ঈশ্বরদীতে স্বামী কর্তৃক শ্বাসরোধ করে স্ত্রী খুনের রহস্য ৭২ ঘন্টার মধ্যে উদঘাটন করতে সমর্থ হয়েছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ। হত্যার পর হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে মৃতদেহ দাফনের চেষ্টা করা হয়। বুধবার সকালে আসামিকে আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ জানায়, গত ১৩ই জুন মধ্য রাতে ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন মৃত শহিদুল ইসলাম বাবলু’র ছেলে জানিক হোসেন বাবু (৩০) এর স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। মিতু কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার মোল্লাকান্দি গ্রামের মৃত মিজানুর রহমানের মেয়ে। নিহত মিতু ঈশ^রদী ইপিজেডে একজন পোশাক শ্রমিক ছিলেন। স্বামী বাবু স্ত্রী মিতুকে শ্বসরোধ করে হত্যার পর হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে। এক পর্যায়ে ঘাতক স্বামী দাফনেরও উদ্যোগ নেয়। খবর পেয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের এসআই জামিলুর নিহতের লাশ উদ্ধার করে ঈশ্বরদী থানায় নিয়ে আসেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে লাশ পাঠানো হয়।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ বাহাউদ্দিন ফারুকী জানান, খুনের সন্দেহভাজন হিসেবে স্বামী জানিক হোসেন বাবু, শাশুড়ি হেনা বেগম (৫২) এবং ভাসুরের স্ত্রী সুমা বেগম (৩২) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। প্রথম ২দিন স্বামী বাবু অনেক টালবাহানা করে হত্যার ঘটনা অস্বীকার এবং মোটিভ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাতে একাই তার স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে সে স্বীকার করে।
পুলিশ আরো জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানা বিভিন্ন সময় বন্ধ থাকায় নিহত মিতুর রোজগারের পথ প্রায় বন্ধ ছিল। ঘটনার রাতে নেশার টাকা নিয়ে স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সে তার স্ত্রীকে দুই দফা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে পরিবারের সদস্যদের জানায় হার্ট অ্যাটাকের কারণে স্ত্রী মারা গেছেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, নিহতের স্বামী বাবু একজন মাদকাসক্ত। নেশার টাকার জন্য সে প্রায় প্রতিদিনই তার স্ত্রী মিতুকে মারধর করতো। কিছুদিন আগেও নিহত মিতু আক্তার স্বামীকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেয় বলে জানা গেছে।
ঈশ্বরদী সার্কেল পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, জানিক হোসেন বাবু একজন দুষ্টু প্রকৃতির ও মাদকাসক্ত ব্যক্তি। অনেক প্রচেষ্টার পর সে মিতু হত্যাকান্ডের কথা পুলিশের কাছে অকপটে স্বীকার করেছে এবং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। সকালে আসামিকে আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আসামি দোষ স্বীকার করায় সন্দেহভাজন দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেয়ে দেওয়া হয়েছে।