দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত দেশের একমাত্র পাথর খনি মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানীতে শ্রমিকদের আন্দোলন তুঙ্গে উঠছে।
মধ্যপাড়া পাথর খনির শ্রমিকদের ৩ মাসের বেতনভাতা ও ঈদ বোনাস না দেয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ৮ শতাধিক শ্রমিক ৩১জুলাই খনিগেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে।। এসময় শ্রমিকদের শ্লোগানে শ্লোগানে খনি এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। খনির চারিদিকে লোকজন আতংকে ছুটাছুটি করতে থাকে। এদিকে শ্রমিকদের বেতন ভাতা না দিয়ে আন্দোলন দমানোর জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেটিসির লোকজন শ্রমিকদের ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
শ্রমিক আমিনুল, সুলতান ও রফিকুল বলেন. আন্দোলন দমানোর জন্য জেটিসি কতৃপক্ষ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর হায়দারকে ৮দিন পুর্বে সিকিউরিটি ইনচার্জ পদে নিয়োগ দেয়। তিনি শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এতে এলাকার পরিবেশ আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। শ্রমিক নেতা খোরশেদ আলম বলেন, করোনার সময় জিটিসি বেতন বোনাস না দিয়ে ৮শতাধিক শ্রমিককে ছুটিতে পাঠায়। বেতন ভাতা ও ঈদ বোনাস না পেয়ে শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। শ্রমিকদের পরিবার না খেয়ে দিনাতিপাত করছে যা খুবই দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন করোনাকালে বেতনভাতা পরিশোধের জন্য সরকারী ঘোষনা থাকার শর্তেও তারা আমাদের পাওনা পরিশোধ করছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন বেতন ভাতার টাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেটিসি আতœসাৎ করার পায়তারা করছে।
জেটিসি পাথর উত্তোলনের জন্য পেট্রোবাংলার একটি চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। এলাকার রাজনেতিক ব্যক্তি ও সচেতন মানুষ নানা প্রশ্ন করছে ভাল প্রতিষ্ঠান কাজ না পেয়ে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান কিভাবে দেশের একমাত্র কঠিন শিলা খনির পাথর উত্তোলনের কাজ পেল। এ প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার পর থেকে মধ্যপাড়া পাথর খনি মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাথর উত্তোলনে আজও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেটিসি। শ্রমিকদের বেতন ভাতা ও ঈদ বোনাস পরিশোধ না করায় খনির এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে মতামত জানার জন্য জেটিসির প্রধান কাজী সিরাজুল ইসলাম এর সাথে বারবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সচেতন মহলের মতামত – মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির উৎপাদন, রক্ষনাবেক্ষণ ও পরিচালন ঠিকাদার জিটিসি’র সাথে শুরু থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খনি কর্তৃপক্ষের মতবিরোধ লেগেই আছে। ৬ বছরে ৯২ লাখ টন পাথর উৎপাদন লক্ষমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন করেছে মাত্র ৩৮ লাখ টন। অদক্ষ এই ঠিকাদার পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ড্রিলিং, ব্লাস্টিং, ক্র্যাশিং ও সর্টিং করার সময় ৭-৮ শতাংশ ০-৫ (শুন্য থেকে ৫ মিলিমিটার) মিলিমিটার আকারের ডাস্ট স্থলে ১৩-১৪ শতাংশ ডাস্ট বাহির করে। করোনাকালের আগে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার টন পাথর উত্তোলন করা হয়। এই পরিমাণ পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ৬৫০-৭০০ টন ডাস্ট বাহির হয়। অথচ ৭-৮ শতাংশ হলে ডাস্ট বাহির হতো ৩০০-৪০০ টন। প্রতিটন ডাস্ট বিক্রিমুল্য ১০.০ ডালার আর প্রতিটন পাথরের গড় বিক্রি মুল্য ৩১.৪০ ডলার। এতে করে খনির বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়। স্পেয়ার পার্স খাতে ৬ বছরের জন্য বরাদ্দ ১২ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু জিটিসি নানা তালবাহানা করে ১৯ মাসে সাড়ে ১১ মিলিয়ন ডলারের বেশী খরচ করে ফেলে এবং পরে অতিরিক্ত ১৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করে। খনির শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ না দিয়ে এ খাতের বরাদ্দ অর্থও দাবি করে।
পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক বলেন শ্রমিকরা বেতন ভাতা না পাওয়ায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের বকেয়া বেতন ভাতা প্রদান করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেটিসির কর্মকর্তারদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের বিষয়টি সমাধানের জন্য উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ অচলাবস্থার সমাধান করা না হলে যে কোন সময় এ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সমাধানের দাবী এলাকার সচেতন মহলের।