নাসিম উদ্দীন নাসিম—
“দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশিথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!”
জাতির যে কোন বিপদসংকুল সময়ে বেশ অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ যোগায় নজরুলের এই ‘কান্ডারী হুশিয়ার’ কবিতাটি। আজ এই মহামারীর সময়েও খুঁজে বেড়াই তাঁর কবিতার ছন্দে এমনি এক কান্ডারী, যার হাত ধরে আমরা করোনা এবং বন্যার বিরুদ্ধে গৌরবময় বিজয় অর্জন করতে পারব। আর তেমনই অনেক অসহায় মানুষের কান্ডারী মহিয়সী নারী আরিফা জেসমিন কণিকা। তিনি একজন শুধু সমাজ সেবকই নন বরং বলা য়ায় সমাজের এক নিবেদিত প্রাণ। আমার খুবই স্নেহভাজন একজন ব্যক্তি। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের দুসময়ে সবসময় পাশে থেকে তিনি যুগিয়েছেন সাহস ও অনুপ্রেরণা। দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন প্রচারবিমূখ এই নারীর ভাবনায় পাওয়া না পাওয়ার গল্পগুলো জায়গা করে নিতে পারেনি কখনো, সমস্ত ভাবনাজুড়ে শুধুই আর্ত মানবতার সেবা। জীবন সংগ্রামের সমস্ত বাঁধাকে উপেক্ষা করে সমাজের কল্যানে কাজ করে যাওয়ার প্রতিটি ধাপগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়। সমাজ তথা দেশের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাওয়া এই মানুষটিকে বর্তমানের বৈশ্বিক করোনা মহামারী এবং বন্যার সময়ও দেখা যায় বেশ তৎপর। তাইতো নাটোরের প্রান্তিক এলাকা চলনবিলের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো যখন কর্মহীন অর্থাৎ চরম খাদ্যসংকটে ঠিক তখনই ছুটে গেছেন নিজ হাতে ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে। হ্যাঁ, এভাবেইতো আমরা ভাগাভাগী করে নেব আমাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নগুলো। তাই বলতে দ্বিধা নেই, দেশের এমন দুর্যোগকালে যদি তাঁর মতো প্রতিটি উদ্যোগী মানুষগুলো এগিয়ে আসে তাহলে অন্তত দেশের কোন নাগরিক অভূক্ত অবস্থায় পড়ে থাকবে না। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা নিশ্চয় বিজয় অর্জন করতে পারব। কারণ যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি জরুরী যেটি, সেটি হল সম্মিলিত প্রয়াস।
নাটোরের চলনবিলের মা মাটি মানুষের আস্থার প্রতিক,সিংড়া থেকে বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও দেশের সফল আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলকের সহধর্মিনী আরিফা জেসমিন কণিকা নিরবেই সিংড়াবাসীর জন্য মানবিক কাজ অব্যাহত রেখেছেন । স্বামী স্ত্রী দুজনেই চলনবিলের মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিগত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। বলেছিলেন- “১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলাও একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সকলের প্রচেষ্টায় এই যুদ্ধে জয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ।” অসাধারণ এই ভাষণে তিনি করোনা মোকাবিলার জন্য দেশবাসীর প্রতি বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। ভাষণে আরো বলেছিলেন- “আমি নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের আহবান জানাচ্ছি”। এমন আহবান সত্যিই দেশের প্রতিটি মানুষকে জাগিয়ে তোলার আহবান, মানবতার সেবায় যুক্ত হওয়ার আহবান। আর এই আহবানে সারা দিয়েইতো আমরা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে বিজয়ীর বেশে সবাই সুস্থ ও নিরাপদে থাকব। ঠিক যেমনটি সাড়া দিয়েছিলেন দেশের প্রান্তিক সিংড়াবাসীর আরিফা জেসমিন কণিকা।
মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক আরিফা জেসমিন কণিকার স্বামীর হাত ধরেই সেবামূলক কাজের হাতেখড়ি । মূলত নারীর অধিকার নিয়েই বেশি তুলেছেন বজ্র কন্ঠস্বর। নারীর প্রতি কোন প্রকার সহিংসতা দেখলেই সেখানে প্রতিরোধের দূর্গ গড়ে তুলেছিলেন তিনি। যেন সকল অসহায় নারীদের প্রধান আশ্রয়। এরপর সমাজের নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই মানুষটি ধীরে ধীরে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।তবে তাঁর এগিয়ে যাওয়ার পেছনে যিনি সবসময় পাশে থেকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন স্বয়ং তাঁর জীবনসঙ্গী আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক । তিনিও আমার খুবই স্নেহভাজন একজন ব্যক্তি। সংসারের অনেক টানাপোড়ানের মধ্যেও সমাজের জন্য এমন মহৎ কাজে তিনি সবসময় সামনে হাঁটার সাহস যুগিয়ে গেছেন তাঁর সহধর্মিনীকে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত আরিফা জেসমিন কণিকা কোন রাজনৈতিক দলের বড় পদবীদারী নেত্রী নন, নন কোন সরকারি বড় কর্মকর্তাও। এমনকি অনেক বড় ধনাঢ্য ব্যক্তিও নন। তিনি শুধুই একজন সমাজসেবক। তাইতো দেশের এই ক্রান্তিলগ্নেও থেমে নেই তাঁর সামাজিক কার্যক্রম। অক্লান্ত পরিশ্রম করে শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলনবিলের দুর্গম এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন ত্রাণ সামগ্রী এবং করোনা ভাইরাস সম্পর্কে চলনবিলবাসীকে করে তুলেছেন সচেতন। এ যেন সত্যিই ভালবাসার নৌকা পাহাড় বেয়ে যায়। কোন দুর্গম গিরি পারেনি তাকে থামাতে। বর্তমান মহামারী করোনা এবং বন্যার সময়ে থমকে আছে দেশের সমস্ত অর্থনীতির চাকা। এমন করুন বাস্তবতায় দিনমজুরেরও সুযোগ নেই কোথাও। তাই দুর্গম চলনবিলের অনেক মানুষ আয়-রোজগার বিহীন ‘দিনে আনে দিনে খায়’ মানুষগুলো কোথায় গিয়েইবা পাবে পর্যাপ্ত খাবার? তখন স্বাভাবিকভাবে করোনার চিন্তার চেয়ে দু’মুঠো আহারের চিন্তাটা প্রাধান্য পায় অনেক বেশি। কেননা করোনার আক্রান্তে মারা যাবার আগে যদি খাবারের অভাবে মারা যায়, তবে এর চেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা আর কি হতে পারে? জীবনের করুন বাস্তবতার এমন মুখোমুখিতে যদি কেউ এসে বলে- “আপনার ত্রাণের প্যাকেটটি নিন”। সত্যিই তখন মনে হবে যেন স্বর্গ থেকে কেউ এসে আহার দিয়ে গেল। হোক না সেটা এক অথবা দুই বেলার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া, দেশের মানুষ যেন কোনভাবেই অভূক্ত অবস্থায় না থাকে। তাই সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় হয়তোবা সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং জানি, সরকারি ত্রাণ সামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এজন্য বন্টন প্রক্রিয়ায় সকলের দিকে নজর দেওয়াটাও হয়তোবা সম্ভব নয়।
এই কারণে উদ্যোগী আরিফা জেসমিন কণিকার মতো আরো অনেক মহান ব্যক্তি তাঁদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাধ্যমতো বিতরণ করে যাচ্ছেন ত্রাণ সামগ্রী এবং সচেতন করে যাচ্ছেন করোনা ভাইরাস এবং চলমান বন্যার বিষয়ে, যা সত্যিই মহানুভবতার এক একটি অনন্য নিদর্শন। তবে এমন দুর্দিনে যে বিষয়টি খুবই লক্ষনীয় সেটি হল- জেলা শহর, উপজেলা শহর অথবা পৌরসভা এলাকাগুলোতে কম বেশি ত্রাণকর্তাদের নজর দেখা গেলেও বন্যাদূর্গত দুর্গম চলনবিলের ঐ প্রান্তিক খেতে খাওয়া জনগোষ্ঠীর প্রতি খুব বেশি নজর দেওয়া হয় না। এসব এলাকায় দুই তিন ঘন্টার পথ নৌকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়াটাও অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা ও সাহসী পদক্ষেপের ব্যাপার। কিন্তু একটি কথা অপ্রিয় হলেও ধ্রুবতারার মতো সত্য যে, এই সময়ে ঐ যুগ যুগ ধরে অবহেলিত ও উপেক্ষিত দুর্গম চলনবিল এলাকার হত দরিদ্র মানুষগুলো দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার সাহস পাবে যদি সরকারি বা ব্যক্তিগত ত্রাণকর্তাদের নজর সেসব এলাকার মানুষের দিকে থাকে। কারণ আপনাদের এই মহান উদ্যোগই পারবে বৈশ্বিক মহামারী এবং বন্যাার মতোএই জাতীয় সংকটকালে এমন প্রান্তিক এলাকার মানুষগুলোকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাতে। জুনাইদ আহম্মেদ পলক আর আরিফা জেসমিন কণিকার মতো উদ্যোগী ও সৃজনশীল ব্যক্তিরা এগিয়ে চলুক আপন গতিতে নিরাপদ ও সুস্থতায়। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন আমরা করোনার এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবশ্যই গৌরবময় বিজয় অর্জন করব এবং সব বাধা পেরিয়ে গড়ে তুলব একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।