সমুদ্রের ঢেউ খেলানো জলরাশি ও মুক্ত বাতাস কে না ভালোবাসে? সাথে যদি থাকে একটি ভাসমান নৌকা আর কিছু বন্ধুবান্ধব তাহলে তো কথাই নেই। মনে হবে যেন স্বর্গের রাজ্যে একটি ফুটন্ত গোলাপে প্রজাপতি বসে তার সৌন্দর্য উপভোগ করছে। নাটোরের হালতি বিলের পাটুল ঘাট, এ যেন আরেকটি মিনি কক্সবাজার।
প্রতিদিন এখানে আসেন শত শত প্রকৃতি-পিয়াসী মানুষ। বিলের ডুবোপথে হেঁটে বেড়ানো, সাঁতার কাটা আর নৌকা ভ্রমণে দিন যাপন তাদের। আধুনিকতার সামন্য ছোঁয়ায় এ স্থানটি হতে পারে পূর্ণঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র।
এটি শুধু বর্ষাকালে পানিতে থৈ থৈ করে এবং গড়ে ওঠে একটি মৌসুমী পর্যটন এলাকা। তাই বর্ষাকালে অনেকে ভালোবেসে এ বিলকে ‘মিনি কক্সবাজার’ নামে ডাকেন।
শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের এই বিল বষার্য় সাগরের মতো দেখায়। জল ছুয়ে আসা বাতাস, আর তীরে আছরে পড়া ডেউ আর মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। বছরের অন্যসময়ও এই বিল থাকে জলেভরা। কিছুদিন আগে পাটুল ঘাট থেকে নির্মান করা হয়েছে ডুবোসড়ক। যা পর্যটকদের অন্যতম আর্কষণ। এই বিল বর্ষা মৌসুমে সমুদ্রের রূপ ধারণ করে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে তীরে। এ সময় বিলের ভিতরের গ্রামগুলো দেখতে দ্বীপের মত মনে হয়। ডুবন্ত সড়কে হেঁটে বেড়ানোসহ বিলের পানিতে সাঁতার কাটা ও নৌকা ভ্রমণ করে সময় কাটান দর্শনার্থীরা। তারা কক্সবাজারের আমেজ উপভোগ করেন এখানে।
তবে বাইরের মানুষের ভিড়ের কারণে বিলগ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়ায়াতে বিড়ম্বনাসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এরপরও তাদের এলাকায় বিপুল দর্শনার্থীর আগমনে তারা খুশি।
অন্যদিকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার অভাবসহ যাত্রী ছাউনির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগ রয়েছে দর্শনার্থীদের। হালতি বিলের এই এলাকাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
বিশালায়তনের চলনবিলের একাংশ এই হালতি বিল। বর্ষায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ‘মিনি কক্সবাজার’ নামে পরিচিত এই বিল দেখতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের জন্য গত কয়েক বছর আগে পাটুল ঘাট থেকে নির্মাণ করা হয়েছে ডুবন্ত সড়ক। বর্ষায় সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে সড়কগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। এই ডুবন্ত সড়ক নির্মাণের পর থেকে বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই এই পাটুল ঘাট এলাকায় লোকজন ঘুরতে আসে।
বিলের দ্বীপগ্রাম খোলাবাড়িয়ায় মাকে নিয়ে নানা বাড়ি বেড়াতে এসে বিপাকে পড়েন বগুড়ার মৌসুম খাতুন। তিনি জানান, বুধবার সকাল ১১টা থেকে পাটুল ঘাটে অপেক্ষা করছেন নৌকার জন্য। কিন্ত দর্শনার্থীদের চাপে বিল পারাপারের জন্য নৌকা না পেয়ে ঘাটেই অপেক্ষা করতে হয় কয়েক ঘণ্টা।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকবাল জানান, এখানকার নৈর্সগিক
সৌর্ন্দয্যে কক্সবাজারের আমেজ অনুভব করছেন তারা। তবে এবার অন্যবারের তুলনায় বিলভ্রমণে নৌকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। জনপ্রতি ৫০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
নৌকার মাঝি আবদুল লতিফ শাহ আলম বলেন, এবার ঘুরতে আসা মানুষ সংখ্যা অনেক বেশি। সে তুলনায় নৌকা কম। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই নৌকা চালাতে হচ্ছে। যারা দিনভর বিল ঘুরছেন তাদের কাছ থেকে কিছু বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সমাজসেবক আকতার হোসেন বলেন, বিলের মধ্যে ডুবন্ত সড়ক নির্মাণের পর থেকেই এখানকার অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। দিনমজুররা এখন বছরের অর্ধেক সময় চাষাবাদ এবং বাকি সময় নৌকা বেয়ে ভালোমতই জীবনযাপন করছেন। অনেকেই বিল পাড়ে দোকান বসিয়ে বাড়তি আয় করছেন।
বর্ষায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ‘মিনি কক্সবাজার’ নামে পরিচিত এই বিল দেখতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। বর্ষায় সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে সড়কগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। এই ডুবন্ত সড়ক নির্মাণের পর থেকে বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই এই পাটুল ঘাট এলাকায় লোকজন ঘুরতে আসে। তবে এবার বর্ষার শুরুতেই পানিতে ডুবে এক শিক্ষকের মৃত্যুতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। ওই মৃত্যুর ঘটনার পর জেলা প্রশাসন হালতি বিলের নৌকা মাঝিদের মধ্যে লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করে এবং পর্যটকবাহী নৌকায় লাইফ জ্যাকে’ রাখা বাধ্যতামূলক করেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, বর্ষার সময় নাটোরের হালতি বিল ও চলনবিলে হাজার হাজার পর্যটক আসেন নৌকাভ্রমণ করতে। হালতি বিলের পাটুল ঘাট এলাকাকে পর্যটন সুবিধার আওতায় আনতে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘুরতে আসা লোকজনের নিরাপত্তায় লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।