা হয়। গ্রুপের অধিনায়ক করা জাহাঙ্গীর আলম সেলিম ( মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ) কে। চারিদিকে ভয়াবহ বন্যার কারণে সুজানগরের গাজনা বিল এলাকায় তাঁরা সেল্টার নেয়। সেখান থেকে আশেপাশের মধ্যে অনেকগুলি অপারেশনে অংশ নেন। এরমধ্যে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে সুজানগরের সাগরকান্দি এলাকায় এক বাড়িতে আশ্রয় থাকাকালীন পাকিস্তান আর্মি গোপন সংবাদ পেয়ে ঐ গ্রাম ঘিরে ফেলে। সেখান থেকে পাকিস্তান আর্মি গ্রুপ লিডার জাহাঙ্গীর আলম সেলিম, তাঁর আপন ছোট ভাই স্বপন ( শহীদ) গোলাম সরওয়ার সাধন ( শহীদ), সাচ্চু ( শহীদ) এবং গেদামনিকে ধরে ফেলে। অল্পের জন্যে রক্ষা পান আহমেদ করিম সহ অন্যরা।
এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম সুজানগর সহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অপারেশনে অংশ নেন। এরমধ্যে সুজানগর থানা আক্রমণ ছিল স্মরণকালের বড় যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তাঁর সহযোদ্ধারা ছিলেন, মোঃ ইকবাল, রফিকুল ইসলাম বকুল, জহুরুল ইসলাম বিশু, ফজলুল হক মন্টু, মকবুল হোসেন সন্টু সহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। আহমেদ করিম সম্পর্কে সহযোদ্ধাদের বক্তব্য তাঁর মত সাহসী যোদ্ধা দলে খুব কম ছিল। সে ছিল সৎ, মেধাবী এবং চৌকস। আপাদমস্তক ছিল যোদ্ধা এবং তিনি ছিলেন খাঁটি দেশপ্রেমিক। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিমের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নাম্বার – ১৬৯ এবং সার্টিফিকেট নাম্বার ৪৬৮০৭.
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা অর্জন করলেও বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিমের যুদ্ধ আর শেষ হয়না। ঠিক এমনি একটি সময়ে এই বীরের সাহচর্য পেলাম। ১৯৭২ এর ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে আমার সাথে প্রথম পরিচয় হলো । তারপরে আন্তরিকতা সেখান থেকে ঘনিষ্ঠতা। আমি আর আব্দুল হাই তপন পাবনা থেকে প্রকাশ করতাম সাপ্তাহিক ইছামতি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম এর বাসার সামনের বাড়ী আব্দুল হাই তপনের। তপন সাহেব তখন পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের জিএস। উনি আমাদের ডেকে আনেন একটি বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য। সেটা হলো উনার মেজ ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ বশীর পাবনা থেকে মেহনতি কন্ঠ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করবেন। সেই বিষয়ে প্রাথমিক ধারনা এবং সহযোগিতা কামনা করেন। আমরা সানন্দে সহযোগিতার আশ্বাস দিলাম। এরপর শুরু হলো তাঁদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত। সেখান থেকে ক্রমেই পরিবারের সবার সাথে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেতে থাকলো। বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ বশীর জাতীয় কৃষক লীগের পাবনা জেলা সভাপতি হয়েছিলেন । আর সেই সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম আমাদের নিয়ে বিপ্লবের জ্বাল বুনতে লাগলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিমের ভাষায় মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়নি। পাকিস্তানী সৈন্যরা বিতাড়িত হয়েছে। তাদের দোসর দালাল এবং সমাজের শত্রুরা এখনো জীবিত রয়ে গেছে। আমাদের শ্রেনী সংগ্রাম করতে হবে। সমাজের শত্রুদের নির্মুল করতে হবে। যেটা হলো রাজনীতির ভাষায় সামাজিক বিপ্লব। এরপর আমাদের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করতে হবে। এমন চিন্তা করতে করতেই একদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভক্তি আসলো। ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রপন্থী হলো। স্বাধীনতা প্রাপ্তির দশ মাসের মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল – জাসদ গঠন হলো। ৩/৪ মাসের মধ্যে এই স্বাধীনতা যোদ্ধাদের ভয়াবহ পরিনতি হলো। সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে জেলখানায় নিক্ষেপ হলো। বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম এবং তাঁর অনুসারী হয়ে আমাদের মত অসংখ্য যোদ্ধাকে জেলখানায় যেতে হয়েছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বাংলাদেশের রাজনীতির এক বড় ধরনের পরিবর্তন হলো। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলেন। রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন হলো। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো। অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হলোনা বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিমের জীবন। কথিত তথ্যমতে জানা যায় উনি ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত গণবাহিনীর সাথে সম্পর্ক করে টাঙ্গাইল এবং ঢাকা অঞ্চলে আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর ১৯৮২ সালে এরশাদ সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে উনি পাবনা ফিরে আসেন এবং প্রকাশ্যে চলাফেরা শুরু করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম ১৯৮২ সালে ৭ মে শহরের কফিল উদ্দিন পাড়ায় রায়হানা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর সহধর্মিণী প্রথমে শহীদ আহমেদ রফিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন পরে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী কলেজে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান আহমেদ রায়হান তরু পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম স্বাভাবিক জীবন যাপন এবং ইটভাটার ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে রাজনীতিতে জড়িত হন এবং তিনি পাবনা জেলা জাসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিমের জীবনের বিয়োগান্ত ঘটনা উল্লেখ করে এই লেখা শেষ করতে চাই। ১৯৯০ সালের ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় পাবনা মিশন স্কুলের পুর্ব পাশে কোবাদ মিয়ার পেট্রোল পাম্পের পাশে একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিমকে ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। একাধিক সুত্র থেকে জানা যায় পাড়ায় এক কিশোরীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় প্রতিবাদ করার অপরাধে অভিযুক্তরা বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিমকে হত্যা করে।
অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এই প্রতিবাদী, ন্যায়পরায়ন ও দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করার পরেও খুনীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। ঠিক একই ভাবে ঘটনার কুড়ি বছর পূর্বে ১৯৭০ সালে ২২ ডিসেম্বর বড় ভাই সংসদ সদস্য আহমেদ রফিককে বাড়ীর সামনে একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছুরিকাঘাতে খুন করলেও খুনীদের বিচার আজও হয়নি। পরিশেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিম এর স্বজন-পরিজন এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রত্যাশা বিস্মৃতির কবলে নিমজ্জিত এই মহান দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী কর্তৃপক্ষ তাঁর স্মৃতিকে অমলিন করার উদ্যোগ নিবেন। এছাড়া তাঁর মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের কাছে বিনীত নিবেদন, বছরে একটি দিন হলেও তাঁর মৃত্যু দিবস ৩০ অক্টোবর স্মরণ সভা করার উদ্যোগ নিবেন। পরিশেষে কামনা করি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ করিমের স্মৃতি অমর হবে।
( সমাপ্ত)
লেখক পরিচিতি –
আমিরুল ইসলাম রাঙা
রাধানগর মজুমদার পাড়া
পাবনা।
২২ আগষ্ট ২০২০