করোনার নমুনা পরীক্ষা ও রিপোর্ট প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারনে জরুরী ভিত্তিতে পাবনায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন প্রয়োজন বলে বিশিষ্ঠজনরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আশেপাশের জেলাগুলোতে ইতোমধ্যে পিসিআর ল্যাব স্থাপন হলেও পাবনায় এখনও ল্যাব বসেনি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঈশ্বরদী ইপিজেড. পাকশী বিভাগীয় রেলওয়েসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগ দিতে আসা লোকদের করোনার নমুনা পরীক্ষা ছাড়া যোগ দিতে দেয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে রূপপুর প্রকল্পের কাজ এই মূহুর্তে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে প্রতিদিন এখানে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। প্রকল্প এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করায় কাজে যোগ দিতে আসাদের করোনা পরীক্ষার সনদ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে স্টিক ও এ্যাম্পুল সংকটের সাথে সাথে রাজশাহী ও ঢাকা ল্যাব হতে নমুনা পরীক্ষা করেতে সময় লাগছে ১০-১২ দিন। আক্রান্তদের অনেকেরই কোন উপসর্গ নেই। তাই নমুনা দানের পর আইসোলেশনে না থেকে সর্বত্র অবাধে চলাফেরা করছে। রিপোর্ট পজিটিভ আসার মধ্যবর্তি সময়ে তাদের দ্বারা আরো অনেকেই সংক্রামিত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে ঈশ্বরদীর রূপপুরে মেডিকেয়ার ক্লিনিকে রাশিযান সাব-ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দ্রুত রিপোর্ট প্রাপ্তির জন্য শ্রমিকদের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। মেডিকেয়ার ক্লিনিক ব্রাহ্মনবাড়িয়া মেডিকেল কলেজের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। ব্রাহ্মনবাড়িয়া হতে প্রাপ্ত রিপোর্ট সঠিক হলেও সরকারের কোন সংস্থার অনুমোদন না থাকায় ক্লিনিকের মালিককে বৃহস্পতিবার প্রতারণার মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। এরআগে ঢাকার প্যাথ ল্যাবের মাধ্যমে প্রায় ৮০০ নমুনা পরীক্ষা করা হলেও সরকারি অনুমোদন না থাকায় সিভিল সার্জন অফিস এসব কোন রিপোর্টই গ্রহন করেনি। বৃহস্পতিবার সচেতন পাবনাবাসীর ব্যানারে অবিলম্বে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবীতে মানববন্ধন ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর পাবনা জেলার দায়িত্বরত রেলপথ মন্ত্রণালযের সচিব সেলিম রেজা গত ৪ঠা জুলাই ঈশ্বরদীতে এক মতবিনিময় সভায় অচিরেই পাবনায় ৩টি পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় হতে ২টি এবং সরকারিভাবে আরো ১টি পিসিআর ল্যাব বসানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে পাবনায় ল্যাব স্থাপন করতে কতোদিন সময় লাগতে পারে এবিষয়ে কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবিষয়ে শুক্রবার জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুদানে দুটি পিসিআর মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত হযেছে। রূপপুর প্রকল্পের জন্য একটি এবং অপরটি দিয়ে এলাকার সর্বসাধারণের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ল্যাব বসানোর জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
রূপপুরের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, ইতোপূর্বে মূখ্য সচিবের নের্তৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পাবনা মেডিকেল কলেজে দুটি পিসিআর মেশিন ও ল্যাব বসানোর জন্য অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অনুদান হিসেবে অর্থ প্রদানের বিষয়ে সমর্থন দিয়েছে। পাবনায় নিরবচ্ছিন্নভাবে করোনা পরীক্ষা ও দ্রুত রিপোর্ট প্রাপ্তির জন্য জরুরী ভিত্তিতে পিসিআর মেশিন ও ল্যাব বসানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে প্রকল্প হতে শুধু মেশিন ও ল্যাব বসানোর অর্থায়ন করা হবে। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পাবনার জেলা প্রশাসক সরকারিভাবে এই ল্যাবরোটারী ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করবেন।
জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, ল্যাব বসানোর বিষযটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমেরিকা হতে মেশিন আসবে। রবিবার এই বিষয়ে জুমিং কনফারেন্সের মাধ্যমে আরো একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। শুধু ল্যাব বসালেই হবে না, এর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: মেহেদী ইকবাল অন্যান্য জেলার তুলনায় পাবনায় জরুরী ভিত্তিতে পিসিআর ল্যাব বসানো প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থাপনা। এখানে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের দুই সহস্রাধিক বিদেশী এবং দেশীয় প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রতিদিন কাজ করছে। এই প্রকল্প সরকারের স্বাস্থ্য বিধি কঠোরভাবে মেনে চলায় প্রকল্পে কাজে যোগ দিতে আসা মানুষের করেনা পরীক্ষার জন্য চাপ অনেক বেশী। বিদেশীদের বিষযটি বিবেচনায় নিয়ে রূপপুরের জন্য আলাদাভাবে পিসিআর ল্যাব বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। মেশিন ও ল্যাবের ডকুমেন্টশন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আগেই পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।