করোনা দুর্যোগে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ৭০দিনের ভিন্নধর্মী অনলাইন ক্যাম্পেইন

করোনা দুর্যোগে বেশিরভাগ মানুষ যখন নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করছিলো তখন ঘরে থেকেই বাংলাদেশ সহ বিশে^র ১৪টি দেশের নানা শ্রেণীপেশার মানুষের অংশগ্রহণে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এক ব্যতিক্রমী অনলাইন সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়েছে বগুড়াসহ সারাদেশে যা ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে লাখো মানুষকে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছে এই দুর্যোগকালীন মূহুর্তেও।
‘কোভিড-১৯ মহামারীতে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করি’ স্লোগানে এই বছরের গত পহেলা মে থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে এই ক্যাম্পেইনের শুরু
করেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল বাংলাদেশ (ইউএনএফপিএ) এর ডিস্ট্রিক ফ্যাসিলিটেটর তামিমা নাসরিন যিনি নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বগুড়া জেলা পুলিশ ও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরকে দীর্ঘদিন থেকেই কারিগরি
সহায়তা প্রদান করে আসছেন। পহেলা মে থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইন এর সমাপ্তি করা হয়েছে গত ১০ জুলাই। বৈশি^ক মহামারী করোনায় নির্যাতিত
নারী ও শিশুকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সচেতনতা তৈরি করা, প্রতিবাদ করা, সহিংসতা প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করা, সমস্যা সমাধানে কমিউনিটি পর্যায়ে
তৃণমূলের সমাজ ও স্থানীয় নেতৃত্বকে সম্পৃক্তকরণ এবং জরুরি হেল্পলাইন নাম্বার সহ অন্যান্য জিবিভি সার্ভিস প্রভাইডারদের তথ্য শেয়ার করা যারা কিনা এই করোনার মাঝেও সারাভাইভারদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করছেন মূলত এই ৫টি বিষয়কে সামনে রেখে অনলাইন ভিত্তিক ৭০দিনের এই সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইনে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান, মায়ানমার, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা,
হংকং, সুইডেন, কানাডা, মাধাগাস্কার, মরিসাস, কেনিয়া, এবং তাইমুর লেস্ত এর নিবাসী ২৮টি পেশার মানুষ যার মধ্যে রয়েছে পুুলিশ, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, আন্তজার্তিক পেশাজীবি, জাতিসংঘ কর্মকর্তা, স্কুল ও কলেজের শিক্ষক, ডাক্তার, বিচারক, আইনজীবি, সাংবাদিক, নির্মাতা, রাজনৈতিক নেতা, কমিউনিটি লিডার, সাংস্কৃতিক কর্মী, সেচ্ছাসেবক, ছাত্রসহ মোট ২’শ ৫০ জন মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা সম্বলিত প্যানা এবং লেখার মাধ্যমে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ও তথ্য প্রযুুক্তি ব্যবহার করে নারী-পুরুষ সমতায় ঐক্যবদ্ধভাবে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে সদা সচেতন থাকার
আহ্বান জানিয়েছেন যাতে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ, শারীরিক, মানসিক ও মৌখিক নির্যাতন বন্ধকরণ, যৌন হয়রানী,
ধর্ষণ, অনলাইন বুলিং ও হয়রানী বন্ধ করা, গৃহস্থালির কাজে জেন্ডার বৈষম্য ও পুরুষের
অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে পারিবারিক বৈষম্য দূরীকরণ, বাল্য
বিবাহ বন্ধ, এছাড়াও নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা। আবার অনেকেই জরুরি হেল্পলাইন নাম্বার সহ নারী সহায়তা কেন্দ্রের তথ্য শেয়ার করেছেন যাতে করে এই লকডাউনেও
নারীরা সহযোগিতা পেতে পারে। অনেক অংশগ্রহনকারী নির্যাতিত নারীদেরমনোবল না হারাতে সাহস জুগিয়েছেন এবং সহিংসতার শিকার হয়ে তাদের জীবন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলে নিরব না থেকে কাছের কারো সাথে শেয়ার করতে
হবে এবং সাহায্য নেয়ার ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছেন। করোনার এই ঘরবন্দী সময়টাকে কাজে লাগিয়ে লাখো মানুষের মাঝে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে শুরু করা এই ক্যাম্পেইনের উদ্যোক্তা তামিমা নাসরিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রায় ৮৭% নারী নিজ পরিবারের মধ্যে কোন না কোনভাবে নির্যাতিত হয়। কোভিড ১৯
মহামারীতে সেই সংখ্যা আরও দ্বিগুন হয়েছে যা কিনা স্বাভাবিক এর থেকেও বেশি।
তাছারা এসময় চলা ফেরায় নিষেধাজ্ঞা ও সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল থাকায় সারভাইভাররা ঘরের বাইরেও যেতে পারছেনা। আবার তারা যেহেতু তাদের নির্যাতন কারীর সাথে একই বাসায় অবস্থান করছে তাই তাদের পক্ষে অন্য কারও কাছ থেকে
সাহায্য পেতেও অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হতে হচ্ছে । এমতাবস্থায় নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরির জন্য উক্ত ক্যাম্পেইন এর শুরু করা হয়েছিল এবং সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণে এটি সমাজে ইতিবাচক একটি প্রভাব ফেলেছে যার মাধ্যমে লাখো মানুষের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। উক্ত ক্যাম্পেইন এর বিষয়ে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, করোনার এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে ঘর থেকেই অনুষ্ঠিত এই অনলাইন ভিত্তিক ক্যাম্পেইন এর উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় যাতে সমাজের নানাশ্রেণীপেশার মানুষের পাশাপাশি বগুড়া জেলা পুলিশেরও অনেক সদস্য প্রাণবন্তভাবে অংশ নিয়েছিল। নারী-পুরুষের সমতা বিধানের মাধ্যমে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সর্বদা সকলকে ইতিবাচক মানসিকতায় ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করতে হবে এবং সকলের সদিচ্ছা ও সচেতনতায় একদিন অবশ্যই এই সোনার বাংলায় সকল ধরণের নির্যাতন সমূলে দূর হবে মর্মে মন্তব্য করেন বগুড়া জেলা পুলিশের এই কর্ণধার।