ইয়ানূর রহমান : যশোরে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়াসহ ৪৮ জনের কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনিবার সকালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার কর্তৃপক্ষ এই ফলাফল প্রকাশ করেছেন।
শনাক্তদের মধ্যে সরকারের বিশেষ বাহিনীর ১ জন সদস্যসহ ৪৪ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। আর বাকি ৪ জন পুরাতন রোগীর নমুনা পরীক্ষায় ফলোআপ পজেটিভ
এসেছে। এই নিয়ে যশোর জেলায় মোট ৫১৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া মৃত ১ রোগীর নমুনা পরীক্ষায় করোনা মিলেছে। ফলে মৃতের তালিকা বেড়ে ৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত যশোর শহরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা আনিসুর রহমানের ছেলে শামিমুর রহমানের (৩৮) মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্সে থাকার পর কারবালা কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন হয়েছে।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, নতুন শনাক্ত ৪৪ জনের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৪ জন, অভয়নগর উপজেলার ২৯ জন, শার্শা উপজেলায় ৬ জন, কেশবপুর উপজেলায় ১ জন, বাঘারপাড়ায় ১ জন ও ঝিকরগাছা উপজেলায় ৩ জন। আর ফলোআপ পজেটিভ আসা ৪ জনের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ২ জন, অভয়নগর উপজেলায় ১ জন ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ১ জন রয়েছেন।
ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, গত ২১ জুন মারা যাওয়া অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশা গ্রামের বিমলেন্দু চক্রবর্তীর নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ এসেছে। ফলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যশোরে এই পর্যন্ত ৮ জন রোগী মারা গেলেন। বাকি ৭ জন হলেন যশোর সদর উপজেলার রুপদিয়ার চাউলিয়া গ্রামের মৃত নাসির গাজীর ছেলে আব্দুল খালেক গাজী (৩৪), চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামের সরদার পাড়ার আব্দুল ওহাব আলী সরদার (৭০), অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার শংকপরপাশার বাসিন্দা বিশিষ্ট শিল্পপতি আমির হোসেন (৭৫), নওয়াপাড়া পৌর এলাকার আনিসুর রহমান (৫৫), গুয়াখোলা গ্রামের সাংবাদিক বিল্লাল হোসেন (৫৩),শার্শা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের জাকির হোসেন (৫০) ও বেনাপোল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোমিনুর রহমান (৫০)। তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত পৌনে ১০ টার দিকে যশোর শহরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের আনোয়ারা ফার্মেসির মালিক শামীমুর রহমান খুলনার বেসরকারি একটি হাসপাতালে মারা যান। শুক্রবার দুপুরে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে স্বজনরা উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে মারা যাওয়ার গভীররাতে তার মৃতদেহ বাড়িতে আনা হয়। শনিবার দুপুরে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা কারবালা কবরস্থানে তার মৃতদেহের দাফন সম্পন্ন করে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.আরিফ আহমেদ জানান, শুক্রবার সকালে করোনার উপসর্গ নিয়ে শামীমুর রহমানকে প্রথমে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। এখনো ফলাফল আসেনি। আরএমও ডা. আরিফ আহমেদ আরো জানান, শনিবার বিকেলে আইসোলেশন ওয়ার্ডে আরো ১ জন মারা গেছেন। মৃতের নাম হারান চন্দ্র (৭০)। এদিন দুুপুরের পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। হারান চন্দ্র জ্বর ঠাণ্ডা কাশি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তাস্তর করা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল আসলে নিশ্চিত হওয়া যাবে তারা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা।
যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আদনান ইমতিয়াজ জানান, সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৪ জনের মধ্যে সরকারের বিশেষ বাহিনীর ১ জন সদস্য (২২) রয়েছেন। তার বসবাস আরবপুর এলাকায়। অন্য ৩ জন হলেন শহরের পশ্চিমবারান্দীপাড়ার ১ জন ব্যবসায়ী (৬৫), পালবাড়ি এলাকার ১ জন ও শেখহাটি বাবলাতলার ১ জন। আক্রান্তদের বাড়ি সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)জাকির হোসেনের নেতৃত্বে লকডাউন করা হয়েছে। তারা হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুর রহমান রিজভী জানিয়েছেন, নতুন করে আক্রান্ত ২৯ জনের মধ্যে নওয়াপাড়া পৌরসভার ২৭ জন রোগী। এরমধ্যে দুই পরিবারের ১২ জন রয়েছেন। বাকি ৩ জন হলেন বর্নি শ্রীপুর গ্রামের ১ জন, গাবতলীর ১ জন ও সিদ্ধিপাশা গ্রামের ১ জন। তিনি আরো জানান, সিদ্ধিপাশা গ্রামে আক্রান্ত ব্যক্তির নাম বিমলেন্দু চক্রবর্তী। ২১ জুন তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিলো। ২৭ জুন তার ফলাফল আসে। তাতে তার শরীরে করোনার জীবাণু মিলেছে।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, নতুন আক্রান্ত ৬ জনের মধ্যে বেনাপোল পৌরসভার বড় আচড়া ও নঘুনাথপুর এলাকার ২ জন ও শার্শা উপজেলা এলাকার ৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পূর্বে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের পরিবারের ২ জন সদস্য রয়েছেন।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান জানান, নতুন আক্রান্ত ৩ জনের মধ্যে ঝিকরগাছা পৌরসদরের কৃষ্ণনগর গ্রামের খলিফাপাড়ার বাসিন্দা কৃষি ব্যাংকের অবসারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ১ জন, ঝিকরগাছা সোনালী ব্যাংকের কর্মরত উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের জগদানন্দকাঠি গ্রামের ১ জন ও যশোর পালবাড়ি এলাকার চাকলাদার ভবনে বসবাসকারী ১ জন। তাদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
এছাড়া বাঘারপাড়া উপজেলার ১ জন ও কেশবপুর উপজেলায় আক্রান্ত ১ জন হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন । তাদের বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
যবিপ্রবির এনএফটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. শিরিন নিগার জানিয়েছেন, জিনোম সেন্টারে যশোর জেলার ১শ’ ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৮ জন ও সাতক্ষীরা জেলার ৫৮ নমুনা পরীক্ষায় ৯ জনের শরীরে করোনার জীবাণু পাওয়া যায়।
সবমিলিয়ে ২১৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বাকি ১২৯ জনের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, শনিবার পর্যন্ত জেলায় মোট ৫১৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হলেন। সুস্থ হয়েছেন ১৬৪ জন। মারা গেছেন ৮ জন