এই ধরাধামে যার আগমণ আছে তার একসময় প্রস্থান আছে। আগমণ বিলম্বিত না হলেও প্রস্থান বিলম্ব হতে পারে। আর এই বিলম্বে প্রস্থানের কারণে যে ক্ষয়-ক্ষতি হয় তা কোন কোন ক্ষেত্রে লাগাম হীন বেহিসেবি হতে পারে।
বিশ^ ব্যাপি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কোভিড- ১৯ বা করোনাভাইস নিয়ে। যার মরণ কামড়ে বলতে গেলে গোটা বিশ^ই আজ উলোট পালোট হতে বসেছে। নভেল করোনাভাইরাস(সিওভি) নামে নতুন এক প্রজাতি রোগের প্রাদুর্ভাবে। নভেল করোনাভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট এই রোগটি প্রথম চীনের উহানে চিহ্নিত হয়েছিলো। তখন থেকেই রোগটির নামকরণ করা হয়েছিলো করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯)। করোনা থেকে ‘কো’ ভাইরাস থেকে ‘ভি’ এবং ডিজিজ বা রোগ থেকে ‘ডি’ নিয়ে এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয়। আগে এই রোগকে ‘ ২০১৯ নোভেল করোনাভাইরাস বা ২০১৯- এনসিওভি বলা হতো। নাম যাই হোক সে যে রূপকথার ঠাকুরমার ঝুলির গল্পের মত সোনার কাঠি রূপার কাঠি ওলট-পালোট করে হিং¯্র রাক্ষস হাউ মাউ খাউ মানুষের গন্ধ পাও বলে সমগ্র বিশ^ দাপটের সঙ্গে চষে বেড়াচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
জাতি সংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস গত ২০ এপ্রিল-২০২০, বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘ দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর নোভেল করোনাভাইরাসই পৃথিবীর কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, এতবড় যুদ্ধ, এত কঠিন যুদ্ধে বোধ হয় আগে কখনো মানুষকে লড়াই করতে হয়নি। যে যুদ্ধে গুলি, বোমা, রকেট লঞ্চার, এমনকি কোন পরমাণু অস্ত্র ও কার্যকর হয়না। অথচ যে যুদ্ধে আণুবীক্ষণিক মারণ প্রতিপক্ষ ‘ কোভিড’ তথা নোভেল করোনাবাইরাসটির মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিরস্ত্র মানুষকে। তিনি আরো বলেন, না ঠিক নিরস্ত্র নয়। বরং সাবান পানি, হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক, অক্সিজেন, আর পরীক্ষামূলকভাবে কিছু ওষুধ নিয়ে ওই অসম যুদ্ধটি স্থায়ী- অস্থায়ী হাসপাতালে মোকাবেলা করতে হচ্ছে হাজার হাজার ডাক্তার, নার্স আর স¦াস্থ্য কর্মিকে। কারণ চীনের উহান থেকে বেরিয়ে অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সারা বিশ^ ব্যাপি দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ওই কোভিড- ১৯ এর বিরুদ্ধে লড়বার মত কোন অস্ত্র এখনো আবিষ্কার হয়নি। অথচ তার অশরীরি হানাদারিতে একের পর এক দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।’’
২ আগষ্ট নয়া দিগন্ত অনলাইনে করোনার প্রকোপ দীর্ঘমেয়াদির কথা প্রকাশ করা হয়েছ্।ে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচ) আন্তার্জাতিক সতর্কতা জারির ৬ মাস পরে সংকট মূল্যায়নে সংস্থার জরুরি কমিটির বৈঠকের পর ডব্লিও এইচ এ কথা বলেছে। ক্রমেই মহামামরি আকার নিচ্ছে করোনাভাইরাস। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা জারি করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই মারণ ভাইরসের কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারের জন্য বিশে^র তাবড় তাবড় বিজ্ঞানী দিন রাত পরিশ্রম করেও কোন কুল-কিনারা করতে পারছেনা। এই পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ অল্প কিছু দিনের মধ্যেই করোনা বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে, তাই ভ্যাকসিন প্রয়োজন বাংলাদেশে নাও হতে পারে। তবে প্রস্তুত রাখা হবে ভ্যাকসিনের।
গত ১৫ আগষ্ট-২০২০ মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া শুভ্র সেন্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫ তম সাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ সপ্তাহেই ভ্যাকসিন আনার বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে করোনার ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা হ্েচছ। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের বিষয়ে বাংলাদেশ যাতে অগ্রাধিকার পায়, সেই বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। কীভাবে মানুষ ভ্যাকসিন পাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘ করোনাভাইরাসে পুরো পৃথিবী আক্রান্ত হয়েছিলো।ইউরোপের প্রতিটি দেশে জনসংখ্যার হার কম হলেও সেখানে মৃত্যুর হার বেশি। বাংলাদেশে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কাজ করেছি। এপর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছ্ েচিকিৎসা ও যথাযথ স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমিয়ে রাখতে পেরেছি। দেশ থেকে ধীরে ধীরে করোনার প্রকোপ কমে যাচ্ছে। মৃত্যুর হারও কমে যাচ্ছে। জাহিদ মালেক বলেন, আমরা সাহস পাচ্ছি। আজকে জীবন-জীবিকা অনেকটা স্বাভাবিক হচ্ছে। সুস্থ্যতার হার বেড়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক চাকা সচল হয়েছে। এটি স্বাস্থ্য সেবার অবদান।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ফেস বুক ডায়েরিতে গত ১৭ আগষ্ট লিখেছেন, ‘ এমন একটা বার্তা দিচ্ছেন তারা যে, দেশ থেকে করোনা চলে যাওয়ার পথে। এর ভয়ংকর পরিণতি কি উপলব্ধি করেন উনারা? করোনায় দেশে যখন প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৪০ জন করে মারা যাচ্ছে, তখন এমন কথাবার্তা তারা কি বিবেচনায় বলছেন? তাছাড়া করোনা চলে গেলেও বার বার তা ফিরে আসে। ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া আর নিউজিল্যন্ডের মতকরোন মোকাবেলায় সফল দেশে এমন ঘটনা ঘটছে। করোনার সেকেন্ড ওয়েভ হচ্ছে ইউরোপের বহু দেশে। একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কি এসব জানার কথাা না?বেপরোয়া কথাবার্তা বলে কেন তিনি তাহলে জনস্বাস্থ্যকে আরো ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন? তিনি বলেন, আশ্চর্য লাগে ভেবে এতোবড় দল আওয়ামী লীগ, জাহিদ মালেকের একটা ভালো বিকল্প খুঁজে পায়না তারা? তাকে একটু হুঁশ করে কথা বলতে পরামর্শ দিতে পারেনা কেউ? নাকি শুধু প্রচারোণার তোপে করোনা নির্মূল করার নীতি নিয়েছে পুরো সরকার ব্যবস্থা?
করোনাভাইরাসের উৎপত্তির শহর চীনের উহানে নতুন করে আর কোন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগির দেখা না মেলায় অনেকটাই স্বাভাবিক হতে চলেছে সেখানকার জীবন-যাপন। এত দ্রুত সময়ের মধ্যে চীনের উহান শহর করেনা মুক্ত হওয়ায় অনেকেই আতশবাজি ফুটিয়ে উল্লাস করেছেন। সাউথ চায়না মর্ণিং পোস্টের একটি প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে জানিয়ে ইতোমধ্যে উহানে স্থাপিত ১৬ টি অস্থায়ী হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চীনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা চিকিৎসক. নার্স ও সেচ্ছাসেবীরা নিজ নিজ প্রদেশে চলে গেছেন।
শুধু চীনের উহান প্রদেশেই নয়। বিশে^র অনেক দেশই বহু আগে মারণব্যাধি করোনাভাইরাসকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। এর মধ্যে পাপুয়া নিউগিনি, ইরিত্রিয়া, হলিসি, মন্টিনিগ্রো, সিসিলি ও ফিজি’র নাম উল্লেখযোগ্য। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।