রাজশাহী মহানগরীতে রয়েল চিটিং গ্রুপের এর প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে হাতে-নাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।আটক চার প্রতারক হলেন, গোপালগঞ্জের মোকসুদপুর থানার ঘুনসি মধ্যপাড়া এলাকার আফছার তালুকদারের ছেলে আলমগীর হোসেন (২৯), ঘুনসি দক্ষিণপাড়ার মৃত ছহেদ সরদারের ছেলে লুৎফর সরদার (৩৫), বামনডাঙা বড়বাড়ি এলাকার মৃত মাজেদ শেখের ছেলে বখতিয়ার হোসেন (৫১) এবং ব্যাটক্যামারী গ্রামের মৃত গুনজর আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৩২)। বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর বর্ণালী মোড় এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে সৌদি আরবের ১০০ রিয়ালের তিনটি নোট এবং দুটি গামছায় বিশেষ কায়দায় রাখা কিছু খবরের কাগজ উদ্ধার করা হয়েছে। খবরের কাগজগুলো তারা সৌদি রিয়াল হিসেবে দিয়ে প্রতারণা করতেন। এদের আটকের সময় দুইজন পালিয়ে গেছেন। গত ৯ জুলাই দুপুরে পাঠানপাড়া এলাকার কামরুল হাসান (৫৮) নামে এক ব্যক্তির কাছে গিয়ে ১০০ রিয়ালের বিনিময়ে টাকা দেয়ার অনুরোধ করেন। তারা বলেন, টাকা পেলে তারা ওষুধ কিনবেন। তবে পরেরদিন টাকা দিলেই হবে। কামরুল হাসান এই ১০০ রিয়াল নেন এবং পরদিন মানি চেঞ্জারে গিয়ে রিয়ালটি ভাঙান। আসল রিয়ালের কারণে তিনি টাকা পান। এরপর ফোন করে ওই প্রতারক চক্রকে টাকা নিতে বাসায় ডাকেন। তারা বাসায় গেলে কামরুল ৮০০ টাকা দেন। কিন্তু প্রতারকরা নেন ৪০০ টাকা। এভাবে তারা বিশ্বাস স্থাপন করেন। এরপর চক্রটি আবার কামরুলকে ফোন করে বলেন, তাদের কাছে ৩ লাখ টাকা সমমূল্যের রিয়াল আছে। সেগুলোও তাকে দিতে চান। কামরুল রাজি হন। ১৪ জুলাই হেতেমখাঁ কলাবাগান এলাকায় প্রতারকরা কামরুলের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নেন। এ সময় তাকে রুমাল দিয়ে বাধা একটি পোটলা দেয়া হয়। কামরুল সেটি নিয়ে বাসায় এসে দেখেন, ভেতরে সব খবরের কাগজ। রিয়াল নেই। এরপর প্রতারণার বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানান। পুলিশ এই চারজনকে আটক করে। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চার প্রতারক জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রতারণা করে তারা প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সৌদি রিয়াল ছাড়াও তারা সোনার গয়না বলে নকল গয়না কিংবা নকল সোনার বার দিয়ে থাকেন। প্রতারকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের ভাড়া বাসায় তল্লাশি চালিয়ে প্রতারণা করে নেয়া টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার রশিদ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতারকরা প্রতারণার মাধ্যমে সংগ্রহ করা টাকা তাৎক্ষনিকভাবে আত্মীয়-স্বজন এবং নিজেদের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমা দিতেন। বিকাশের মাধ্যমেও টাকা পাঠিয়ে দিতেন। জমা রাখতেন নিজেদের ব্যাংক হিসাবেও। সেসব টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কামরুল হাসানের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। এছাড়া সম্প্রতি আনিসুর রহমান নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ এবং নান্নু হাসান নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় তারাও আলাদা দুটি মামলা করেছেন। এই তিন ভুক্তভোগীই প্রতারকদের শনাক্ত করেছেন। আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে ঢাকা, সিলেট, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, ফেনী, কুমিল্লা, রংপুর, যশোর ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন থানায় প্রতারণা এবং বিদেশী মুদ্রা জালিয়াতের আছে। সেগুলো আদালতে বিচারাধীন। তারা বার বার গ্রেপ্তার হন। কারাগারে যান। আবার জামিনে বের হয়ে প্রতারণা শুরু করেন।