আকিদুল ইসলাম সাদী : অজু হলো মুসলমানদের ইবাদত পালনের একটি বড় মাধ্যম। তাছাড়া এটিও একটি ইবাদত। মুসলমানদের প্রধান ইবাদত নামাজ আদায় করতে অজুর প্রয়োজন হয়। কুরআন স্পর্শ করতেও অজুর প্রয়োজন হয়। তারচে‘ বড় কথা হলো আল্লাহ তায়ালা অজুর মাধ্যমে মুসলমানদের গোনাহ ক্ষমা করে থাকেন। বলা যায়- মুসলমানদের জন্য ‘অজু হলো এন্টিভাইরাস এ্যাপস’। অর্থাৎ গোনাহ ডিলেট সফটোওয়ার।
এখানে প্রশ্ন হতে পারে- অজু কীভাবে এন্টিভাইরাস এ্যাপস হয়? এর মাধ্যমে কি ভাইরাস ডিলেট হয়? এর উত্তর হলো- হ্যাঁ, অজুর মাধ্যমে মুসলমানদের দেহের মধ্যে জমে থাকা ভাইরাস ডিলেট হয়। ময়লামুক্ত হয় তাদের অন্তর-আত্মা। তাছাড়া নির্দিধায় বলা যায়- আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত এন্টিভাইরাস নামক সফটোওয়ার মুসলমানদের অজুরই একটি অংশ। অর্থাৎ একটি মানবদেহ পরিষ্কার করে, আরেকটি মোবাইল বা কম্পিউটার পরিষ্কার কাজে ব্যবহৃত হয়। এ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝার জন্য নিম্নে কিছুটা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
এন্টিভাইরাস আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত একটি এ্যাপস। এর মাধ্যমে মোবাইল বা কম্পিউটারের মধ্যে জমে থাকা ভাইরাস বা ময়লা পরিষ্কার করতে হয়। কেননা, ভাইরাসগুলো পরিষ্কার না করলে একসময় মোবাইল বা কম্পিউটার ভাইরাসের আক্রমণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে মোবাইল বা কম্পিউটারে এন্টিভায়রাস এ্যাপস ব্যবহার করা হয়। ফলে মোবাইল বা কম্পিউটার বহিরাগত সব ময়লা বা ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকে, ভালো থাকে।
মোবাইল বা কম্পিউটারে ব্যবহৃত এন্টিভাইরাস এ্যাপসটি যখন অন করা হয়, তখন সেটি ঘুরে ঘুরে মূল পয়েন্ট‘র ভাইরাসগুলো ডিলেট করে ফেলে। তাছাড়া আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত এন্টিভাইরাস এ্যাপস‘র একটি হলো (Temporary Delete) ট্যাম্পোরারি ডিলেট। এটি যখন অন করা হয় তখন ভাইরাস জমে থাকা কয়েকটি অপশন সামনে আসে। সেগুলো একে একে পরিষ্কার করতে হয়। তাহলে কম্পিউটার ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হয়। এভাবে মোবাইল বা কম্পিউটার ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। নিজেস্ব গতিতে চলতে থাকে। হ্যাঁক হয় না।
মোবাইল বা কম্পিউটারের মতো মানুষের মধ্যেও ময়লা বা ভায়রাস জমে। ইসলামি পরিভাষায় তাকে গোনাহ বলা হয়। মানুষের দ্বারা গোনাহ সংগঠিত হওয়ার মূল চারটি পয়েন্ট রয়েছে। উক্ত পয়েন্ট চারটি হলো-
(১) মুখমন্ডল; এর মধ্যে চোখ, নাক, কান অন্তর্ভূক্ত।
(২) মাথা; বিশেষ করে মগজাংশ।
(৩) উভয় হাত; বিশেষভাবে কনুই পর্যন্ত।
(৪) উভয় পা; এর মধ্যে টাখনু অন্তর্ভূক্ত।
মানুষ যেকোনো গোনাহ করুক না কেনো, এই চারটি অংশ লাগেই। ভালো কাজ করতেও এই চারটি অংশ লাগে। অর্থাৎ মানুষ যেকোনো কাজ করুক না কেনো, সর্বপ্রথম চোখ দিয়ে দেখে অথবা কান দিয়ে শোনে অথবা নাক দিয়ে ঘ্রাণ শোঁকে। অতঃপর মাথা দিয়ে ভেবে প্লানিং করে। অতঃপর পা দিয়ে হেঁটে গিয়ে হাত দ্বারা গোনার কাজটি সম্পন্ন করে। বিস্ময়কর ব্যাপর হলো- আল্লাহ তায়ালা অজুর মধ্যে এই অঙ্গগুলোই ধৌত করার জন্য আদেশ করেছেন। ফলে এই অঙ্গগুলো থেকে গোনাহ ঝরে যায়। যেভাবে মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে ভাইরাস ডিলেট হয়ে যায়।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে অজু সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন- হে ইমানদারগণ! তোমরা যখন নামাজে দাঁড়াবে তখন তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর, উভয় হাত কনুইসহ ধৌত কর, মাথা সাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনুসহ ধৌত কর।
উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়াল অজুর সময় চারটা অঙ্গ ধৌত করার কথা উল্লেখ করেছেন। আর এই চারটা অঙ্গই হলো মানুষের প্রধান অঙ্গ। এ অঙ্গগুলো ছাড়া মানুষ কোনো কাজ করতে পারে না। চাই সে কাজ ভালো হোক অথবা মন্দ হোক।
আমরা যদি অজুর এই কাজগুলো স্মরণ রেখে আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত এন্টিভাইরাস বা ভাইরাস নিধন এ্যপস‘র কাজের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখা যায়- ভায়রাস নিধন এ্যাপসটি যখন অন করা হয় তখন ভায়রাস জমে থাকা কয়েটি অপশন সামনে আসে, যা থেকে ভায়রাসগুলো একে একে ডিলেট করে পরিষ্কার করতে হয়। ঠিক অজু বিষয়টিও এমন। মানবদেহের প্রধান অঙ্গগুলোকে একে একে ধৌত করতে হয়। অর্থাৎ গেুলো থেকে গোনাহ নামক ভাইরাসগুলো ডিলেট করতে হয়। এছাড়া অজুর মধ্যে সুন্নত-মুস্তাহাব অনেক বিষয় রয়েছে। সেগুলোর মাধ্যমেও গোনাহ নামক ভাইরাস পরিষ্কার হয়। য়েমনটি মোবাইল বা কম্পিউটারের ছোট ছোট অপশনগুলো দ্বারা হয়ে থাকে। সুতরাং এ কথা জোড়েসোড়ে বলা চলে- অজু হলো মানবদেহের জন্য এন্টিভাইরাস এ্যাপস।
লেখক, ইতিহাস ও সায়েন্স গবেষক