কোরবানি আরবি শব্দ। অর্থ আত্মত্যাগ ও নৈকট্য লাভ। এর মাধ্যমে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের একচ্ছত্র অধিপতি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন করার একটি বিশেষ মাধ্যম।
কোরবানির কথা পবিত্র কোরআন-হাদিসে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলাই সালাম এর পুত্রদ্বয় হাবিল ও কাবিলের বৈবাহিক দ্বন্দ্বের নিরসনে মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম কোরবানির মাধ্যমে এর ফায়সালা নির্ধারণ করেন।
পরবর্তীতে মুসলিম মিল্লাতের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম কে স্বপ্নের মাধ্যমে কোরবানির আদেশ প্রদান করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে পরীক্ষা করতে মনস্থ করেন।
অবশ্য কোরআন কারীমে সরাসরি স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম কে কোরবানি করার আদেশ করা হয়নি। বরং উদ্দেশ্য ছিল যে নিজের পক্ষ হতে জবেহ করার সমস্ত আয়োজন সমাপ্ত করে জবেহ করতে উদ্যত হয়ে যাও ।
বস্তুত এ নির্দেশ সরাসরি মৌখিক দেয়া হলে তাকে পরীক্ষা করা হতো না। তাই তাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে যে ,তিনি পুত্রকে যবেহ করছেন ,এতে হযরত ইব্রাহিম বুঝে নিলেন যে, যবেহ করার নির্দেশ হয়েছে ।
এজন্যই তিনি জবেহ করতে পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন ।এভাবে পরীক্ষা পূর্ণতা লাভ করল এবং স্বপ্ন সত্যে পরিণত হল । অথচ মৌখিক আদেশের মাধ্যমে হলে তাতে পরীক্ষা হত না। অথবা পরে রহিত করতে হতো ।স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম সবচেয়ে প্রাণাধিক পুত্র হযরত ইসমাইলকে কোরবানি করতে উদ্যত হন । এতে আল্লাহ পাক খুশি হয়ে তদস্থলে একটি বেহেশতী দুম্বা প্রেরণ করি।
এরশাদ হচ্ছে:
অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহীম তাকে বলল :হে বৎস আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে যবেহ করছি। এখন তোমার অভিমত কি দেখো।
সে বলল : হে পিতা :আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন ।
যখন পিতা পুত্র উভয়ই আনুগত্য প্রকাশ করল ,এবং ইব্রাহিম তাকে যবেহ করার জন্য শায়িত করল তখন তাকে ডেকে বললাম, ইব্রাহিম তুমিতো স্বপ্নকে সত্যি পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
নিশ্চয়ই এটা একটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা ।
আমি তার পরিবর্তে দিলাম জবেহ করার জন্য এক মহান জন্তু।
আমি তার জন্য এ বিষয়টি পরবর্তীদের জন্য রেখে দিয়েছি যে, ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।
সুরা সাফফাত আয়াত নম্বর ১০৩—১০৯।
কোরবানির ফজিলত:-
কোরবানির জন্তুর শরীরে যত পশম থাকে প্রত্যেকটি পশমের বদলে এক একটি নেকি পাওয়া যায় (মুসনাদে আহমদ)
কোরবানির দিনে কুরবানী করাই সবচেয়ে বড় এবাদত (তিরমিযী)
কাদের উপর কোরবানি দেয়া ওয়াজিব :—-
১০ ই জিলহজের ফজর থেকে ১২ই জিলহজ এর সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থাৎ কোরবানির দিনগুলোতে যার নিকট সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
তাৎপর্য ও শিক্ষা
# আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করার সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকারের মানসিকতা সৃষ্টি হয়।
# এর দ্বারা মানুষের মধ্যে তাকওয়া তথা খোদাভীতি সৃষ্টি হয়
#এর মাধ্যমে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আত্মসমর্পণ করে স্বীয় রবের দাসত্ব ও কর্তৃত্বকে স্বীকার করে নেয়।
# এর দ্বারা অহংকার আমিত্বকে বিসর্জন দেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়।
#এর দ্বারা পাপের পঙ্কিলতা হতে নিজেকে দূরে রাখার শিক্ষা দেয়
#এর মাধ্যমে শিরক ও কুফরকে অস্বীকার করে আল্লাহ পাকের হুকুম পালনে উদ্বুদ্ধ হয়।
# মানুষ বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা লাভ করে #আত্মোৎসর্গের চেতনায় নিজেকে উজ্জীবিত করার সারাবান তহুরা পান করতে সক্ষম হয়।