অতি প্রয়োজন ছাড়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঈদে বাড়ি না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। শুক্রবার (২৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামনে ঈদুল আযহা, গণপরিবহন নিয়ে আমরা একটা সংকটের মধ্যে আছি। একদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, অপর দিকে বন্যা, এ রকম একটা পরিস্থিতিতে সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌ পথে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যতটুকু সম্ভব সঠিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে নৌ পথে ঈদ যাত্রাটাকে আমরা সুন্দর করতে চাই।
যাত্রীদের উদ্দেশ্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমি যাত্রী সাধারণের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই, প্রয়োজন ছাড়া আমরা যেন এই যাত্রাটাকে পরিহার করি। কারণ বেঁচে থাকলে আমরা অনেক ঈদ উদযাপনের সুযোগ পাবো। কাজেই তাড়াহুড়া করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই যাত্রায় না যাওয়াটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গিয়ে অনেক সাংবাদিকই দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে বলে দাবি করেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আজকে দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমকর্মী তারা বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়ে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। দেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে।
তিনি বলেন, আমাদের কষ্ট লাগে যখন দেশের কথা বলতে গিয়ে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে অনেক সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছেন। এই অনুভূতিকেও যদি অনুধাবন করতো, যে আমার একজন সহকর্মী আমার একজন সহযোদ্ধা বাংলাদেশে এই পরিস্থিতির মধ্যে আছে তাহলে অন্তত পক্ষে দেশবিরোধী এই কথাবার্তাগুলো বলতো না।
করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলছে দাবি করে সরকারের এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেকেরই এই অগ্রগতি সহ্য হচ্ছে না। তাই তারা সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে।
তিনি বলেন, আজকে অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের অর্থনীতি নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে। তাহলে কিভাবে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জন্য এত কোটি টাকা অনুদান দিলেন। তাহলে কিভাবে এত বড় বাজেট পাশ হলো? কিভাবে আমরা তিন মাস করোনাভাইরাসের দুর্যোগের মধ্যেও গত বাজেটের ৯০ ভাগ বাস্তবায়ন করতে পেরেছি? কিভাবে পদ্মাসেতুসহ সরকারে এত বড় বড় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন? এগুলো কিভাবে সম্ভব। বাংলাদেশের কোন জায়গায় বেতন না পেয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কার্যক্রম নৌ পরিবহনে চলমান। আমারা আরও ২৫শত কোটি টাকার ডিপিপি সংশোধন করার জন্য একনেকে পাঠিয়েছি। তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দূর্বল হয়ে গেল কিভাবে?
সরকারের সমালোচকদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গতকালও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুজিববর্ষে বাংলাদেশের একজন লোকও গৃহহীন থাকবে না। সাহেদ-সাবরিনা কর্মকাণ্ডে নাকি বিশ্বের কাছে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এতে নাকি আমাদের যে সকল ভাইয়েরা বিদেশে আছে তারা নাকি সংকটে পড়বে। বাংলাদেশকে পঁচাত্তর সালে শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল, গর্ভবতী মাকে হত্যা করা হয়েছিল এই ধরণের মানুষের তখন কোথায় ছিল। বাংলাদেশের ইমেজ যারা পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের পরে নষ্ট কারা হয়েছিল! পরবর্তী ধারাবাহিক ভাবে যারা জঙ্গিবাদ, শায়েখ আব্দুর রহমান, বাংলাভাই সৃষ্টি করেছে তারা এখন বলে আমাদের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট হবে না। কারণ, এখানে আছে পৃথিবীর অন্যতম ডায়নামিক নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এটা আমার কথা নয়, সমগ্র পৃথিবীর কথা।
তিনি আরো বলেন, যারা বাংলাদেশের এই সম্ভাবনা ও উন্নয়ন দেখে কষ্ট পান, তারা এই সমস্ত কথা বানিয়ে বলছেন। কারণ তাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশকে বিকলাঙ্গ করা। তাদের লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। আমরা যখন জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছি, তখন তারা ব্যর্থ রাষ্ট্র উদযাপনের করতে চাচ্ছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রয়াত সদস্যদের সম্মানে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রয়াত সদস্যদের পরিবারের মধ্যে আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী।
সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীবুর রহমানের সংঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সানলাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাত হোসেন সোহাগ, সংগঠনের সহসভাপতি নজরুল কবীর, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেলিমুল আলম বিপ্লব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানি, কবির আহমেদ খান।