১৯৫৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। এ হিসেবে মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। রাজশাহীতেই কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর খ্যাতনামা ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে যান। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল সংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়। সেই শুরুর পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘হায়রে মানুষ রঙের ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এন্ড্রু কিশোর ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের আরও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন উপমহাদেশের খ্যাতনামা এই শিল্পী।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী লিপিকা কিশোর ইতি ছাড়াও ছেলে জে এন্ড্রু সপ্তক (২৪) এবং মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা (২৬) রেখে যান। স্ত্রী পাশে থাকলেও দু’সন্তানই বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করেন। মেয়ে সংজ্ঞার পড়াশোনা প্রায় শেষের পথে। ইতোমধ্যে তারা বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছেন। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা বিমানের টিকেট পাননি বলে পারিবারিক ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। তারা দ্রুত দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। টিকিট মিললেই দেশে ফিরে বাবার সৎকারে অংশ নেবেন। তার মেয়ে ও ছেলে দেশে আসার পর তাঁর দাফনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে।
তবে না ফেরার দেশে যাওয়ার আগে স্বজনদের বলে যান, ‘মায়ের পাশেই যেন সমাহিত করা হয় তাকে’। তাঁর মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গের হিমঘরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।