পাবনার বেড়ায় ‘চালচোর’ চেয়ারম্যানকে বাঁচাতে লঙ্কাকান্ড ॥ র‌্যাবের মামলা, পুলিশের লোক দেখানো রির্পোট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে ত্রাণের চাল এবং সরকারি সহযোগিতা বিতরণে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন। কিন্তু তাঁর নির্দেশনা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় অসাধু দূর্ণীতিবাজ সরকারি সাহায্য বিতরণে অনিয়ম করে যাচ্ছে। পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়নের ‘চালচোর’ চেয়ারম্যান কোরবান আলী সরদারকে বাঁচাতে লঙ্কাকান্ড চলছে। এ ঘটনায় র‌্যাব-১২ ডিএডি মো. সোহরাব আলী বাদী হয়ে মামলা করলেও পুলিশ ঐ মামলায় ‘চুড়ান্ত রির্পোট’ দাখিল করেছে। এ নিয়ে ঐ এলাকায় চলছে নানা কানাঘুষা। স্থানীয় মানুষজন বলছেন, কে সত্য র‌্যাব ও না পুলিশ ?।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল রাতে রূপপুর ইউনিয়নের বাধেরহাটের ব্যাক্তিগত অফিস থেকে ২২৯ বস্তা সরকারি ভিজিএফ‘র চালসহ পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কোরবান আলী সরদারকে হাতে নাতে আটক করে র‌্যাব -১২ পাবনা ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে এ ঘটনায় আমিনপুর থানায় চাল চুরির অভিযোগে র‌্যাব-১২ ডিএডি মো. সোহরাব আলী বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ঐ মামলার তদন্ত করেন আমিনপুর থানার ওসি এস এম মঈন উদ্দিন।
এদিকে চালচুরির অভিযোগে বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কোরবান আলী সরদার কে কেন্দ্রের নির্দেশে জেলা আওয়ামীলীগ দলীয় সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কোরবান আলী সরদারকে বাঁচানোর চেষ্টা করায় দলীয় সকল পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয় বেড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল বাতেনকে।
চাঞ্চল্যকর এই মামলার লোকদেখানো তদন্ত শেষে মামলা ‘তথ্যগত’ ভুল থাকায় কোরবান আলী সরদারকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে মামলার ফাইনাল রির্পোট প্রদান করা হয়। এত বড় একটি চাঞ্চল্যকর মামলায় ফাইনাল রির্পোট দেওয়ায় এলাকার মানুষজন হতভম্ব হয়ে পড়ে।
এদিকে চলে আরও নাটক। চালচুরির মামলা থেকে বাঁচার পর পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ ফিরোজ কবীর, বেড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের অব্যহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ও বেড়া পৌরসভার মেয়র আব্দুল বাতেন এবং কোরবান আলী সরদার জোটবদ্ধ হয়ে আমিনপুর থানার ওসি এসএম মঈন উদ্দিনের মাধ্যমে আমিনপুর থানার চার ইউপি চেয়ারম্যানের গোপন কলরেকর্ড সংগ্রহ করে তা এমপি ফিরোজ কবির এবং আব্দুল বাতেনের কাছে দেন। কল লিস্ট ফাঁসের অভিযোগ উঠে ওসির বিরুদ্ধে। মামলা কিংবা আদালতের নির্দেশনা ছাড়াই স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পৌর মেয়রের নির্দেশে ওসি এমন কান্ড ঘটিয়েছেন দাবী করে, লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে জেলা পুলিশের তদন্ত কমিটিও। বিষযটি পাবনার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
ঐ দিন র‌্যাব-১২ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, চেয়ারম্যান কোরবান আলী সরদার উদ্ধারকৃত চাল কালোবাজারে বিক্রির চেষ্টা করছিলেন এখবর পেয়ে র‌্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের কমান্ডার আমিনুল কবীর তরফদারে নেতৃত্বে র‌্যাব সেখানে যায়। বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউপি চেয়ারম্যান কোরবান আলী সরদার ভিজিডি ত্রাণের চাল কালো বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে না রেখে গভীর রাতে রূপপুর ইউনিয়নের বাঁধেরহাট বাজারে নিজ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের গুদাম ঘরে মজুদ করছেন। ১৩ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে র‌্যাব হাতে নাতে এই চাল উদ্ধার করে এবং চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাকে আটক করে। রাতে আমিনপুর থানায় মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী ঐ দিন বলেন, ত্রাণের চাল কোনভাবেই ব্যক্তিগত গুদামে রাখার সুযোগ নেই। কোরবান আলী সরদার ইউনিয়নের সীমানার বাইরে বেআইনিভাবে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। সেখানে ত্রাণের চাল মজুদ করার বিষয়েও তিনি প্রশাসনকে অবহিত করেননি।
এদিকে, ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ায় সভাপতি কোরবান আলী সরদার কে আজীবনের জন্য আওয়ামীলীগের সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া চাল চুরিতে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় কেন্দ্রের নির্দেশে বেড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল বাতেনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা আওয়ামীলীগ।