নাটোর প্রতিনিধি
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে গভীর রাতে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী যাত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে ট্রেন থামিয়ে তাকে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে পাঠিয়েছেন ওই ট্রেনের পরিচালক ও জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কর্তৃপক্ষ। ওই নারী ফুটফুটে এক ছেলে সন্তানের মা হয়েছেন। বর্তমানে মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ রয়েছেন। রবিবার (৫ জুলাই) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটেছে নাটোর রেলওয়ে ষ্টেশনে।
নাটোর রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার আশোক চক্রবর্তী জানান, রবিবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের এক নারীযাত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে নাটোর স্টেশন ষ্টপেজ না থাকলেও মানবিক কারণে ও জাতীয় জরুরি সেবার নির্দেশে দ্রুত তাকে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য থামানো হয়। এরপর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে পাঠানো অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত ২টার দিকে ওই নারীকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় জরুরি সেবার কর্মকর্তা অ্যাডিশনাল ডিআইজি তবারক উল্লাহ জানান, রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত ‘জাতীয় জরুরি সেবা’ ৯৯৯ নম্বরে একটি ফোন আসে। কলার নিজেকে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের অ্যাটেনডেন্ট মোহাম্মদ আলী (৩১) বলে পরিচয় দেন। তিনি জানান, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর থেকে রাতে ছেড়ে এসেছে, কুড়িগ্রাম যাচ্ছে।
ট্রেনে একজন নারী যাত্রী প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন এবং তার রক্তপাত হচ্ছে। তিনি ইতোমধ্যে ট্রেনে কোনও ডাক্তার যাত্রী আছেন কিনা খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু ট্রেনে কোনও ডাক্তার যাত্রী ছিল না। ট্রেনটি বর্তমানে পাবনা বাইপাস অতিক্রম করছে। ট্রেনটির পরবর্তী স্টেশন বগুড়ার সান্তাহার পৌঁছাতে আরও দুই-আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু সেই পর্যন্ত ওই নারীকে এভাবে নেওয়া যাবে না। তাহলে যেকোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু ধারেকাছে কোনও হাসপাতাল নেই। তিনি জাতীয় জরুরি সেবার কাছে সহযোগিতা চান।
তখন জাতীয় জরুরি সেবা থেকে অ্যাটেন্ডারকে প্রশ্ন করা হয়, সামনে আর কোন স্টেশন রয়েছে? তখন তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেনটি নাটোর স্টেশন অতিক্রম করবে। ট্রেনটি যদিও নাটোর স্টেশনে থামার কথা নয়, তবুও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হলে তারা রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ট্রেনটি নাটোর স্টেশনে থামানো হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
৯৯৯ নম্বর থেকে তাৎক্ষণিক নাটোর সদর হাসপাতালে যোগাযোগ করে রেলস্টেশনে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় । রাত পৌনে ২টায় ট্রেনটি নাটোর স্টেশনে থামে এবং প্রসূতি রোগীকে দ্রুত নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রসূতির স্বামী নাছির মোল্লা জানান,রবিবার (৬ জুলাই) রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে নওগাঁর উদ্দেশে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে তিনি তার স্ত্রী কামরুন্নাহার (৩২) কে নিয়ে ঢাকার কমলাপুর থেকে যাত্রা করেন। পথে স্ত্রীর প্রসব বেদনা এবং রক্তপাত শুরু হয়।রোববার রাত ২টা ৩০ মিনিটে নাটোর সদর হাসপাতালে তার স্ত্রী একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে ইসরাফ।
নবজাতক এবং তার মা দুই জনই বর্তমানে সুস্থ আছেন।নাছির মোল্লা তার স্ত্রী ও সন্তানের সংকটময় মুহূর্তে সহায়তা করার জন্য ৯৯৯ এর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।