ছাতক প্রতিনিধি::রোদ-বৃষ্টি, ধুলোবালি আর শব্দদূষণ ট্রাফিক পুলিশের নিত্যসঙ্গী। বিড়ম্বনারও শেষ নেই তাদের। দিন-রাত রাস্তায় থাকার কারণে নানা রোগে ভুগছেন তারা। এর মধ্যে সাইনোসাইটিস, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা লেগে থাকে সারা বছর। যানবাহনের তীব্র হর্নের কারণে কানের সমস্যায়ও ভোগেন অনেকে। ট্রাফিক-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণেও আছে নানা প্রতিবন্ধকতা। গাড়িচালক ও পথচারীর বেশির ভাগেরই রয়েছে আইন না মানার প্রবণতা। আইন মানাতে গেলেই নানা ধরনের হুমকি-ধমকির মুখোমুখি হতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। এর পরও এসব সামাল দিয়েই দায়িত্ব পালন করেন তারা। ছাতকে গোবিন্দগঞ্জ বিভিন্ন সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের দুঃখ-কষ্টের নানা কথা।
ট্রাফিক পুলিশের টিএসআই নুর আলমের সাথে আলাপ কালে জানাযায়, কনস্টেবল ও সার্জেন্টদের দিনে ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের কথা বলা হলেও তারা ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন। তাদের নেই কোনো ছুটি।
দুর্ঘটনাসহ নানা ঝুঁকির মধ্যে ব্যস্ততম সড়কে কাজ করেন
ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। এর পরও তাদেরই যানজটের জন্য সাধারণ মানুষের
গালমন্দ শুনতে হয়। আবার কাগজপত্রসহ নানা কারণে যানবাহন আটকালে শুরু হয়ে যায়
তদবির। প্রভাবশালীরা আইনকানুনের তোয়াক্কা করেন কমই। অনেকে আবার চাকরি
খাওয়ারও হুমকি দেন।
সকাল সাড়ে ৭টায় বাসা থেকে বের হয়ে ফিরতে হয় রাত
সাড়ে ১০টায়। রাস্তায় দায়িত্ব পালনকালে ওয়াশরুম কিংবা বসার কোনো সুবিধা
নেই। রাস্তার ধুলাবালি, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার জন্য তাদের বেশির ভাগই
নানা রোগে ভুগছেন। কেউ চর্মরোগে, কারও পায়ের গোড়ালির সমস্যা, পাইলসের
সমস্যা, কারও কানের এবং প্রায় সবারই গ্যাস্ট্রিক সমস্যা রয়েছে।
দায়িত্বরত
ট্রাফিক অফিসার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, রোদ-বৃষ্টি, হাঁটুপানি কিংবা
বুকপানি যা-ই হোক না কেন, রাস্তায়ই থাকতে হবে। বেশির ভাগ মানুষই ট্রাফিক
সিগন্যাল মানতে চায় না। তাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় তদবিরে।
গাড়ির কাগজ পত্রের উপর মামলা করলেই
তদবির
শুরু হয়। কথা না শুনলে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি খেতে হয়। এমনকি বদলিও হতে
হয়। নির্দিষ্ট এলাকার ডিউটির পরও কোথাও কোনো সরকারি প্রোগ্রাম থাকলে সেখানে
ডিউটি করতে যেতে হয়। বছরের পাওনা ২০ দিন ছুটিও কাটানো যায় না। ছুটিতে
গেলেও তা বাতিল হয়ে যায়। ট্রাফিকে দায়িত্ব পালনকালে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায়
পড়তে হয়। কারণ কোনো ট্রাফিক বক্সে টয়লেট সুবিধা নেই। আশপাশের অফিস বা
মার্কেটে গিয়ে তাদের বাথরুম সেরে আসতে হয়। রাস্তার ধুলোবালিতে শুধু পোশাকই
মলিন হয় না, রোদ, গরম, গাড়ির ধোঁয়া, হর্ন ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন ধরনের
শারীরিক জটিলতায় ভোগেন ট্রাফিক পুলিশরা।
করোনায় সিলেট সুনামগঞ্জ মহাসড়কে ও গোবিন্দগঞ্জ ছাতক সড়কে ট্রাফিক কঠোর অবস্থানে থাকায় করোনার ঝুকি এই এলাকায় এখন কম রয়েছে। করোনার পর থেকেই এই এলাকায় গাড়িগুলো কে বিশেষ ছাড় দেওয়ার কারণে, টিএসআই নুর আলমের বিরুদ্ধে নানা অপ্রপ্রচার করার এঘটনায় স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী সনঞ্জয় দে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এরকম কোন দৃশ্য আমাদের চোখে পরেনি। মিথ্যাভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে ভালো একজন মানুষ কে নিজেদের সার্থ হাসিল করতে না পারায় সমাজে হেয় করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের সু-দৃষ্টি কামনা করেন এলাকাবাসী।#