পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার শহীদনগর গ্রামের রবিউল ইসলাম কোরবানির হাটকে সামনে রেখে দুটি ষাঁড় পালন করেছিলেন। ষাঁড় দুটি বিক্রির জন্য সকালে বেড়া পৌর এলাকার করমজা পশুর হাটে নিয়ে যান। কিন্তু দুপুর ৩টা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেননি। এর আগে এই সাঁড় দুটি বিক্রির জন্য তিনি সাঁথিয়ার বোয়ালমারি ও বেড়ার নাকালিয়া পশুর হাটে গিয়েছেন। কিন্তু ওই দুটি হাটেও তিনি ষাঁড় দুটি বিক্রি করতে পারেননি।
এর পর করমজা হাটে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হাটে হাটে গরু নিয়্যা ছুইট্যা বেড়াতেছি। কিন্তু বেচপ্যার পারতেছি না। গত এক বছরে গরু দুইটার পেছনে সব মিলায়া দেড় লাখ টাকার বেশি খরচ হইছে। কিন্তু যে দাম কয় তাতে বেচা চলে না।’
ক্রেতার অভাবের পাশাপাশি গরুর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তাঁর মতো আক্ষেপ করছেন পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার বেশির ভাগ গরু পালনকারী। গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে তাঁদের অনেকেই গরু বিক্রির জন্য এ হাট থেকে অন্য হাটে ছুটে বেড়াচ্ছেন। বেশির ভাগ হাটেই স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। গরু বিক্রি করতে গিয়ে প্রতিটি হাটেই একে অপরের গা ঘেঁষে অনিরাপদ পরিবেশে গরু নিয়ে তাঁদেরকে দিনভর দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে গরু পালনকারীদের কারোরই কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তাঁদের মাথা ব্যাথা শুধু গরুর দাম ও বিক্রি নিয়ে। তাঁদের ভাষ্য, গরু পালন করতে গিয়ে বেশির ভাগেরই মাথায় ঋণের বোঝা। তাই কোরবানির হাটে গরু বিক্রি না করলে চরম বিপদে পড়বেন তাঁরা। কিন্তু যে অবস্থা তাতে দুই উপজেলার অর্ধেকের বেশি গরুই অবিক্রিত থেকে যাবে বলে তাঁদের ধারণা।
গেল ২৬’জুলাই) বেড়ার নাকালিয়া পশুর হাটের ইজারাদারের অংশীদার সেল্টু মিয়া বলেন, ‘আমাগরে হাটে তিন হাজারের বেশি গরু আমদানি হইছিল। বেশির ভাগ গরুই বিক্রি না হওয়ায় ফেরত গেছে। দামও ছিল একেবারে কম। মাংসের হিসাবে প্রতি কেজির দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এমন কোরবানির হাট জীবনে দেহি নাই।’
সাঁথিয়ার করমজা হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাটটিই এ এলাকার সবচেয়ে বড় কোরবানির হাট। হাটে প্রচুর পশু আমদানি হলেও তেমন বিক্রি নেই।’
সূত্রে জানা যায়, বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা দেশের অন্যতম গরু পালনকারী এলাকা বলে পরিচিত। কোরবানিকে সামনে রেখে অসংখ্য খামারি ও গৃহস্থ গরু পালন করে থাকেন। সাধারণত কোরবানির হাটের অন্তত দুমাস আগে থেকে ব্যাপারীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু পালনকারীদের কাছ থেকে গরু কেনেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার দূর-দূরান্ত থেকে কোনো ব্যাপারীই আসেননি। তাই কোরবানির স্থানীয় হাটগুলোই ছিল গরু পালনকারীদের শেষ ভরসা। কিন্তু সেখানে গিয়েও তাঁদের হতাশ হতে হচ্ছে।
এদিকে বেড়া, সাঁথিয়াসহ পাবনা জেলায় করোনার বিস্তার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ পরিস্থিতিতে গরুর হাটগুলোতে যেভাবে অনিরাপদ পরিবেশে মানুষ ভিড় করছে, তাতে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক সরদার মো. মিলন মাহমুদ বলেন, ‘কোরবানির হাটে আসা বেশির ভাগ লোকজনের মুখে মাস্ক নেই। ন্যুনতম সামজিক দূরত্বও কেউ মানছেন না। বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও উদ্বেগের।’
বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা’র গরুর ব্যাপারী আব্দুল মোমিন গেল বছরেও ১২০টি গরু ঢাকার কোরবানির হাটে নিয়ে বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু এবার নিয়ে গেছে মাত্র ২০টি গরু। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চার মাসেরও বেশি সময় পার হয়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে এই সময়ের মধ্যে পয়লা বৈশাখ, পবিত্র ঈদুল ফিতর ছাড়াও অসংখ্য বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রচুর গরুর মাংসের প্রয়োজন হত। কিন্তু তেমনটি না হওয়ায় দুই উপজেলায় ১০ হাজারেরও বেশি গরু অব্যবহৃত থেকে গেছে। সেগুলো কোরবানির গরুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় সরবরাহ আরও বেড়েছে।