পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী -আটঘরিয়া) আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক সফল কমিশনার, সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের কান্ডারি, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় উপদেষ্টা এবং বীরমুক্তিযোদ্ধা জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। তার দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে আটঘরিয়া এবং ঈশ্বরদী আওয়ামীলীগের বড় একটি অংশ তৎপরতা শুরু করেছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
গত ২ এপ্রিল এ আসনের ৫ বারের সংসদ সদস্য সাবেক ভুমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যু হওয়ায় আসনটি শুন্য হয়। শুন্য এ আসনে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তত আড়াই ডজন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। অনেকে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। প্রয়াত সাবেক ভুমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর পরিবারের অন্তত পাঁচজন মনোনয়ন পাওয়ার আশায় পোষ্টার, লিফলেট ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। মরহুম ডিলুর স্ত্রী কামরুন্নাহার শরীফ, মেয়ে মেহজাবিন শিরিন পিয়া, জামাতা ঈশ্বরদী পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ এবং অপর ছেলে কনক শরীফ পৃথক পৃথকভাবে কাজ করছেন। একই পরিবারে এত প্রার্থী হওয়ায় পারিবারিক কলহ চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে। ফলে দলীয় নেতাকর্মিরা কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এ সব কারণে একজন গ্রহণযোগ্য এবং হেভিওয়েটের প্রার্থীর সন্ধানে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা একাট্রা হয়েছেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মনে করেন, এমন একজন নেতাকে এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া উচিৎ যাকে ঘিরে দলের সকল বিভেদ দুর হবে এবং দল সুসংগঠিত হবে এবং তিনি হবেন দলের ঐক্যের প্রতীক। সে ক্ষেত্রে ঐ আসনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মিরা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কে ঢাকার অফিসে এবং বাসায় গিয়ে তাকে প্রার্থী হতে অনুরোধ করেছেন।
১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৮০ সালে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৮২ সালে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারের জন্য নির্বাচিত হয়ে তিনি মুন্সেফ (সহকারী জজ) পদে যোগ দেন। কর্মের ধারাবাহিকতায় তিনি যথাক্রমে যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ পদে দায়িত্ব পালন করে ২০০৬ সালে অবসরে যান। বিচারিক কাজের পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক অফিসার হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের ১৪ মার্চ তিনি দুর্নীতি-দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০১৬ সালে অবসরে যান। বর্তমানে তিনি ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৭১-৭৪ সালে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৭৪-৭৫ সালে পাবনা জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হলে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সামরিক আইন বলে গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মুক্ত হয়ে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল মো. সাহাবুদ্দিন চুপপু ভারত যান এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে পাবনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৭২-৭৫ সালে পাবনা জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব পদে থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। পাবনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা সমিতির তিনি কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন। বর্তমানে তিনি পাবনা প্রেসক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির জীবন-সদস্য।
সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন ১৯৯৯ সালে সাহাবুদ্দিন চুপপু মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ১০ সদস্যবিশিষ্ট টিমের সদস্য হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলন’-এ যোগদানের জন্য চীনের রাজধানী বেইজিং সহ চীনের বিভিন্ন প্রদেশ পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিভিন্ন সেমিনারে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড সফর করেন। জাতিসংঘের অর্থায়নে এই সফর অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সফরে সংসদ সদস্য, দেশরক্ষা বাহিনীর সদস্যসহ বেসরকারি আমলারাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
২০০১ সালের সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার কারণ ও সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান (সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির পদমর্যাদায়) দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের দাখিলকৃত প্রতিবেদন সরকার গেজেট আকারে প্রকাশ করে।
দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক উত্থাপিত কথিত পদ্মাসেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণে সমর্থ হন। তাঁর প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদন কানাডা কোর্ট কর্তৃক সমর্থিত হয়। আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র শহীদুল ইসলাম রতন বলেন, আমরা এই আসনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ভাইকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই। এ জন্য আটঘরিয়া থেকে দলের সবাই ঐক্যমত হয়ে তাকে প্রার্থী হতে অনুুরোধ করেছি। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ভাইকে এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হলে দীর্ঘদিনের দলের পুঞ্জিভুত সমস্যা সমাধান হবে দলে কোন কোন্দল থাকবে না।
ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান মিন্টু বলেন, আমি সারাজীবন ডিলু ভাইয়ের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে তার পরিবার একজন প্রার্থী ঠিক করতে পারল না। এটা দু:খজনক। একমাত্র সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ভাইকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এখানে দল বাঁচবে। অন্যথা এখানে দল ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। কারো কথা কেউ শুনবে না।
ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন কুমার কুন্ডু বলেন, সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রার্থী করা হলে দলমত নির্বিশেষে মানুষের গ্রহণ যোগ্যতা পাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী বলেন, চুপ্পু ভাইকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমরা সবাই তার পক্ষে কাজ করবো।
এ ব্যাপারে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় উপদেষ্টা সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সব কিছু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার কাছে ন্যস্ত করেছি। উনি যা ভাল মনে করেন আমি তার সঙ্গেই থাকবো। এর চেয়ে বেশী কিছু বলা সম্ভব নয় বলেও তিনি জানান।