করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় প্রতিদিন না ফেরার দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এ তালিকায় আছেন তরুণ চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। গত এক দিনে ভাইরাসটির ছোবলে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এছাড়াও এদিন বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন আরও একজন।
বুধবার (১ জুলাই) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত মারা যান চারজন চিকিৎসক। পরে ওই দিন দিবাগত গভীর রাতে মারা যান আরেকজন।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে মারা গেছেন রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালের গ্যাস্টোএন্টারোলজি ও হেপাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মহসিন কবীর। বুধবার (১ জুলাই) ভোর রাতে ইমপালস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
ডা. মহসিন কবীর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২২তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
একই দিন ভোর ৪টার দিকে মারা যান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. গোলাম সারোয়ার। ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস’ সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেস্পন্সিবিলিটিজের (এফডিএসআর) যুগ্ম সম্পাদক ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. গোলাম সারোয়ার ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে এফডিএসআর পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসীব করুন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারকে শোক বহন করার ক্ষমতা দান করুন। আমরা এফডিএসআর পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত প্রার্থনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
অধ্যাপক ডা. গোলাম সারোয়ার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
করোনায় প্রাণ হারান রাজধানীর ফার্মগেটের আল রাজী হাসপাতালের সাবেক পরিচালক, বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন। বুধবার (১ জুলাই) বিকেল ৪টায় রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ডা. রুহুল আমিন ফার্মগেটের আল রাজী হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন হিসেবে দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভুঁইয়া থানার জায়লস্কর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে।
ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন রাজধানীর হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ ওয়াহাব।
বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভেন্টিলেটরে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
এদিকে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন কুমিল্লা ডায়াবেটিক সমিতির সাবেক সভাপতি, কুমিল্লার প্রবীণ চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির কুমিল্লার সভাপতি ডা. এম ওয়ালী উল্লাহ।
বুধবার (১ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় নিজ বাসভবনে তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
ডা. এম ওয়ালী উল্লাহ চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘদিন মানুষকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। বর্ণাঢ্য চিকিৎসক জীবনে তিনি কুমিল্লা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির কুমিল্লার সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।
মেডিভয়েস রিপোর্ট