সঞ্জু রায়, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: ‘বাড়ি করলে আমার থেকেই আপনাকে বালু, ইট, সিমেন্ট কিনতে হবে নাহলে আপনাকে এলাকা ছাড়া করবো’ অথবা আমাদের এলাকায় বাড়ি করতেছেন আর আমাদের চাঁদা দিবেন না তা কিভাবে হয়? কাজ চালাতে গেলে টাকা দেন না হলে খবর আছে….. এইরকম হাজারো হুমকিস্বরুপ ধমক বা হুশিয়ারী বাড়ি বা ভবন নির্মাতাদের শুনতে হয় হরহামেশাই যা দেশব্যাপী
কমবেশী প্রতিটি স্থানেই রয়েছে। নিজের টাকায় ভবন নির্মাণ করেও অনেক সময় অন্যের ইচ্ছাতে পরিচালিত হতে হয় নির্মাতাদের, তাদের দু:খ দুর্দশার সামান্য কিছু অভিযোগই আসে থানা বা পুলিশ পর্যন্ত কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চাঁদাবাজদের এমন আচরণ গোপন রাখতে বাধ্য হয় বাড়ি নির্মাতারা।
এমতাবস্থায় বিট পুলিশিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘পুলিশ যাবে জনগণের কাছে’ স্লোগানে বগুড়ায় বাড়ি বা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্মাণসামগ্রী ক্রয়ে চাঁদবাজদের দৌরাত্ম বন্ধে ব্যতিক্রমধর্মী এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বগুড়া জেলা পুলিশ। বাড়ি নির্মাতারা যেখান থেকে ইচ্ছা সেখান থেকে দেখে শুনে বালু,
ইট, সিমেন্ট, রডসহ যেকোন নির্মাণসামগ্রী ক্রয় করবে আর এক্ষেত্রে যদি তাকে কেউ প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবেও প্রভাবিত করে বা তার নির্মাণকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চাঁদা দাবি করে তাহলে তাদের কে দমনে জিরো টলারেন্স ঘোষণা
দিয়েছে বগুড়া জেলা পুলিশ আর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে নিজে সরাসরি এই চাঁদাবাজ দমনের অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) যাতে বেশ প্রশান্তি ও স্বস্তি পেয়েছে বর্তমানে জেলার সকল
বাড়ি বা ভবন নির্মাতারা।
বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী জানান, জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে মফস্বল এলাকাগুলোতে সকল থানার অফিসার ইনচার্জদের মাধ্যমে ১৮৮টি এবং জেলার প্রাণকেন্দ্র বগুড়া
সদরেই সাবেক অফিসার ইনচার্জ এস.এম বদিউজ্জামানের ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৩৩০টি সর্বমোট এখন পর্যন্ত জেলায় ৫১৮টি নির্মাণাধীন ভবনে জেলা
পুর্লিশের একটি সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তির প্যানা টাঙ্গানো হয়েছে , যাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে বাড়িওয়ালা নিজ পছন্দমত সুবিধাজনক জায়গা থেকে যেকোন নির্মাণসামগ্রী ক্রয় করবেন। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন প্রকার নির্মাণসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করলে অথবা চাঁদা দাবি করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেখানে জেলা পুলিশ সুপার, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ এর যোগাযোগের নম্বর সংযুক্ত করে যেকোন চাঁদাবাজি সংক্রান্ত অভিযোগ থাকলে তা জানানোর জন্যে উদ্বার্ত
আহব্বান জানানো হয়েছে। সেই সাথে জেলা পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে
বিভিন্ন এলাকাতে আইনশৃঙ্খলা সভা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই বার্তা এলাকাভিত্তিক সকলকে পৌঁছানো হয়েছে মর্মেও জানান এই কর্মকর্তা।
দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এই সমস্যা সমাধানে জেলা পুলিশের সাহসী এই উদ্যোগের প্রশংসা এবং এই কাজে জেলা পুলিশকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতার
প্রতিশ্রুতি দিয়ে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, বাড়ি বা ভবন নির্মাণে নির্মাতাদের হয়রানির দৃশ্য
দীর্ঘদিনের। শুধুমাত্র বালু ব্যবসা তথা এই সংক্রান্ত দ্বন্দ্বে অনেক মায়ের কোলও খালি
হয়েছে বগুড়াসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে। তিনি বলেন অপরাধীর কোন দল বা
পরিচয় হয়না, তাই চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাস দমনে জেলা পুলিশ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে সমন্বিতভাবে তারা জেলা পুলিশের পাশে রয়েছে এবং থাকবে। জেলা পুলিশের এই উদ্যোগ সারাদেশে মডেল হবে এবং এই পরিকল্পনা দেশব্যাপী সকল
স্থানেই পর্যায়ক্রমে গ্রহণ করা উচিত বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। বিনা পয়সায় পুলিশে চাকরি, শহীদদের স্মরণে লাখো মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, নারী
নির্যাতন বন্ধে নারীদের অংশগ্রহণেই বাই-সাইকেলে সচেতনতামূলক র্যালী, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান, চলমান করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায়
ইতিবাচক নানামুখী উদ্যোগসহ শতাধিক সফল কর্মসূচীর পরে চাঁদাবাজ দমনে এবং পুরো জেলায় বাড়ি ও ভবন নির্মাতাদের স্বস্তির লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ গ্রহণকারী জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) এর সাথে কথা
বললে তিনি জানান, বাংলাদেশ পুলিশের কর্ণধার আইজিপি ড. বেনজীর আহম্মেদের
নির্দেশনায় জনবান্ধব পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা এবং করোনা দুর্যোগের
মাঝেও অপরাধ ও সন্ত্রাস দমনে জেলা পুলিশ জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে বগুড়াতে যদি কাউকে নির্মাণসামগ্রী কিনতে কোনরুপ চাপ প্রয়োগ করা হয় বা কেউ চাঁদা দাবি করে সে যেই হোক
না কেন জেলা পুলিশের পক্ষে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। নির্মাণ কাজে চাঁদাবাজি বন্ধে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না মর্মেও কঠোর হুশিয়ারী
দেন জেলা পুলিশের এই কর্ণধার।