করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত এক কোটিপতি রোগি চার হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন। এমন হৃদয়বিদারক
ঘটনা ঘটেছে সিলেটে। জাগো নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম গত ৫ জুন, ২০২০. প্রচার করেছে, সিলেটের এক কোটিপতি ব্যসায়ী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মৃত ইকবাল
হোসেনের ছেলে তিহাম হোসেন বলেন, কোটি টাকা খরচ দেবো বলেছি, চিকিৎসা করাতে চিকিৎসকদের কাছে মিনতি করেছি তাও বাবার চিকিৎসা করান। বলেছি আমার বাবা শ^াস নিতে পারছেনা,
তাকে দয়া করে একটু অক্সিজেন দেন। কোন হাসপাতাল চিকৎসা দেয়নি।
তিনি বলেন ঘটনার দিন ভোর বেলা বাবার বুকে ব্যাথা ও শ^াসকষ্ট শুরু হয়।
তখন সোবহানিঘাট এলাকার একটি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করি। অ্যাম্বুলেন্স বাসায় আসার পর দেখি অক্সিজেন সিষ্টেম ভাঙা।
এ অবস্থায় রোগিকে সোবহানঘাটের ঐ বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে বার বার তাদের অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করলেও
রোগিকে রেখে তারা নিয়ম-কানুন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে জানান যে, তারা এ রোগিকে রাখবেননা। নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে
যেতে বলেন। অনেক অনুরোধের পরও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দেননি তারা।
তিহাম বলেন, এরপর বাবাকে নিয়ে দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট হসপাতালে যাই। সেখানে গেলে কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের হাসপাতালে সিট নেই,
রোগির চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। তখন পরিচিত এক চিকিৎসকের সঙ্গে যাগাযোগ করি। তিনি পরামর্শ দেন, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে যাবার জন্য। শামসুদ্দিন হাসপাতালে গিয়ে সবকিছু বন্ধ
দেখতে পাই। ১০-১৫ মিনিটি পর এক নিরাপত্তাকর্মী গেটে এসে জানান, হাসপাতালের সবাই ঘুমিয়ে আছে। অন্য কোথাও রোগিকে নিয়ে যান। তখন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা হই। সেখানে জরুরি বিভাগে যাবার পর রোগিকে সিসিইিউতে নিয়ে যাবার কথা বলেন তারা। সেখানে ওয়ার্ডের ভেতরে না নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় একটি ইসিজি করা হয়। এরপরই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত এক ডাক্তার আমার বাবাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
দেশের সব সরকারি -বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগির চিকিৎসা দেওয়ার সরকারি নিদের্শনা থাকার পরও রোগি ভর্তি করছেনা সিলেটের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন মারা যাওয়া রোগির স্বজনসহ সিলেটের সচেতন নাগরিকরা। বিনা চিকিৎসায় ব্যবসায়ীর মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে
ষ্ট্যাটাস দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। নিজের ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, সিলেটের
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, আর এল ইলেক্টোনিক্সের মালিক ইকবাল হোসেন খোকা ভাই শুক্রবার ভোরে মারা গেছেন। দুদিন আগে ইবাল ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে
কথা হয়েছে, তিনি অসুস্থতার কথা জােিয়ছেন। ইকবাল ভাই এভাবে চলে গেলেন। সিলেট শহরে তার চিকিৎসা দেওয়া গেলনা।
গত ১২ জুন দৈনিক কালের কন্ঠ এমনি একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, চার হাসপাতাল ঘুরেও ভর্তি হতে না পেরে চিকিৎসার অভাবে
অ্যাম্বুলেন্সেই মারা গেলেন টঙ্গির এক ব্যবসায়ী। টঙ্গির পাগাড় এলাকার প্রভাবশালী ফকির পরিবারের ওই ব্যবসায়ীর নাম মো. মাহাতাব উদ্দিন ফকির
(৫২)। গতকাল বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়। তিনি করোনা উপসর্গে ভুগছিলেন। মৃত মাহাতাব ফকিরের ভাতিজা মোবারক হোসেন ফকির
বলেন, গত ৮-৯ দিন ধরে চাচা জ¦র, স্বর্দি, গলা ব্যাথা ও কাশিতে ভুগছিলেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে বুধবার সকালে ঢাকার উত্তরার
বাংলাদেশ মেডিকেলসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরেও করোনা টেষ্টের রিপোট না থাকায় ভর্তি করাতে পারিনি। পরে ঐ দিন দুপুরে
কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন।
অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঐ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন চিকিৎসক। রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসক জানান,
রোগির অবস্থা সংকটাপন্ন, আইসিইউ লাগবে। কিন্তু কুর্মিটোলা হাসপাতালে বেড নেই। অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, গভীর রাতে হাসপাতাল না পেয়ে চাচাকে টঙ্গির বাসায় নিয়ে আসেন তিনি। বৃহস্পতিবার ভোরে অবস্থার আরো অবনতি হলে
প্রথমে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যান। রিসিপশন থেকে প্রথমেই জানতে চায় সাথে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট আছে
কি না। নেই জানালে অসুখের লক্ষণ শুনে রোগির মুখ না দেখেই তারা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। একইভাবে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না
থাকায় ইউনাইটেড হাসপাতাল ও আবার বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে শত
কাকুতি মিনতি করেও ভর্তি করাতে না পেরে যান উত্তরার শিনজিন হাসপাতালে। সেখানে অ্যাম্বুলেেেন্স রেখে চিকিৎসক রোগির নাড়ি পরীক্ষা করে জানান, তিনি আর বেঁচে নেই। দুপুরে লাশ বাসায় এনে
পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
রাজশাহী রেল স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেই প্লাটফর্মে এক যাত্রীর করুন মৃত্যু হয়েছে এই করোনাকালে। কুষ্টিয়া থেকে রাজশাহী মেডিকেল
কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছিলেন আব্দুল কুদ্দুস (৫৫)। কেেপাতাক্ষ এক্সপ্রেসে ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে কুষ্টিয়া থেকে যাত্রা
করেন তিনি। ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ট্রেনটি রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছে। তবে ট্রেন থেকে নেমেই স্টেশনের প্লাটফর্মে তিনি
অজ্ঞান হয়ে নেতিয়ে পড়েন। সঙ্গে থাকা তার ছেলে ও মেয়ে বাবাকে তড়িঘড়ি করে তোলার চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি। মূহুর্তেই শ^াস-
প্রশ^াস বন্ধ হয়ে যায় তার। চোখের সামনেই বাবার করুণ মৃত্যুদৃশ্য দেখতে হয় তাদের। আশে-পাশের মানুষও নানা শঙ্কায় এগিয়ে আসেনি।
প্লাটফর্মে লুটিয়ে পড়ার পর বাবাকে নিয়ে আহাজারি করতে থাকেন তারা। বার বার অনুরোধ করেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ
হাসপাতালে নিতে রাজি হয়নি। এক পর্যায়ে তার ছেলে ও মেয়ে কাপড় দিয়ে মৃতদেহ ঢেঁকে দেন। প্রায় আধা ঘন্টা পর রেলওয়ে থানা পুলিশ
আব্দুল কুদ্দুসের নিথর দেহ একটি অটো রিকশায় করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। (সুত্র খবরপত্র-১০ জুন-২০২০)।
বর্তমানে করোনাকালে বাংলাদেশের বেশ কিছুসংখ্যক হাসপাতালে
অত্যাধিক করোনা রোগির চিকিৎসা-সেবার চাপের কারণে বেডের অভাবে এমন হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারপরেও ডাক্তার- নার্সদের
অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে রোগিরা চিকিৎসা-সেবা পেয়ে অনেকেই সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
(চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।
মোবাইল ফোন নং ০১৭১২২৩২৪৬১