নেপাল সরকার সেদেশের সংসদে যে নয়া মানচিত্র বিল পাস করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে ভারতের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে। গতকাল শনিবার নেপালের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে মানচিত্র সংশোধনী বিলটি সর্বসম্মতিতে পাস হয়েছে।
নতুন মানচিত্রে ভারতের উত্তরাখণ্ডের লিমপিয়াধুরা, লিপুলেখ এবং কালাপানি অঞ্চলকে নেপালের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই অঞ্চল দিয়ে চীন সীমান্ত পর্যন্ত সম্প্রতি পাকা সড়ক তৈরি করেছে ভারত, সামরিক কৌশলগত ভাবে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মানচিত্র বিল পাস করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, ভারতের প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে নেপাল তার নয়া মানচিত্রে নিজেদের বলে দাবি করেছে।খবর-পার্সটুডে
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, আমরা বিষয়টির দিকে নজর রেখেছি। ওই বিষয়ে আমাদের অবস্থান আগেই স্পষ্ট করা হয়েছে। কৃত্রিমভাবে এই এলাকা বৃদ্ধির দাবির ঐতিহাসিক কোনও ভিত্তি নেই। এটা মোটেই সমর্থন করা যায় না। এটি সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দু’দেশের আলোচনা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তেরও পরিপন্থি।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, টিভিতে যুদ্ধের জিগির তোলা আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা প্রদর্শন এক বিষয় নয়। জাতীয় স্বার্থ রক্ষার প্রশ্ন এলেই বিজেপি নেতৃত্ব উটপাখির মতো বালিতে মাথা গুঁজে দায়িত্ব এড়াতে চান।
এ প্রসঙ্গে আজ রোববার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার ঐতিহ্যবাহী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মাতীন বলেন, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ভারতের যে বিদেশ নীতি তা যে ব্যর্থ তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ভারত বিগত ১০/১২ বছরে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারত একটা উন্নয়নশীল ও দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল। দেশটা আন্তর্জাতিক স্তরে পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করার মতো একটা জায়গায় ছিল। সেটা একদম প্রায় ধুলিস্যাতের মুখে। সীমান্ত ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক তলানিতে। প্রতিবেশি রাষ্ট্র নেপাল যার সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্ক ভালো ছিল। তাদের সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ হল। এটা খুব স্পষ্ট যে ভারতের বিদেশনীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যর্থ। দক্ষিণ এশিয়ার যে প্রতিবেশী দেশগুলো আছে তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা ভৌগোলিক কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে চীন, একদিকে নেপাল, ওদিকে বাংলাদেশ। আর পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে সমস্যা আছেই। এভাবে প্রত্যেক প্রতিবেশীর সঙ্গে যদি সম্পর্ক খারাপ হয় তাহলে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য যাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে তাদের জন্য ভালো নয়। সেজন্য এটা একটা বিদেশনীতিতে ব্যর্থতার লক্ষণ।
অধ্যাপক আব্দুল মাতীন আরও বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় মোদি সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত পৃথিবীর সঙ্গে ‘চোখে চোখ রেখে কথা’ বলবে, কিন্তু এটা বোঝা গেল যে এটা তো যুক্তরাষ্ট্র-চীন বিবাদের মতো নয়, সামান্য এক প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সামরিক ক্ষমতার তুলনায় যার শক্তি অনেক কম। সেও যদি ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে তাতে বোঝা যায় ভারতবর্ষ আসলে ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় না রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চচ্ছে, যার ফলে আগামীতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতকে ক্ষতির মুখে নিয়ে যাবে বলেও অধ্যাপক আব্দুল মাতীন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।