করোনা কালের জীবন ধারা- ৩৭

দুর্বল দেশগুলোতে জরুরি স্বাস্ব্য সহায়তা না দেওয়া হলে বিশে^র প্রায় ১০০ কোটি মানুষকরোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বলে ধারণা করছে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি। (আইআরসি)। আন্তর্জাতিক এই সাহায্য সংস্থাটি বলছে, মহামারির ক্ষতি কমাতে হলে আর্থিক ও মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। আইআরসির রিপোর্টের বরাতে
বিবিসি জানায়, আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মত নাজুক দেশগুলোর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় জররুরি তহবিল প্রয়োজন। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা ও ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের মডেল ও তথ্য অনুযায়ী ওই রিপোর্ট
প্রকাশ করেছে আইআরসি। রিপোর্টে বলা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি মানুষের মধ্যে করোনার সংক্রমণ হতে পারে। দরিদ্র,
যুদ্ধবিধস্ত ও অস্থিতিশীল অন্তত ১২ টি দেশে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
করোনা মহামারির সংকট মোকাবিলার জন্য হাতে সময় নেই বলেও সতর্ক করেছে সংন্থাটি। আইআরসির প্রধান ডেভিল্ড মিলব্যন্ডি বলেন,
এই সংখ্যাগুলোকে সতর্ক বার্তা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
মহামারি এখনো যুদ্ধবিধস্ত ও ভঙ্গুর দেশগুলোতে প্রকট আকারে দেখা যায়নি। এখন মূল কাজ হচ্ছে প্রস্তুত থাকা। ’ তিনি আরো জানান দাতা সংস্থা ও দেশ গুলির উচিত অতি দ্রুত জরুরি তহবিল গঠন করা।
স্কংট মোকাবিলায় মানবিক সহায়তার কথা বিবেচনা করে সব সরকারকে অবশ্যই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই সংস্থাটি জানায় কোন কোন দেশের পরিবারের আকার, জনসংখ্যার ঘনত্ব, স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা, যুদ্ধ- সংঘাতের কারণে
মহামারি ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারি হিসাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা তার তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করছে সংস্থাটি।
চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইথআইট বর্ডারস (এমএসএফ) এর ইয়েমেনের ব্যবস্থাপক ক্যারোলিন স্যাঙ্গুইন বলেন, ‘‘ আমরা বিশ^াস করি এখানে হাসপাতালের বাইরেও কোভিড-১৯ এ
আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মারা গিয়েছেন। কয়েকটি জায়গায় সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তবে পরীক্ষা করার ক্ষমতা না থাকায় সঠিকভাবে এ ব্যাপারে জানা যাচ্ছেনা।
অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের ৮০ ভাগ মানুষ কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরসে আক্রান্ত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের পর থেকে বাংলাদেশে করোনা সনাক্ত অনেক বেড়ে গেছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অনেকেই হয়তো এমনিতেই ভালো হয়ে যচ্ছেন।
তরুনরা সুস্থ্য হলেও বয়ষ্করা কিন্তু খুব কমই সুস্থ্য হয়ে ফিরছেন। কারণ আগে থেকে নানারকম শারীরিক সমস্য থাকায় বয়স্করা আক্রান্ত হলে ঝুঁকি কয়েকগুন বেড়ে যায়। ভ্যাকসিন আসার আগ পর্যন্ত সংক্রমণ
নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য , ভাইরোলজিষ্ট ডা. নজরুল ইসলাম আরো বলেন,‘ দেশের মানুষ যেভাবে চলাফেরা করছে, তাতে ভ্যাকসিন আসার আগেই হয়তো ৮০ ভাগ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবে। অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য বিধি মানছেনা।
সঙ্গে মাস্ক নিয়ে ঘুরলেও তা পরছেনা। তিনি বলেন, এখন তো নমুনা পরীক্ষায় প্রতিদিন ২২-২৩ শতাংশ মানুষের করোনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। এর অর্থ হলো পরীক্ষা না হওয়া অনেক সংক্রমিত মানুষ সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজের অজান্তেই রোগ ছড়াচ্ছে। তাছাড়া এখনতো অনেক আক্রান্তের উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছেনা। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে না পারলে করোনাভাইরাস আপনাআপনি চলে যাবেনা। অনেক মানুষ আক্রান্ত হবে, মারা যাবে। ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের যত টেষ্ট হওয়া দরকার তা হচ্ছেনা। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে পারছিনা। দুই মাস আগেও যত মানুষ মাস্ক পরেবের হতেন, এখন সেটাও দেখছিনা। অনেকে মাস্ক নিয়ে ঘুরলেও তা থুতনিতে লাগিয়ে রাখছেন। এ নিয়ে বলতে গেলে উল্টো প্রশ্ন করছেন।
এজন্য সচেতনতামূলক প্রচারনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টা আইন শৃ্খংলা রক্ষাকারি বাহিনীকে দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে।
দেশের কিছু এলাকায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে, বেশিরভাগ এলাকাতেই নেই। ঢাকার রাজারবাগ ছাড়া আর কোথাও লকডাউন করা হয়নি।
এব্যাপারে তৎপরতা খুব একটা দেখছিনা।’’
অপরদিকে মহামারি বিশেষজ্ঞ ও রোগ তত্ত, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ( আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন
বলেছেন করোনাভাইরাসের পিক টাইম বলে কিছু নেই। এটা খোঁজারও কোন যৌক্তিকতা নেই। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে নিয়য়ন্ত্রণ করতে
পারলেই ভাইরাস থেকে মুক্তি মিলবে। অন্যথায় সব মানুষ আক্রান্ত হবে।
প্রাকৃতিকভাবে এটা কমার কোন সুযোগ নেই। নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যেদিন সংক্রমণ কমাতে পারবো , সেদিনই মনে করতে হবে আমরা পিক সময় পার করেছি।
আইইডিসিআর এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানীক কর্মকর্তা বলেন, ‘সামনে কোরবানীর ঈদ। গরুর হাট বসলে সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটতে
পারে। মাংস বন্টনের সময়ও সংক্রমণ ছড়াবে। এ নিয়ে এখুনি ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন আলেম-উলামাদের নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কোরবানী না দিয়ে সেই টাকা অসহায়দের মধ্যে দান করে দেওয়া যায় কিনা সেটা দেখতে হবে। করোনার
কারণে হজ ও বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন ঈদুল ফিতরে কোন ধরণের স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। সারা দেশের মানুষ ফেরিঘাটে জড়ো হয়েছেন ।সেখান থেকে করোনা নিয়ে গ্রামে ফিরেছেন। সংক্রমণ বাড়িয়েছেন।
তাই কোরবানীর ঈদ নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে তাদের শরীরে যে ভাইরাস পাওয়া গেছে তা মৃত। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো গবেষণা হয়নি। (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৬ জুন-২০২০)।২৭ জুন দৈনিক কালের কন্ঠ লিখেছে, খুব ধুরন্ধর নভেল করোনাভাইরাসকে কি এবার ফাঁদে ফেলা যাবে মানব শরীরের মধ্যেই? ভাইরাসটির খুব পছন্দের জায়গা আমাদের ফুসফুসেই পাতা যাবে সেই ফাঁদ- এমনটাই দাবি করলেন একদল চীনা গবেষক। জানালেন, তারা পলিমারের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র
কণা (ন্যানো পার্টিকলস) দিয়ে কৃত্তিমভাবে ফুসফুসের এমন কোষ বানিয়েছেন, যা আদতে জীবন্ত কোন কোষ নয়। কভিডের ফাঁদ। সেই
ফাঁদের ভিতর ঢুকে পড়লে ভাইরাসটি আর বেঁচে থাকার রসদ পাবেনা। মরে যাবে। সম্প্রতি এসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে আন্তার্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যনো লেটার্সে। )।
(চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও
কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।