ইয়ানূর রহমান : যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে দু-গ্রুপের সংঘর্ষে তিন কিশোর বন্দি নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতদের লাশ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসা হলে সংঘর্ষের বিষয়টি জানাজানি হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ১০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন মারাগেছে।
তবে ওই এলাকার একটি সূত্র জানিয়েছেন, মারামারি ঘটনার পর ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে এমন গুঞ্জন আশপাশে চলছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের দায়িত্বশীল কেউ কোনো মন্তব্য করেননি।
নিহতরা হলো, বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্ব পাড়ার নান্নু পরমানিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), খুলনার দৌলতপুরের রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮) ও রাসেল হোসেন (১৮)। রাসেলের বাড়ি বগুড়ার শেরপুরে। এর মধ্যে নাইম হোসেন ধর্ষণ এবং পারভেজ হত্যা মামলায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অন্তরীণ ছিল। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
যশোর ডিএসবির পরিদর্শক এম মশিউর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার শিশু উন্নয়ন
কেন্দ্রের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সদস্যরা সন্ধ্যার পর লাশ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসেন।
এরপর ঘটনা জানাজানি হয়। কি কারণে এবং কখন হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তিন দফায় তিনটি লাশ
হাসপাতালে নিয়ে আসে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের লোকজন। প্রথমে সন্ধ্যা ৬ টা ৩৮
মিনিটে হাসপাতালে আনা হয় নাইম হোসেনের লাশ। এরপর পৌনে ৮ টার দিকে আনা হয় পারভেজ হাসানের লাশ, তারপর ৮টার দিকে আনা হয় রাসেলের লাশ। তবে প্রতিবারই
হাসপাতালে লাশ রেখে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের লোকজন গাড়িসহ হাসপাতাল ছেড়ে
চলে যান। নিহত তিনজনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে বলে প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন।
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রশিক্ষক মুশফিক জানান, কয়েকদিন আগে কেন্দ্রে শিশুদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। ওই ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার বিকেলে আবার সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে নাইম নামে ১৫ বছরের এক কিশোর এবং রাব্বি (১৮) ও রাসেল হোসেন (১৮) গুরুতর আহত হন। তাদেরকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক অমিয় দাস জানান, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের একটা গাড়িতে তিন কিশোরকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাদেরকে মৃত অবস্থায় পায়
চিকিৎসকরা। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে যান যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান ও পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন। তারা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদের সাথে কথা বলেন।
কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ জানিয়েছেন, ঈদের পর গত ৩
আগস্ট বন্দি রবিউল ও পাভেলের মধ্যে মারামারি হাতাহাতি হয়। সে সময় দুইজনসহ
তাদের গ্রুপের সকলকে যার যার ইউনিটে পাঠানো হয়। সেই সূত্রে বৃহস্পতিবার
দুপুরে ফের মারামারি বাঁধে। তখন শিশু উন্নয়নের কর্মকর্তারা তাদের ঠেকিয়ে ইউনিটে পাঠিয়ে দেয়। পরে বিকেলে ফের মারামারি হয়। এসময় কর্মকর্তাদের অনেকে
ছিলেন না। পরে জানতে পারি ১০জন মতো আহত হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই তিনজন মারা গেছে। বাকিদের প্রাথমিক
চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তবে আনসার সদস্য কর্তৃক পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি সত্য নয় বলে তিনি জানিয়েছেন।