মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অধিক সক্রিয় করতে এবং শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে বহির্বিশ্ব সহ বাংলাদেশেও হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় ছয় হাজার পরিবারের প্রায় ২৪ হাজার সদস্যকে বিনামূল্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সরবরাহ করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দুপুরে ভাঙ্গুড়া পৌর মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল শহরের নয়টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের কাছে এই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ Arsenic Album 30 হস্তান্তর করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পাবনা সদর হাসপাতালের অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক জাকারিয়া খান মানিক ও স্থানীয় হোমিও চিকিৎসক আবুল হোসেন সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ভাঙ্গুড়ায় এ পর্যন্ত ৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
একাধিক সূত্র জানায়, ভাঙ্গুড়া পৌরশহরে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পৌর কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রেখেছে। দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পরই মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের দশটি পয়েন্টে জনসাধারণের হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানির ব্যবস্থা করা হয়। এরপর শহরের প্রবেশের আটটি প্রবেশ পথে জীবানুনাশক ট্যানেল স্থাপন করে পৌর কর্তৃপক্ষ। করোনার আবির্ভাবের শুরু থেকেই নিয়মিতভাবে শহরের বিভিন্ন সড়ক ও মহল্লায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। শহরের মধ্যে জনসমাগম কমাতে হাট বাজার উন্মুক্ত খেলার মাঠে স্থানান্তর করা হয়। পৌর মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল ও কাউন্সিলররা হ্যান্ড মাইকে প্রতিটি ওয়ার্ডের মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে নিজেরাই জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। গত তিন মাস ধরে ঢাকাসহ দেশের অন্য কোনো জেলা থেকে আগত ব্যক্তিদের ভাঙ্গুড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রেখে খাবার-দাবার সহ সার্বিক দেখভাল করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় তিন হাজার পরিবারকে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল। সর্বশেষ করোনা প্রতিরোধে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও কার্যকরী করতে এবং শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে ভারতের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শাখা আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন অনুসারে Arsenic Album 30 হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবনের জন্য ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের ছয়হাজার পরিবারের ২৪ হাজার মানুষকে পৌঁছে দিয়েছে। পাবনা সদর হাসপাতালের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক জাকারিয়া খান মানিক ও স্থানীয় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক আবুল হোসেনের তত্ত্বাবধানে এই ঔষধ সেবন ও বিধি ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডাক্তার জাকারিয়া খান মানিক বলেন, করোনা প্রতিষেধক কোনো ওষুধ এখনো তৈরি হয়নি। তবে বিতরণকৃত ঔষধ মানুষের শরীরে করোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি করে। এটি নিয়ম মতো সেবন করলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও সক্রিয় হয়ে উঠে এবং মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এরইমধ্যে ভাঙ্গুড়ায় করোনা আক্রান্ত একাধিক ব্যক্তির উপর এই ঔষধ প্রয়োগ করা হয়েছে। যা কার্যকর হয়ে তারা সুস্থ হয়েও উঠেছেন। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশেই করোনা প্রতিরোধে এখন হোমিওপ্যাথিক ওষুধের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়ছে। ব্যবহৃত এই হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তাই কারোর শরীরে করোনার যেকোন উপসর্গ দেখা দিলে এলোপ্যাথিক ঔষধ সেবনের সঙ্গে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবন করতে পারেন।
ভাঙ্গুড়া পৌর মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল বলেন, পৌরবাসীকে করোনা মুক্ত রাখতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুসরণ করে সকল ব্যবস্থাই নিয়েছি। পৌরশহরের মধ্যে তিনজন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠা একজন প্রকৌশলী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়েছিলেন। তাই অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে ২৪ হাজার পৌরবাসীকে বিনামূল্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবনের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে করোনার দুর্যোগ মোকাবেলায় ভাঙ্গুড়া পৌরশহরে সরকারের সকল নির্দেশনা শতভাগ পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।