জীবন এবং পেশা এই দুইয়ের মধ্যে মানবতা আর দায়িত্বকেই বেছে নিয়েছেন সেবাখাত সংশ্লিষ্টরা। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নিরাপদ ও সুস্থ থাকতে সবাই যেখানে নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছেন সেখানে নিয়মিত বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন,পুলিশ,জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তেমনি এই সংকটের শুরু থেকেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার চিকিৎসক,নার্স-মিডওয়াইফ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর সংক্রমণ প্রতিরোধে তাদের সঙ্গে সমানতালে সারাদিন কাজ করে যাওয়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অদম্য চার করোনা যোদ্ধা হলেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) মো:মোখতার হোসেন ও মামুনুর রশিদ,এমটিইপিআই অশোক রায় ও এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মিলন রায়।
পরিবারের কথা না ভেবে করোনা সংকটের শুরু থেকেই সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই তারা কাজ করছেন। করোনা রোগী সনাক্তের জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরত কিংবা করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই তারা ছুটে যাচ্ছেন নমুনা সংগ্রহ করতে। আবার করোনা পজিটিভ আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সংস্পর্শে আসা পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ এবং হাসপাতালে আসা উপসর্গ থাকা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের পর দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পৌঁছে দেন তারা।
করোনা যুদ্ধের অদম্য এই চার যোদ্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ও উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডা.আবু রেজা মো:মাহমুদুল হকের নির্দেশনা অনুযায়ী দিন-রাত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও আক্রান্তদের নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
পরিবারে কথা চিন্তা না করে নিয়মিত নমুনা সংগ্রহের কাজ করে যাওয়া এই চার অদম্য ও পরিশ্রমী করোনা যোদ্ধা জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছি। সরকারি চাকরির পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবা করতে পেরে আমরাও গর্বিত।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১৩ জুলাই) পর্যন্ত খানসামা উপজেলা থেকে মোট ৪৯৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে মোট ৪২ জনের পজিটিভ রিপোর্ট আসে। পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন ৩৪ জন ও মৃত্যু ১ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা.শামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, ঈদসহ অনেক আনন্দকে পাশ কাটিয়ে দিনের পর দিন জীবনের ঝুুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এই চার স্বাস্থ্যকর্মী। তাদের এই পরিশ্রম নিশ্চয়ই প্রশংসনীয় ও স্মরণীয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা.আবু রেজা মো:মাহমুদুল হক জানান, দেশে নমুনা পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) মোখতার হোসেন ও মামুনুর রশিদ,এমটিইপিআই অশোক রায় ও এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মিলন প্রতিনিয়ত নমুনা সংগ্রহ ও ল্যাবে পৌঁছানো এবং করোনা প্রতিরোধে সাহসিকতার সহিত সকল কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের সেবা দেওয়ার এই মানসিকতা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এবিষয়ে ইউএনও আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম জানান, পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে এই সংকটময় সময়ে করোনা যুদ্ধের অগ্রসৈনিক এই চার স্বাস্থ্যকর্মীরা মানবতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা নি:সন্দেহে অভিবাদন পাওয়ার যোগ্য।