জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেষ্টা

পাবনায় পদ্মা-যমুনা নদীর পানি ফুলে-ফেঁপে উঠছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে ।
এ দিকে এ দুটি বড় নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার বেড়া, সুজানগর ও ঈশ্বরদী উপজেলায় ব্যাপক নদী ভাঙন দেয়া দিয়েছে। এ সব এলাকার নিচু এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ায় শত শত বিঘা জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কয়েকটি এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতি বছর নদীর পানি বাড়ার সময় এবং পানি নেমে যাওয়ার সময় এ সব এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। সবচেয়ে ভাঙন প্রবণ এলাকা জেলার বেড়া এবং সুজানগর উপজেলা। এ ছাড়া ঈশ্বরদী উপজেলাতেও পদ্মার বাম তীর ভাঙনের কবলেলে পড়ে প্রতিবছরই। সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার হয়েছে বেড়ার ঐতিহাসিক নগরবাড়ি এলাকা।
বেড়া উপজেলার নগরবাড়িঘাট এলাকার নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, রূপপুর, ঢালারচর ইউনিয়নের কয়েকশ’ গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় নগরবাড়ি ঘাট এলাকার হাজার হাজার ঘর-বাড়ি, স্কুল, মসজিদ-মাদ্রাসা, হাট- বাজারসহ কয়েকশ’ স্থাপনা এবং হাজার হাজার বিঘা জমি ও জনপদ নদীগর্ভে চলে গেছে।ভাঙন অব্যাহত থাকায় নগরবাড়ি ঘাট অন্তত ১০ কিলোমিটার বাম তীরে চলে এসেছে। এ সব এলাকার হাজার হাজার মানুষ সর্বশান্ত হয়ে মুজিব বাঁধ এবং সরকারি উঁচু ও খাস জায়গায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে।
এলাকাবাসী জানান, গেল দু’বছর ভাঙন একটু কম ছিল।
পাশাপাশি বন্যাও তেমন আঘাত হানেনি এ সব এলাকায়। কিন্তু এবারে পদ্মা-যমুনা তার চির আগ্রাসীরূপ নিচ্ছে। ফুলে- ফেঁপে উঠছে এ বড় দুটি নদীর পানি। নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে নগরবাড়ি এলাকায় সদ্য স্থাপিত মেরিন একাডেমি, নগরবাড়ি নদীবন্দর, নির্মাণাধীন বাফার গোডাউন, ঐতিহাসিক ধোবাখোলা করোনেশন (নাটিয়াবাড়ি) স্কুল এন্ড কলেজ হুমকির মুখে পড়বে।
পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এবং নগরবাড়ি ঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে বেড়া এবং সুজানগরে যমুনা ও পদ্মা নদীর বাম তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ৩ দিন ধরে বেড়া উপজেলার যমুনার বাম তীরের রাকশা, প্যাঁচাকোলা, চরপ্যাঁচাকোলা, পাইকান্দা, মোহনপুর, নটাখোলা, মধুপুর, ঘোপসিলিন্দা গ্রামে এবং সুজানগর উপজেলার পদ্মার বাম তীরের সাতবাড়িয়া, গুপিনপুর, মাঝপাড়া, রাইপুর, হাটমালিফা, ভুলচন্দপুর, হাশামপুর ও খলিলপুরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাউবো কয়েকটি এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে।
এ দিকে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন জানান, পদ্মা নদীর পানি পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২.২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে
প্রবাহিত হচ্ছে। ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকন্ডা ও সাঁড়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ সব এলাকার নিচু জায়গা বন্যাকবলিত হওয়ায় শত শত বিঘা জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পাবনার বিস্তীর্ণ এলাকা এবার বন্যাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।