দিনাজপুরের খানসামায় সরকারি খাদ্য গুদামে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। সোমবার (৫ জুলাই) পর্যন্ত গত ৩৬ দিনে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের লটারিতে বিজয়ী ৬৭৫ জন কৃষকের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৭ জন কৃষক সরকার নির্ধারিত ২৬টাকা কেজি দরে খাদ্য গুদামে এসে ধান বিক্রি করেছেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ১মে থেকে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ধান সংগ্রহ অভিযানের শেষ দিন আগামী ৩১ আগস্ট। গত ৩৭ দিনে এখানে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৩৭ মেট্রিক টন,যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র চেয়ে অনেক কম। এর মধ্যে সময়সীমা প্রায় অর্ধেক গেছে। বাকি অর্ধেক সময়ে ধান কীভাবে সংগ্রহ হবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার তালিকাভ‚ক্ত কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, একবার রোদে ধান শুকিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি মণ ধান ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকা দামে বাড়ি থেকেই বিক্রি করা যায়। কিন্তু খাদ্যগুদামে এই ধান বিক্রি করতে হলে তিনবার রোদে শুকাতে হবে। ধানের আর্দ্রতা সঠিক আছে কি না, তা দেখতে নমুনা নিয়ে কয়েকবার গুদামে যাওয়ার ঝামেলা, পরিবহন খরচ এসবের কারণেই সরকারী গুদামে ধান বিক্রয়ে কৃষকদের মাঝে তেমন আগ্রহ নেই ।
তারা আরো জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম বেড়েছে। তাছাড়া বাজারে চালের দামও কিছুটা বেশি। ভোগান্তি এড়াতেই কৃষকরা গুদামে ধান বিক্রিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে কৃষকেরা হাটেও ধান বিক্রি করছেন না। আমন ধান পাওয়ার আগে আগে তাঁরা বড়িতে মজুতকৃত ধান বিক্রি করবেন বলে জানান।
খানসামা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এদিব মাহমুদ বলেন, গত ২জুন ধান সংগ্রহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ধান কেনা হয়েছিল। গত ৩৬ দিনে লটারিতে বিজয়ী খানসামা গুদামে তালিকাভুক্ত ২৫৩ জন কৃষকের মধ্যে ১৬ জন কৃষক সরকারী মূল্যে ধান বিক্রি করেছেন।
পাকেরহাট খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৌমিত্র বসাক বলেন, পাকেরহাট গুদামে ৪২২ জন কৃষকের মধ্যে ২১ জন খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করেছেন। এ অবস্থায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এজন্য ২/১ দিনের মধ্যে তালিকাভ‚ক্ত সকল কৃষকের জন্য ধান সংগ্রহ অভিযান উন্মুক্ত করা হলে ধান সংগ্রহ করা যাবে।
উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক (অ.দা.) ফিরোজ আহমেদ মোস্তফা বলেন, হাট-বাজারগুলোতে ধানের দাম এবার তুলনাম‚লক বেশি হওয়ার কারণেই ধান গুদামে নিয়ে আসার জন্য কৃষকেরা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
ইউএনও এবং খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও মনিটরিংকমিটির সভাপতি আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম ধান সংগ্রহ হয়েছে। সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকদের আগ্রহী করার লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। প্রয়োজনে ধান সংগ্রহে লটারি বিজয়ীসহ সব কৃষকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।